সুনামগঞ্জ , সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
উপযুক্ত পরিবেশ হলেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান : সালাহউদ্দিন সেনাবাহিনীকে সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার বিনামূল্যে ৮৮০৫ দুঃস্থ নারী পাচ্ছেন পুষ্টি সমৃদ্ধ চাল ৬৬৫ লিটার মদসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার শান্তিগঞ্জ ও দিরাইয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ জামালগঞ্জে ছিদ্দিক আহমদ মাহমুদপুরী রহ.-এর জীবনী ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা খেলাঘরের উদ্যোগে তিন গুণীজনকে স্মরণ মঙ্গলবার রাতে লন্ডন যাত্রা করবেন খালেদা জিয়া জেলা শহরের কাছাকাছি সুবিপ্রবি ক্যাম্পাসের দাবি নির্বাচনের আগেই সব সংস্কার প্রয়োজন নেই : জোনায়েদ সাকি আমরা চাঁদাবাজ-দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই : জামায়াত আমির আমরা চক্রান্তের কাছে মাথানত করবো না : মির্জা ফখরুল পানি উঠছে না লক্ষাধিক নলকূপে ভেস্তে গেছে অর্ধকোটি টাকার প্রকল্প জমিয়ত নেতা মুখলিছুর রহমানকে সংবর্ধনা লোকনাথ সরলা কুলসুম বিবি বৃত্তি পরীক্ষার পুরস্কার বিতরণী মোল্লাপাড়ায় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির শীতবস্ত্র বিতরণ ভারতে পাচারকালে ৬২ বস্তা রসুনসহ আটক ৩ শাল্লায় উদীচীর সম্মেলন অনুষ্ঠিত সীমান্তে তৎপর বিজিবি : এক বছরে ৪২ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য জব্দ সুপ্তপ্রতিভা খেলাঘর আসরের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

সংস্কারের প্রাসঙ্গিকতা

  • আপলোড সময় : ০১-০১-২০২৫ ০১:১২:৪৬ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০১-০১-২০২৫ ০১:১২:৪৬ পূর্বাহ্ন
সংস্কারের প্রাসঙ্গিকতা
মোঃ আমিনুল ইসলাম সংস্কার শব্দটির বিভিন্ন অর্থ রয়েছে যেমন- মেরামত, পুনঃস্থাপন, এড়িয়ে চলা, বিশ্বস্ত হওয়া। সাধারণত কোনো স্থাপনা কিংবা কোন জিনিস স্বাভাবিকতা হারালে নতুন রূপে নিয়ে আসতে সংস্কারের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে এর প্রয়োগ আছে। কোন বিষয়কে নতুন রূপে উপস্থাপন করাও সংস্কার হিসেবে বুঝানো হয়। রাষ্ট্র পরিচালনায় যে সকল লিখিত নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয় তার সংযোজন, বিয়োজন, পরিমার্জন করাও সংস্কার বা মেরামত। রাষ্ট্র পরিচালনায় সংস্কার একটি চলামান প্রক্রিয়া। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায়, মানব সভ্যতার বিকাশে, সমসাময়িক দার্শনিকদের চিন্তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটানো হয় সংস্কারের মাধ্যমে। বাংলাদেশ এক নতুন পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে অতিক্রম করছে। বর্তমানে যে সরকার চলমান রয়েছে তা মূলত সেনা সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার। গণঅভ্যুত্থানের পর কোন সরকার আসলে তখন সংবিধান মেনে সরকার চালানো সম্ভব হয় না, তারই প্রতিফলন বর্তমান সরকার। এই সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে ৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ২৪ এর বিপ্লবের চাওয়াকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়া। জুলাই-আগস্ট ২৪ এর আন্দোলন এর প্রেক্ষিত বিবেচনায় রেখে - জাতীয় জীবনে বৈষম্য নিরসনে কাজ করা, ভোটাধিকার নিশ্চিত করা ও রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করা মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। আর এই বৈষম্য নিরসন ও ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণে যে যে জায়গায় সংস্কার প্রয়োজন তা নিরপেক্ষভাবে করতে হবে। সেই লক্ষ্যে সরকার কিছু কমিশন গঠন করেছে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে আগামীতে আমরা এগিয়ে যাব। সংবিধান সংশোধনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত কমিশনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সংবিধান মূলত রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালা অর্থাৎ শাসনতন্ত্র কিভাবে পরিচালিত হবে তার দিকনির্দেশনা তাত্ত্বিক উপায়ে লিপিবদ্ধ থাকে। ইচ্ছা করলেই সংবিধান সংশোধন করা যায় না, তবে রাজনৈতিক দলসমূহ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমর্থন দিলে কার্যকর করা শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। কিন্তু এর সফলতা নির্ভর করে- যারা প্রয়োগে থাকবে তাদের দক্ষতা, বিচক্ষণতা, আন্তরিকতা ও সততার উপর। যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না উঠলে কাগজে যত ভাল কিছুই লিখা থাক না কেন তার ফলাফল লক্ষ্য অনুযায়ী অর্জিত হবে না। তবে জনবান্ধব সংবিধান থাকলে দায়িত্বপ্রাপ্তরা কাজ করতে সহজ হয় এবং জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। সুন্দর, মননশীল, মানবিক সমাজ ব্যবস্থায় যোগ্য নেতৃত্ব ও সংবিধান উভয়ের অপরিমেয় গুরুত্ব রয়েছে। আমার কাছে যে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ তা হল রাজনৈতিক দলসমূহ গণতান্ত্রিক উপায়ে স্বচ্ছতার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা। বৃহৎ ও ক্ষমতা কেন্দ্রিক দলসমূহ গণতান্ত্রিক উপায়ে দল পরিচালনা করছে না বলে এতে যোগ্য নেতৃত্ব বের হয়ে আসছে না। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, তেলবাজি, পেশীশক্তি, কালো টাকাধারীদের দৌরাত্ম্যে দলসমূহ ক্ষত-বিক্ষত। ওরা এমনভাবে দলে জেঁকে বসেছে দলসমূহ ওদের বিরুদ্ধে যেতে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে। আরো একটি বিশেষ কারণ হল বিভিন্ন দাবি আদায়ে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে এদের প্রয়োজন হয়। অবৈধ টাকার বিত্তশালীরা এদের সাহায্য নিয়ে যখন জনপ্রতিনিধি হিসেবে কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় তখন কাগজের নীতিমালা বা ম্যানুয়েল আর রক্ষিত হয় না। এরা ক্ষমতা পেলে নীতি-নৈতিকতা আর মুখ্য বিষয় থাকে না। সুস্থ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি পরিচালনার জন্য গণতান্ত্রিক আবহে দলসমূহকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। দলে যাতে নেতৃত্ব গড়ে উঠে ও মেধাবীরা সম্মানের সাথে অবস্থান নিতে পারে সে বিষয়ে মনযোগী হওয়া প্রয়োজন। দলের অফিসসমূহকে আধুনিকায়ন করে রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার বই দিয়ে সাজাতে হবে। পড়ালেখার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। পঠন-পাঠন ও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে নেতৃত্বকে জাগিয়ে তুলে ঢেলে সাজাতে হবে। গণতান্ত্রিক দলসমূহে শুধু মাত্র একক আদর্শকে সামনে না রেখে সময়োপযোগী চিন্তা-চেতনায় নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখতে হবে। নেতৃত্ব নির্বাচনে যোগ্যদেরকে সামনে থাকার সুযোগ দিতে হবে। বর্তমান সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থায় সংস্কারে আমার কিছু মতামত তুলে ধরলাম- * রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন- স্বাধীন মতামত প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রিক হবে। প্রতিরক্ষা সদস্যদের প্রমোশনের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা কমিশনের সুপারিশের আলোকে হবে। রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হলে দুই- তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের ভোটে অপসারণ করা যাবে। তবে যে অভিযোগে ক্ষমতা থেকে সরানো হবে তা আদালত কর্তৃক মতামত নিতে হবে। * ৪০০ আসন বিশিষ্ট সংসদ হতে পারে। ৩৫০জন সদস্য প্রত্যেকেই জনগণের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত হয়ে আসবে। তবে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী দল নূন্যতম ৫% হারে মহিলা সদস্যকে নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে হব। বাকি ৫০জন উচ্চ কক্ষ সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবে। নির্বাচিত সদস্যগণ ১০% হারে ৩৫ জন সংসদ সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। যারা বিভিন্ন দলের অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তি এবং দলের সাথে ন্যূনতম পাঁচ বছর স¤পৃক্ততা আছে তাদেরকেই সংসদ সদস্য হিসেবে নিতে পারবে। তবে নতুন দলের ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য হবে। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে এরূপ সৎ, সর্বজন শ্রদ্ধেয় গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে আরো ১৫ জন সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি মনোনীত করবেন। তবে এক্ষেত্রে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলের প্রধানেরা ২০ জনের নামের সুপারিশ করবে। তাদের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি ১৫ জনকে মনোনীত করবেন। উল্লেখিত ৫০জন সংসদ সদস্য বাকি সংসদ সদস্য ও আমলাদের কাজের তদারকি করবেন। প্রশাসনের ও প্রকল্পের দুর্নীতি অনুসন্ধান করে রিপোর্ট করার বিশেষ ক্ষমতা দেয়া যেতে পারে। দুদকের কার্যক্রম তদারকি করতে পারবেন। আইন প্রনয়নের ক্ষেত্রে তাদের সুপারিশ রাষ্ট্রপতির নিকট পাঠানো ও মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত অনুমোদন হবে। যে কোন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে তাঁদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে গঠিত হবে। উল্লেখিত ৫০জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত সদস্যদের মত সকল সুযোগ সুবিধা প্রাপ্ত হবে। * নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতা ও ব্যয় কমনোর জন্য নি¤œরূপ পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে -- * নির্বাচনকালীন সরকার হবে নির্দলীয় ১৫ জন বিশেষ সংসদ সদস্যকে নিয়ে। প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ৫ জন মনোনয়ন দিতে পারবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তাও এই পনেরো জনের সুপারিশের ভিত্তিতে। ১৫ জনের মধ্য থেকেই একজনকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিতে হবে। তখন সাংবিধানিক সংকট হওয়ার আর প্রশ্ন আসবে না। কাগজের পোস্টার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তবে লিফলেট ব্যবহার করতে পারবে। প্রতি ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ৫টি ডিজিটাল ব্যানার ব্যবহার করবে। তবে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দল কর্তৃক প্রেরণ করার বিধান রাখা প্রয়োজন। প্রতি ইউনিয়নে একটি অফিস খোলা যাবে। * জনপ্রতিধি হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা এইচএসসি নির্ধারণ করা। * স্থানীয় সরকার উপজেলা, ইউনিয়ন, সদস্য পদ নির্দলীয় হওয়া বাঞ্চনীয়। * মাইকিং করা বন্ধ করতে হবে। শুধুমাত্র সভা-সমাবেশে মাইক ব্যবহার করা যাবে। রাস্তায় বা বাজারে কোন সমাবেশ করা যাবে না। নীতি আদর্শ পরিবর্তন, পরিমার্জন যতই করি না কেন আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে সংস্কারে কাজে আসবে না। আন্দোলন-সংগ্রামের ভিতর দিয়ে বিশাল ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মূল্য আমরা কি দিতে পারছি? দিলে কি কখনো জাতীয় জীবনে ৯০, ২৪ আসতো? আমরা স্বার্থপরের মত নিজেকে নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকছি। রাজনীতিতে জ্ঞানী-গুণী ও সৎ মানুষের অবস্থান না থাকলে সংস্কার করে তেমন লাভ হবে না। [লেখক- শিক্ষক ও কলামিস্ট]

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
উপযুক্ত পরিবেশ হলেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান : সালাহউদ্দিন

উপযুক্ত পরিবেশ হলেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান : সালাহউদ্দিন