সাধু সাবধান, সময় সমাগত
- আপলোড সময় : ১৯-১২-২০২৪ ০৮:১০:৫২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৯-১২-২০২৪ ০৮:১০:৫২ পূর্বাহ্ন
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের মেরামতের কাজ থেকে আত্মসাৎ, পুরনো ভবন নিলাম ছাড়াই বিক্রি, ঘুষের বিনিময়ে বদলিসহ অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে শাল্লা উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে। তাঁর সঙ্গে জড়িত আছেন তাঁরই আজ্ঞাবহ কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে গঠিত একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সিন্ডিকেট। তাছাড়া উপর মহলের কারও পক্ষ থেকে তিনি আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে থাকেন এবং এমনকি তিনি প্রতিবাদী অভিযোগকারীদেরকে হত্যার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই শিক্ষাকর্মকর্তা এতোটাই বেপরোয়া যে, তিনি প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে প্রতিবাদীদেরকে হত্যার জন্যে দুই যুবককে নিয়োজিত করেন এবং সে-তথ্য ফেসবুকে ভাইরাল পড়ে বলে জানা গেছে।
সংবাদ প্রতিবেদেনে বলা হয়েছে, “সরেজমিনে তালিকাভুক্ত একাধিক বিদ্যালয় পরিদর্শন ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সালামের কার্যালয় সরকারি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে লিখিতভাবে গত অক্টোবর মাসে তথ্য চাইতে যান শাল্লা উপজেলার দৈনিক ভোরের কাগজের প্রতিনিধি জয়ন্ত সেন, দৈনিক ইনকিলাবের উপজেলা প্রতিনিধি আমির হোসেন ও সাংবাদিক পাভেল আহমদ। আব্দুস সালাম তথ্য না দিয়ে তাদের হুমকি ধমকি দিয়ে অপমানিত করে বিদায় করেন। পরে সাংবাদিকদের মারার জন্য ‘তারেক হাসান ও রাব্বুল হোসাইন’ নামের দুই যুবককে দায়িত্ব দেন। ওই দুই যুবক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন আব্দুস সালাম।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের অপকর্মের কথা ছড়িয়ে দেবার ঘটনাটি একটু গোলমেলে ঠেকে, কিন্তু তার চেয়েও বেশি গোলমেলে শিক্ষা কর্মকর্তার দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপ ও তার বেপরোয়া আচরণ, অপরদিকে যাবতীয় দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপের বিপরীতে প্রশাসনের নির্লিপ্ততা। যখন কোনও দেশে রাষ্ট্র পরিচালনায় এবংবিধ প্রশাসনিক নির্লিপ্ততা বিদ্যমান ও কার্যকর থাকে তখন প্রতিপন্ন হয় যে, দেশটির প্রশাসনে মাফিয়াচক্রের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ন্যায় ও নৈতিকতা রক্ষায় বেপরোয়া আচরণ প্রশংসার দাবিদার হতেই পারে এবং সমর্থন করাও যায় কিন্তু অন্যায় ও অনৈতিক আচরণের নিন্দা ও প্রতিবাদ করা অবশ্যই দরকার, যা সাংবাদিকরা করেছেন। তার চেয়েও বেশি দরকার প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবংবিধ ঘুষ, দুর্নীতি, বদলি বাণিজ্য, বরাদ্দ আত্মসাৎকরণ সংক্রান্ত যাবতীয় অবৈধ-অনৈতিক অপকর্মের বিচারসাপেক্ষে দ-দান এবং রেহাই দেওয়ার মতো কিংবা পার পাইয়ে দেওয়ার মতো কোনও ধরণের প্রশাসনিক ব্যবস্থা থেকে বিরত থাকা।
বাংলাদেশ বর্তমানে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বাংলাদেশের ভূরাজনীতিক বিশেষ অবস্থানের কারণে এমনকি অদূর ভবিষ্যতে যে-কোনও সময়ে দেশ যুদ্ধগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। তখন রক্তপাত ও অপরিসীম সম্পদক্ষয়ের দুর্দশায় পতিত হবে দেশ। এই সংকটাপন্ন অবস্থায় উপনীত হওয়ার অনেক কারণ অবশ্য আছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেহাই দেওয়ার মতো কিংবা পার পাইয়ে দেওয়ার মতো কাঠামোগত নীতি অবলম্বন।
তাই বলি, শাল্লায় কিংবা অন্যত্র কোনও অজুহাতে এইসব দুর্নীতিবাজরা রক্ষা পেয়ে গেলে সেটা দেশের বর্তমান সংকটাপন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে হবে অন্তর্ঘাতমূলক আচরণ, নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারা। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করছি এইসব দুর্নীতিবাজদেরকে যে-কোনও মূল্যে প্রতিহত করুন, শাস্তির সম্মুখিন করুন, অন্যথায় অচিরেই দেশের ভেতরে প্রশাসনিকের আসনে বসে দেশ পরিচালনার অবস্থানটুকুও এইসব দুর্নীতিবাজরা দখল করে নেবে। এমন কি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাকে সকাল-বিকাল নির্দেশ দেবে তারা, সরকারের চাকর থেকে মাফিয়াচক্রের চাকরে পরিণত হতে হবে দেশের সর্বত্র প্রশাসনের প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারিকে। সুতরাং সাধু সাবধান। সময় সমাগত।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ