ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের। জাতিসংঘের হিসাবে ওই আন্দোলনের সময় অন্তত ৬৫০ জন নিহত হয়েছে। এই হত্যাকা-ে আওয়ামী লীগ সরকারই দায়ী বলে মনে করেন তাদের শরিক ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। এ জন্য তারা এর দায় নিতে রাজি নন।
১৪ দলীয় জোটের নেতারা বলছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জোটটি গঠন করা হয়েছিল আদর্শের ভিত্তিতে। কিন্তু ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ তাদের মূল্যায়ন করলেও একাদশ নির্বাচনের পর অবহেলা আর অবজ্ঞাই জুটেছিল তাদের ভাগে। শরিকদের জনসমর্থন নেই দাবি করে গত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আশানুরূপ আসন ছাড় দেওয়া হয়নি। তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি নির্বাচনের পরেও। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বানেও আওয়ামী লীগ তাদের কোনো কথাই শোনেনি। তাই তারা দলটির কর্মকা-ের দায় নেবে না।
জোটের শরিক হিসেবে দায় এড়াতে পারেন কি না - এমন প্রশ্নে জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, আমাদের দায় তো নেই। আমরা তো সরকারে ছিলাম না। আমাদের এমপিও ছিল না।
আগের সরকারে তো তাদের এমপি ছিল, তারও আগে মন্ত্রী ছিল - এমন প্রশ্নে শহীদুল ইসলাম বলেন, সেটা ব্যক্তি পর্যায়ে যিনি ছিলেন, তার দায়দায়িত্ব। সেটা দলীয় দায়দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
১৪ দলীয় জোটের আরেক শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য কামরুল আহসান বলেন, আমাদের কোনো দায় নেই। কারণ, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে দূরত্ব ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরে আমরা বলার চেষ্টা করেছিলাম, নির্বাচনী ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ না থাকলে সেই ব্যবস্থা ধ্বংস হলে তার ফল ভোগ করতে হবে। আমরা দুর্নীতি, টাকা পাচারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেছিলাম। ফলে গত নির্বাচনে আমাদের দূরে ঠেলার জন্য যা যা দরকার, সবই করেছে আওয়ামী লীগ। তার পরও গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনে ছিলাম।
জোটে আছে তরীকত ফেডারেশনও। দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর মোবাইল ফোনে কল দিলে তার ছেলে সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভান্ডারী কথা বলেন। তিনি বলেন, বাবার বক্তব্য সহজ। যে আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বারা এতগুলো সাধারণ মানুষের প্রাণ গেছে, সেই আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলের সঙ্গে আমরা নেই।
তবে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, দায় তো অবশ্যই পড়বে। এগুলো নিয়ে আমরা মূল্যায়ন করব। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
৫ আগস্ট সরকারপ্রধানের পদ থেকে পদত্যাগের পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। এর পরই দলটির সকল পর্যায়ের নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। প্রায় সব নেতা মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখেন। আওয়ামী লীগের শরিক দলের নেতারাও অনেকটা নিশ্চুপ হয়ে যান। তবে ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানায় আওয়ামী লীগের শরিক একাধিক দল।
এরই মধ্যে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে বিভিন্ন থানায় মামলা হচ্ছে। এর কয়েকটিতে আসামি করা হয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে। আদালতে অভিযোগ করা হয়েছে তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর বিরুদ্ধেও।
মামলার পরে গ্রেপ্তার-আতঙ্কে শরিক দলের অনেক নেতা আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির কামরুল আহসান বলেন, আমরা সরে আছি। পালাইনি। অতীতেও আমরা এ রকম পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলাম। কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়, সে অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। কোন অবস্থানে থেকে রাজনীতি করতে হয়, সেটা জানি। সেই কৌশলে যেতে হলে যাব। আবার যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতি করার সুযোগ পাই, তাহলে এত দিন যেভাবে করেছি। সেভাবেই করব।