‘মিথ্যা মামলা’র হয়রানি থেকে বাঁচতে দিনমজুর কাদিরের আহাজারি
- আপলোড সময় : ১১-১২-২০২৪ ১০:০৪:২৯ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১১-১২-২০২৪ ১০:১৪:২২ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :: সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের হালুয়ারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম কর্তৃক দায়ের করা ‘মিথ্যা’ মামলায় হয়রানির শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন একই ইউনিয়নের বেলাবরহাটী আপ্তাবনগর গ্রামের দিনমজুর আব্দুল কাদির। তিনি এই মামলার হয়রানি থেকে বাঁচতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেন। জানা যায়, সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের বেলাবরহাটী আপ্তাবনগর গ্রামের দিনমজুর আব্দুল কাদিরের ছেলে নয়ন মিয়া (২২) একজন পেশাজীবী সিএনজি চালক। তিনি সুরমা নদীর উত্তরপাড়ে সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি নয়ন মিয়ার সিএনজি রিজার্ভ করেন হালুয়ারগাঁও গ্রামের জহুরুল ইসলাম। তিনি রাতে পরিবারের লোকজন নিয়ে বাংলাবাজার যাবেন। ওইদিন রাত ৮টায় সিএনজিতে উঠেন পরিবারের ৭ জন নিয়ে। তখন সিএনজিটি রাত অনুমান সাড়ে ৮টায় পৌঁছে ইসলামপুর এলাকায়। সিএনজি চলন্ত অবস্থায় সামনে শিয়াল আসায় চালক নয়ন মিয়া নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এসময় জহুরুল ইসলামের ছেলে সাব্বির আহমদ (১১) ভয়ে লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নামেন। এ সময় দুই উরুতে আঘাত পান তিনি। কিন্তু সিএনজিতে থাকা অন্য যাত্রীরা নামেননি, তারা আঘাতও পাননি। দুর্ঘটনার পর জহুরুল ইসলাম পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়ি ফিরেন। পরে সাব্বির আহমদকে নিয়ে দ্রুত সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে যান। এই খবর পেয়ে দিনমজুর আব্দুল কাদিরও ছুটে যান সদর হাসপাতালে। সাথে নিয়ে যান গ্রামের বাসিন্দা মানিক মিয়াসহ আরও কয়েকজনকে। তখন সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিলেটে রেফার করা হয় সাব্বির আহমদকে। ওই সময় সিএনজি চালক নয়নের পিতা আব্দুল কাদির সাব্বিরের চিকিৎসার জন্য অন্যের কাছ থেকে ঋণ করে ৩০ হাজার টাকা এনে দেন। তখন জহুরুল ইসলামের হাতে ওই টাকা তোলে দেন গ্রামের বাসিন্দা মানিক মিয়া। ২২ ফেব্রুয়ারি সিএনজি দুর্ঘটনার আগে ও পরে উভয় পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক ভালই ছিল। এই দুর্ঘটনার প্রায় ৬ মাস পর ছেলে সাব্বির আহমদের চিকিৎসা বাবদ আরও টাকা দাবি করে বসেন পিতা জহুরুল ইসলাম। চিকিৎসার টাকা দিতে অস্বীকার করায় হঠাৎ গত ৩ জুলাই সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে দুর্ঘটনার মিথ্যা বিবরণ দিয়ে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন জহুরুল। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন জহুরুল ইসলামের ছেলে সাব্বির আহমদ ওইদিন রাত ৮টায় রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে ছিলেন বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে। তখন হঠাৎ নয়ন মিয়ার সিএনজি এসে তার উপর উঠে যায়। এতে সাব্বির আহমদ গুরুতর আহত হন। হালুয়ারঘাট ও আপ্তাবনগর গ্রামের অনেকে জানান, পাশাপাশি গ্রামের পরিচিত ও বিশ্বাসী চালক হিসাবে নয়ন মিয়ার সিএনজি রিজার্ভ করেন জহুরুল ইসলাম। ওইদিন বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে রাত ৮টায় হালুয়ারগাঁও থেকে বাংলাবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন পরিবারের লোকজন নিয়ে। ইসলামপুর এলাকায় বাবুল শাহ মাজার সংলগ্ন রাস্তায় যেতেই একটি শিয়াল গাড়ির সামনে পড়ে। এতে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তা থেকে পড়ে যান। গাড়িতে থাকা যাত্রী সাব্বির আহমদ ভয়ে লাফ দিয়ে পড়েন সিএনজি থেকে। এতে সাব্বির গুরুতর আহত হন। গাড়িতে থাকা তার পরিবারের অন্য যাত্রীরা ভাল ছিলেন। পরে সাব্বির আহমদকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া হয়। এ সময় দিনমজুর আব্দুল কাদির মানবিক দিক বিবেচনা করে জহুরুল ইসলামকে ৩০ হাজার টাকা দেন। স্থানীয় বাসিন্দা মানিক মিয়া জানান, সিএনজি দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমিও সদর হাসপাতালে যাই। সাব্বিরকে নিয়ে সিলেটে যেতে গাড়ি এনে দেই। ভাড়াসহ আব্দুল কাদিরের দেয়া ৩০ হাজার টাকা জহুরুল ইসলামের হাতে দেই। তিনি গুনে গুনে টাকা সমঝে নেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ছেলের সুস্থতায় দোয়া চান জহুরুল। এ বিষয়ে জানতে মামলার বাদী জহুরুল ইসলামের বাড়িতে যান এ প্রতিবেদক। তখন জহুরুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে সাব্বির আহমদ কয়েকবার শরীরের একই স্থানে ভেঙেছে। এসময় কাছে দাঁড়ানো সাব্বিরকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সিএনজি দুর্ঘটনায় সে উরুতে আঘাত পেয়েছে। পরবর্তী প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগে জহুরুল তাকে সরিয়ে নেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন এলাকার বাসিন্দা মানিক মিয়া। এ প্রতিবেদক চলে আসার পর নানা সন্দেহে মানিক মিয়াকে দোষারোপ করেন জহুরুল এবং তার সঙ্গীদের দিয়ে মানিক মিয়াকে মাধরের হুমকি দেন তিনি। সুরমা ইউপির ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য ফিরোজ মিয়া বলেন, জহুরুল ইসলামকে তার ছেলে সাব্বির আহমদের চিকিৎসায় ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। পরে চিকিৎসার জন্য আরও টাকা দাবি করলে গত ২ অক্টোবর জহুরুলের আয়োজনে সালিশ বোর্ডে আরও ২৫ হাজার টাকা দিতে বলা হয় চালকের পিতা আব্দুল কাদিরকে। তখন জহুরুলকে নগদ ৪ হাজার টাকা দেয়া হয়। মামলা তোলে নেওয়ার পর আরও ২১ হাজার টাকা দেয়া হবে, এমন সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর জহুরুল ইসলাম হাসপাতালের ‘এমসি’ না পাওয়ায় মামলা তোলে নিতে পারছেন না বলে আমাকে জানান।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ