হাওরকে হাওরের মতো থাকতে দাও
- আপলোড সময় : ২০-১২-২০২৪ ০১:২০:৩৯ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২০-১২-২০২৪ ০১:২০:৩৯ পূর্বাহ্ন
বিচ্ছিন্ন ‘রাজনীতিক সমাজ’। এই রাজনীতিক সমাজ দেশ-রাষ্ট্র ও সমাজ নিয়ন্ত্রণ করে, নিয়ন্ত্রণের নামে জনসমাজের রক্তশোষণ করে, সমগ্র সমাজকে কাঠামোগত সহিংসতার কড়াল গ্রাসে নিপতিত করে চিড়ে চেপ্টা করে রেখেছে। যার প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আবির্ভাব ও ফলস্বরূপ অনির্বাচিত সরকারের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্রান্তিকাল অতিক্রম করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে এবং সেটা এগিয়ে চলেছে একটি সম্ভাব্য লড়াইয়ের দিকে। এদেরই এক অংশ হাওর বিশেষজ্ঞ হয়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ, হাওরে স্লুইস গেট নির্মাণ, হাওরের বুক চিরে সড়ক নির্মাণ, হাওররক্ষা বাঁধ প্রকল্প প্রণয়ন ইত্যাদি সমেত এক বিশাল কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত হয়ে আসলে হাওরবিধ্বংসী প্রকল্প বাস্তবায়নে মনোনিবেশ করে। তাঁরা বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির নামে, উন্নয়নের নামে, হাওররক্ষার নামে প্রকৃতপ্রস্তাবে হাওরকে ক্রমাগত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছেন, তারপর এখন বলছেন, পানি না নামার কারণে বাঁধ নির্মাণে বিলম্ব হচ্ছে এবং বাঁধে মাটি দেওয়ার জন্যে মাটি পাচ্ছেন না। যেখানে সেখানে অপ্রয়োজনীয় ও হাওরবিনাশী বাঁধ নির্মাণের কারণে যে এইসব সংকটের সৃষ্টি হয়েছে সেটা কখনওই তাদের চোখে পড়ে না, বরাদ্দ মেরে খাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে কেবল এই সংকট সৃষ্টির ব্যাপারে তারা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে যান। তারা এটা ভাবতে পারেন নি যে, ক্রমাগত মাটি কেটে নিলে একসময় বাঁধে মাটি ফেলার প্রয়োজনে মাটি কেটে আনার মতো উপযুক্ত স্থান হাওরের কোথাও থকবে না।
বিজ্ঞান কিন্তু এমন মানুষদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক বলে না। বিজ্ঞান না জেনে বৈজ্ঞানিক হয়ে কোনও ক্ষেত্রে কাজে নেমে পড়লে যা হয়, হাওর রক্ষার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। যারা হাওরকে নিয়ে কাজ করেন, তারা হাওরকে রক্ষার প্রকল্প প্রণয়ন করে আসলে হাওরকে মেরে ফেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। হাওরের বর্তমান বাস্তব পরিস্তিতি বিবেচনায় তাই মনে হতে পারে যে-কারও কাছে। ‘হাওর বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ও বিশেষজ্ঞ’ হয়ে পড়া এইসব ‘বিজ্ঞ’দের থেকে হাওরের পরিত্রাণ চাই।
এই পরিপ্রেক্ষিতে অভিজ্ঞমহলের কেউ কেউ দাবি করছেন, হাওরকে হাওরের মতো থাকতে দাও। হাওরের আগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। যখন পাউবো পরিকল্পিত বাঁধ ছিল না তখন তো হাওরের পানি ঠিকই সময় মতো নেমেছে এবং কুষকের কৃষিকাজে কোন বিঘœ তৈরি হয়নি।
এমন দাবির পরও কথা থাকে। বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে প্রকৃতির উন্নয়নে বা মানবকল্যাণে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিন্তু সে-নিয়ন্ত্রণ প্রকৃতিকে ধ্বংস করে নয়, বরং প্রকৃতির নিয়মকেই কাজে লাগিয়ে প্রকৃতিকে আরও বিকশিত করেই করতে হয়।
পৃথিবীতে কোনও কোনও দেশে এমন হয়েছে, আপাতত উদাহরণ টানছি না। তাই আমরা দাবি করছি, হাওররের প্রকৃতিকে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে মানবকল্যাণের অভিমুখী করুন, হাওরের প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দেবেন না, যেমন এখন দেওয়া হচ্ছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ