এই অস্বাস্থ্যকর সমাজটার শান্তি, সুখ, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার অনুকূলে বদল চাই
- আপলোড সময় : ১১-১২-২০২৪ ১০:০৭:০২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১১-১২-২০২৪ ১০:০৭:০২ পূর্বাহ্ন
গতকাল (মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪) দৈনিক প্রথম আলোর একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, ‘বিশে^র আজ সবচেয়ে দূষিত নগর ঢাকা, সুরক্ষায় সুরক্ষায় যা করবেন’। সংবাদ বিবরণীর শুরুতেই বলা হয়েছে, “আজ মঙ্গলবার সকালে বায়ুদূষণে বিশ্বের ১২৬ নগরীর মধ্যে শীর্ষে ঢাকা। আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকার বায়ুর মান ছিল ২৪১। বায়ুর এই মানকে খুব অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।”
অন্যত্র বলা হয়েছে “গতকাল সোমবার ও গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বায়ু ছিল দুর্যোগপূর্ণ। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘টানা পাঁচ ঘণ্টা ধরে ঢাকার বায়ুর মান ৩০০-এর বেশি আছে। কোনো এলাকায় টানা ৩ দিন ৩ ঘণ্টা ধরে একটানা বায়ুর মান ৩০০-এর বেশি থাকলে সেই এলাকায় স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করা উচিত। ঢাকায় এখন যে অবস্থা, তাতে অবশ্যই জনসাধারণকে অন্তত জরুরি বার্তা দেওয়া উচিত দূষণ পরিস্থিতি সম্পর্কে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় কিংবা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিন্দুমাত্র কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।’ ঢাকার বায়ুর আজ যে মান, তা যেকোনো মানুষের জন্যই ক্ষতিকর।”
প্রতিবেদন থেকে ঢাকার বায়ুমানের বিষয়ে জানা গেলো বটে কিন্তু দেশের ভেতরে অন্যান্য শহর-গ্রামের বায়ুমানের কথা জানা গেলো না। ধরে নেওয়া যায় সেসব স্থানে বায়ুর মান ঢাকার বায়ুমানের চেয়ে ততোটা খরাপ নয়। কিন্তু বায়ুমান নিয়ে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় কিংবা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যেমন বিন্দুমাত্র তৎপরতা দেখায় না তেমনি সমগ্র দেশের ভেতরে মানবিক পরিবেশ তথা সমাজসংস্কৃতির ‘অস্বাস্থ্যকর’ মান নিয়েও রাষ্ট্রের অন্যান্য রাজনীতিক বা আর্থনীতিক সংস্থার কোনও মাথা ব্যথ্য নেই।
বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর উপস্থিতির কারণে বাতাস দূষিত হয়। সমাজও দূষিত হয় বিভিন্ন আর্থনীতিক-রাজনীতিক কারণে, আমাদের দেশে যার ফলে আকাশের বায়ুদূষণের মাত্রার চেয়ে বোধ করি দেশের মাটির সঙ্গে লগ্ন মানুষ নিয়ে গড়া সমাজসংস্কৃতির কিংবা মানবিক পরিবেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে, গোটা সমাজ বেশি দূষিত অর্থাৎ অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে। তাই এখানে প্রতিদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষ মারা যাচ্ছে, তার কোনও প্রতিকার নেই। শিক্ষা ও চিকিৎসাকে দামী পণ্য করে তোলা হয়েছে, মানুষ অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে দিন দিন এবং চিকিৎসা না পেয়ে রোগে ভোগে মারা যাচ্ছে। এমন ঘোরতর সমস্যার কোনও সমাধান করা হচ্ছে না। তাছাড়া সামজিক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টির জন্যে দায়ি মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি, বাজার সিন্ডিকেট, ব্যাংকলুট, শেয়ারবাজার লুট, অর্থ-সম্পদ পাচার, চোরাচালান, মাদকব্যবসায় ইত্যাদিসহ আছে জালিয়াতি, চালিয়াতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রাহাজানি, প্রতারণা, মিথ্যাচার, ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস, চক্রান্ত, ভ-ামি, আত্মসাৎ ইত্যাদির চর্চা বেড়েছে প্রতিকারহীনভাবে স্মরণাতীতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। খাল-বিল-নদী-নালাসহ সামাজিক, রাজনীতিক, আর্থনীতিক, প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান দখল করে প্রভুত্বের রাজত্ব তৈরি করে দূষিত করেছে মুনাফালোভী মানুষেরা এবং প্রকারান্তরে সমাজে বেকারত্ব, ধর্ষণ, দখলদারিত্ব, প্রভুত্ব, আধিপত্য, ঘুষ, দুর্নীতি, হামলা-মামলা, হাঙ্গামা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিনাশ, রক্তপাত, খুন ইত্যাদি বেড়ে গিয়ে সমাজকে দূষিত করে তোলে অস্বাস্থ্যকর করে তোলেছে এবং প্রকারান্তরে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে গোটা সমাজ।
আপাতত এর বেশি কীছু বলার নেই। কেবল বলি এই অস্বাস্থ্যকর সমাজের বদল চাই। এই সমাজটাকে শান্তি, সুখ, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তাসহ মানুষের সর্বোচ্চ পর্যায়ে মেধা মননের বিকাশের অনুকূলে বদল চাই।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ