ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
শিক্ষক রথীন্দ্র কুমার দাস স্মরণে শোকসভা টিলা কেটে সরকারি জায়গায় ইউপি চেয়ারম্যানের বহুতল মার্কেট ছয় থানার ওসি বদলি কমিশনকে নজরে রাখবে রাজনৈতিক দলগুলো সালমান-আনিসুল হক ফের রিমান্ডে দেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১০৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগে সহায়তা দেবে জার্মানি হাওরকে বাঁচতে দিন আগস্টে সড়কে ঝরেছে ৪৭৬ প্রাণ কৃষি গুচ্ছের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ২৫ অক্টোবর “অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে হবে, তবে তা সীমাহীন নয়” ইজারাকৃত সব জলমহালের সীমানা নির্ধারণের দাবিতে বিক্ষোভ পদ হারিয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরছেন আ.লীগ নেতারা সাবেক ৩ সিইসি’র বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা নিহতদের পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা হাওর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে: মহাপরিচালক হাওর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে: মহাপরিচালক অন্তর্বর্তী সরকারকে যেকোনও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত ইউনেস্কো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি প্রধান বিচারপতির ১২ নির্দেশনা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর বিবেচনার অনুরোধ

মৃদুলকান্তি চক্রবর্তী ও তাঁর সুরমা : ড. সাইম রানা

  • আপলোড সময় : ১৫-০৮-২০২৪ ০১:৪৯:৪৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৫-০৮-২০২৪ ০১:৪৯:৪৪ অপরাহ্ন
মৃদুলকান্তি চক্রবর্তী ও তাঁর সুরমা : ড. সাইম রানা
‘দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা, তারে ধরি ধরি মনে করি ধরতে গেলেম আর পেলাম না।’
একদা রূপের সওদাগর মনের হাটে রূপ বিক্রি করতে এলেন, কিন্তু রূপ তো মূল্যহীন। রূপ তো রুপা নয় যে তাকে পয়সা দিয়ে কেনা যাবে! রুপা রূপকেও হয়তোবা আরো অপরূপ করে তোলে, কিন্তু রূপ ছাড়া যে রুপা অচল। ব্যবসাদার কি এসবের মানে বোঝে? বুঝেও লাভ কি! রুপা দিয়ে পয়সা কামাই হয় - তাই তার কাছে রুপাই মহান। এদেশের সংগীত জগতের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। অপরূপ সুধার সুর যদি হাটে বিক্রি না হয়, তবে তা অমূল্য। অবশ্য এই ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীর বাজারে সবাইতো আর হাট জমাতে আসে না। জহুরিও কিছু থাকে যে চেনে জহর। অপরূপ-অমূল্য স¤পদকে তুলে নেন। তেমনি একজন সওদাগর যিনি অমূল্য গানের সম্পদকে তুলে নিয়েছিলেন কণ্ঠে, শিক্ষায়-সংরক্ষণে। তিনি বিলিয়েছেন রূপের মাহাত্ম্য। আমরা তার অনেক কিছুই ধরি ধরি করে ধরিনি দ্বিধা-সংশয় এবং হেলায় একদিন থাকে না। কোন অতলে ডুব দিলেন রূপের দিশারী। রূপসাগরের যথার্থ খরিদ্দার হতে পারিনি - যিনি বারবার সেই রূপ ধারণের কথা বলতেন। রূপসাগরের গানটি গাইতেন সংগীত জগতের রূপ- সওদাগর অধ্যাপক ড. মৃদুলকান্তি চক্রবর্তী।
আমাদের মৃদুল স্যার রূপের সন্ধান দেবার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। একইভাবে প্রতিষ্ঠা করেনStudents United for Research in Musical Activities (SURMA)
। এই সংগঠনটির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল এদেশের হাটে-মাঠে-ঘাটে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অমূল্য স¤পদ-তা সংগ্রহ করা, সংরক্ষণ করা এবং যথাযথ মর্যাদায় তা পরিবেশন করা। তিনি তা করেছেন। রাধারমণ-লালন-হাসন-শচীন-করিম-সাবিরসহ অসংখ্য চারণ কবি, লোককবিদের সংগীতকে তিনি পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন আদি ও যথা সুরে। মাটির সুর-প্রাণের সাথে সাথে আরবান সোসাইটির রিমেক করা ব্যবসা সফল গানের ভিন্নতা কোথায়, তাও ধরিয়ে দিয়েছেন। তাই সংস্কৃতির চর্চার বিদগ্ধজনের উঠতো কাছে সুরমা’র প্রতিটি পদক্ষেপ আকর্ষণীয় হয়ে এদেশের সংগীতের প্রাচুর্য স¤পর্কে সবাই কম-বেশি অবগত। কিন্তু সংগীতের ধারাবাহিক ইতিহাস, যথার্থ সংরক্ষণাগার, লিখিত রূপে লোক-স¤পদকে ধারণ, বহির্বিশ্বে দেশজ স¤পদের ঐতিহ্য তুলে ধরার মতো প্রত্যয়ী সংগঠন এদেশে বিরল। সুরমা সেই দায় কাঁধে নিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল।
সংগীত গবেষণা এবং শিক্ষার উন্নতি না হলে সংস্কৃতির অন্যান্য শাখার কাতারে পিছিয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। সে কারণেই মৃদুলকান্তি চক্রবর্তী সংরক্ষণমূলক গবেষণায় মনোযোগ দেন। সংগীতের হাজার বছরের ঐতিহ্যের যুগ বিভাজন করে গেলেও শেষদিকে তিনি সংগীত স্বরলিপির কাজে হাত দেন। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল- সংগীত বক্তৃতা দেয়ার অনেক লোক আছে- তারা মুক্তির কথা বলে। কিন্তু যে গান হারিয়ে যাচ্ছে, বিকৃত হয়ে যাচ্ছে, তাকে সংরক্ষণ না করলে কীভাবে মুক্তি মিলবে? তাই তিনি সুরমা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং একক সিদ্ধান্তেই বলা যায় এটি পরিচালনা করতেন। আমি বলতাম, স্যার সংগঠন মানে সকলের মতামত নিয়ে চলাই কি ভালো নয়? তিনি বলতেন ‘নানা মুনির নানা মত।’ আমাদের উদ্দেশ্য সংগঠন করা নয়, উদ্দেশ্য চেতনাকে বাস্তবায়ন করা। সংগঠন ছাড়া উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা যাবেনা বলে সুরমা করা হয়েছে। আমরা হয়তো কেউ কেউ এই কথায় কিছুটা বিমর্ষও হয়েছি। কিন্তু এখন বুঝি এদেশে শত শত সংগঠন রয়েছে। তাদের রয়েছে কত তৎপরতা। কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক কিছু কি হতে পেরেছে?
‘সুরমা’ অসংখ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রধানত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার পাশাপাশি মননের পথকে উন্মুক্ত করেছে। সংগীতের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগীত থেকে ঝরে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে বরং একটি মঞ্চ করে দিয়েছে। যথাকথা-যথাসুর ও যথাতথ্য-এর প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়ার সমাজে প্রতিষ্ঠিত অনেক বিকৃত সংগীতের থেকে সুস্থধারার শ্রোতার মুক্তি মিলেছে। দেশজ সংগীতের বিকাশ আবার আধুনিক ধারার নান্দনিক আমন্ত্রণ, অন্যদিকে প্রবাসী শিল্পীদের দেশে বিকাশসহ নানামাত্রার পদক্ষেপ সুরমা করেছে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও।
আমার বন্ধু রাখাল রাহা বলছিলেন- রানা যেখানে তুমি ভাবো তো ১০০ বছর পর তোমাকে এদেশে কে স্মরণ করছে ঈশ্বরচন্দ্রেরই কোনো ঠায় নাই। সুরমা এই কাজটিও সামর্থ্য অনুযায়ী করেছে। পঞ্চকবি, মরমী কবি সাবির, সত্যজিৎ রায়, নেতাজী সুভাষচন্দ্র, মহাত্মাগান্ধী, শচীনদেব বর্মণ, হাসন রাজা, আবদুল করিম, রাধারমণের জন্মবার্ষিকী বৃহৎ পরিসরে পালন করেছে। সুরমা’র বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সেমিনারপত্র ও গবেষণামূলক অনেক প্রবন্ধ বেরিয়ে এসেছে তার সংকলনও সুরমা করেছে।
পরিশেষে যে কথাটি বলতে চাই, গবেষণাভিত্তিক সাংগীতিক কার্যক্রমে সংগঠনটি কতটা সফল, সেই প্রশ্ন সামনে না এনে, বরং উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করার জন্য এরকম ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করা এদেশে অন্যের পক্ষে খুব কমই সম্ভব হয়েছে। সুরমা’র ব্যতিক্রম হলো একদিকে সংরক্ষণ অন্যদিকে তার প্রচার ও প্রসার। এই ব্যতিক্রম জগৎ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আমাদের মৃদুল স্যার। এই সংগঠনকে ঘিরে তাঁর আরো কিছু নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। যেমন লোকজ বা আদিবাসী এ মত দ্বিধা-বিভক্তির পথে না গিয়ে বরং ‘দেশজ’ সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠাই তাঁর লক্ষ্য ছিল।
সুরমা বৃহৎ পরিসরে প্রায় ২২টি অনুষ্ঠান করেছিল। কিন্তু গত ১১টি বছর ধরে চলেছে মাঝিবিহীন তরীর উজান যাত্রায়। তাই বড় ভয় হয় ঝড় কে সামলাবে? তবু আশা রাখি রূপসাগরের দয়াল বন্ধু - এই সভা তিনিই করবেন পার - কারণ তাঁরই স্মরণ ও শ্রদ্ধা জপ হবে। আজ অধ্যাপক ড. মৃদুলকান্তি চক্রবর্তীর ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর প্রতি আমাদের বিন¤্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। মৃদুলকান্তি চক্রবর্তী বেঁচে থাকুন আমাদের মনে ও মননে, অনন্ত কাল।
লেখক: শিক্ষক, সংগীত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; গবেষণা ও প্রকাশনা স¤পাদক, সুরমা।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য