ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে শুরুতেই গলদ
পিআইসি গঠন হয়নি ২৬০টি প্রকল্পে, কাজ শুরু হয়নি ৯৮ শতাংশ বাঁধে
- আপলোড সময় : ২৫-১২-২০২৪ ০১:৩১:৫৫ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৫-১২-২০২৪ ০১:৩১:৫৫ পূর্বাহ্ন

শহীদনূর আহমেদ ::
বোরো ফসলের সুরক্ষায় সরকার প্রতিবছর সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ দিলেও সময় মতো পিআইসি গঠন ও কাজ শুরু হওয়া নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়েনা। এবারও বাঁধ নির্মাণকাজের শুরুতেই গলদ পরিলক্ষিত হচ্ছে। পিআইসি গঠনে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। নির্ধারিত সময়ের ১০ দিন পার হয়ে গেলেও গঠন হয়নি ২৬০টি প্রকল্পের পিআইসি। গেল ১৫ ডিসেম্বর নিয়ম রক্ষায় বাঁধের কাজ উদ্বোধন করা হলেও এখনো শতকরা ৯৮ভাগ বাঁধে কাজ শুরু হয়নি। সময়মতো কাজ শুরু না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে এবারও কাজ শেষ হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষককুল। তবে হাওর থেকে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় কাজ শুরু হতে বিলম্ব হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা জানিয়েছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার পর্যন্ত অনুমোদিত ৬৭৫ প্রকল্পের মধ্যে ৫১৫টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে। ১২ উপজেলায় ৬৮টি বাঁধে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার। তবে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার বেশিরভাগ হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধে কাজ শুরু হয়নি। যেসব হাওরে কাজ শুরু হয়েছে সেখানেও নামমাত্র কাজ চলছে বলে অভিযোগ পাওয়াগেছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের কাংলার হাওরের ১নং পিআইসিতে ১৫ ডিসেম্বর মাটির কাজের উদ্বোধন করা হলেও নির্ধারিত সময়ের ১০ দিন সময় পার হলেও এখনো কাজ শুরু করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট পিআইসি।
তাহিরপুর উপজেলার বালিজুড়ি আঙ্গারউলি হাওরের ১নং প্রকল্পে কাজ শুরু করা হলেও বাকি কোনো হাওরেই কোনো প্রকল্পের কাজ শুরু করতে দেখা যায়নি। এছাড়াও এই উপজেলায় এই একটি পিআইসি ব্যতীত কোনো পিআইসি গঠন করা হয়নি বলে জানিয়েছে বিশ^স্ত সূত্র। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম জানিয়েছেন হাওর থেকে পানি না নামার কারণে পিআইসি গঠন ও কাজ শুরু করা যায়নি। অনুমোদিত ৭৬ পিআইসি’র মধ্যে মাত্র চার পাঁচটি পিআইসি অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে উপজেলার সকল পিআইসি গঠন করার কথা জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে শাল্লা উপজেলায় পিআইসি গঠন প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ পাওয়াগেছে। ২৪ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী বরাবরে পৃথক অভিযোগ করেন জজ মিয়া ও স্বরূপ চন্দ্র দাস নামের দুই কৃষক। অভিযোগে বলা হয়, অনুমোদিত ২৫, ২৬, ৭৮নং পিআইসিতে নীতিমালা লঙ্ঘন করে অকৃষককে পিআইসিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। হাওরে জমি নেই এমন ভূমিহীন লোকদের মাধ্যমে পিআইসি গঠন করার অভিযোগ তুলেন এই দুই কৃষক। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম তারেক সুলতানের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
অপরদিকে, ছাতক উপজেলায় পিআইসি গঠনে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়াগেছে। ২২ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন জানান উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, নীতিমালা লঙ্ঘন করে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী নেতাদের দ্বারা পিআইসি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, নির্ধারিত সময়ের ১০ দিন পার হলেও কাজ শুরু না হওয়ায় প্রতিবাদ জানিয়ে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, এখনো প্রায় ৩০০ পিআইসি গঠন হয়নি। আমাদের যে সংগঠনের লোকরা খোঁজ নিয়ে জানিয়েছেন এখনো ৯৮ ভাগ পিআইসিতে কাজ শুরু হয়নি। যেগুলোতে কাজ শুরু হয়েছে সেটিতেও নাম মাত্র কাজ হচ্ছে। এই অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এতে আমরা ফসলের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত।
তবে বেঁধে দেয়া সময়ে কাজ শেষ করার কথা জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬৮টি বাঁধে কাজ শুরু করা হয়েছে। পানি নামার সাথে সাথে বাকিগুলোতে কাজ শুরু হবে। আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ