1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৫:২৯ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা ও শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স : মো. হাসানুর রহমান

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৪

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একক ও সাহসী নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা মহান স্বাধীনতা অর্জন করি। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে সচল, মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, প্রশাসনকে পুনর্গঠন করে সচল, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়, সর্বোপরি একটি সংবিধান প্রণয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নেতৃত্বে নবগঠিত সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।
এই সময়ে বঙ্গবন্ধুকে মোকাবিলা করতে হয়েছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নানামুখী ষড়যন্ত্র ও চাপ, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো এবং রাজনৈতিক অপতৎপরতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন সব সংকট কাটিয়ে দেশকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে এনে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সকলকে একত্রিত হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন, তখনই তাঁকে হত্যা করা হয় সপরিবারে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ও সাড়ে তিন বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার সময় উপলব্ধি করেছিলেন আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার অন্যতম বড় বাধা হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু সবসময় ছিলেন সোচ্চার এবং দৃঢ়। বঙ্গবন্ধু তাঁর বিভিন্ন বিবৃতিতে, লেখায় ও বক্তব্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে দুর্নীতি যে বিরাট একটি অন্তরায় এবং দুর্নীতির সঙ্গে মূলত সমাজের যে ক্ষুদ্রতম অংশ জড়িত, সে বিষয়টি তিনি একাধিকবার উচ্চারণ করার পাশাপাশি দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সতর্ক করে আত্মশুদ্ধির উপদেশ ও আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আমরা যদি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনেকগুলো বক্তব্যের মধ্য থেকে দুই একটি এখানে উল্লেখ করি তাহলেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান বোঝা আরও সহজ হয়। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি, জাতীয় সংসদে প্রদত্ত এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “ ..আর এই দুঃখী মানুষ যে রক্ত দিয়েছে, স্বাধীনতা এনেছে, তাদের রক্তে বিদেশ থেকে খাবার আনাই, সেই খাবার চুরি করে খাবে; অর্থ আনি, সেই অর্থ চুরি করে খাবে; তা বিদেশে চালান দেবে। সেটা হবে না। বাংলার মাটি থেকে তাদের উৎখাত করা হবে। … যারা দুর্নীতি করে, এদের বাংলার মাটি থেকে তাদের উৎখাত করতে হবে। মানুষকে যারা পয়সা দেয়, তোমার মাহিনা দেয়, তোমার সংসার চালানোর জন্য ট্যাক্স দেয়, তার কাছে তুমি আবার পয়সা খাও! মেন্টালিটি চেঞ্জ করতে হবে….।”
একই তারিখে সংসদের অপর অধিবেশনের ভাষণে বঙ্গবন্ধু ¯িপকারকে উদ্দেশ্য করে উপরোক্ত বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করে, আহ্বান জানিয়েছিলেন, “…দেশকে বাঁচান, মানুষকে বাঁচান, মানুষের দুঃখ দূর করুন। আর দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, চোরাকারবারিদের উৎখাত করুন…।”
১৯৭৫ সালের ৮ মার্চ, টাঙ্গাইলের কাগমারীতে মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “বাংলাদেশের শতকরা ২৫ ভাগ দুঃখ দূর হয়ে যাবে, যদি দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যায়। … যার মধ্যে মনুষ্যত্ব আছে, সে-ই মানুষ হয়। সেই জন্যে আমি চাই মনুষ্যত্ব ফিরে আসুক..।”
বিগত দেড় দশকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিস¤পন্ন নেতৃত্বে দেশে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। কৃষি, শিল্প, অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে দৃশ্যমান পরিবর্তন। কিন্তু দুর্নীতি এখনো একটা বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হিসেবে রয়েগেছে। দেশে আয় ও স¤পদের বৈষম্য বেড়ে ওঠার পেছনে দুর্নীতি একটি বড় কারণ। এতে উন্নয়নের সুফল সমাজে ঠিকঠাক বণ্টিত হয় না। পাশাপাশি এটা দেশকে পিছিয়ে দেয়। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। কিন্তু দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের কঠোর অবস্থান থাকা সত্ত্বেও বাস্তবতা এটাই যে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে দুর্নীতি দমন এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
অতীতে বাংলাদেশ কয়েক দফায় (২০০১-২০০৫) দুর্নীতিতে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষ অবস্থান করে নিয়েছিল। দীর্ঘ বিরতির পর নানান রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলা করে ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয়ে রাষ্ট্র পরিচালনাই আসে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট করেন এবং দুর্নীতি রোধে সচেষ্ট হন। ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রকাশ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা ঘোষণা করেছিলেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করে গেছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় দুর্নীতির আগ্রাসন থেমে থাকেনি।
দুর্নীতি রোধে মনিটরিং, ব্যাংক হিসাব জব্দ, বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও সামাজিক অপরাধ রোধে সরকার কাজ করেছ। ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন এবং চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে “জিরো টলারেন্স (শূন্য সহনশীলতা)” দেখানো, মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এই ইশতেহার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সরকার বাংলাদেশের জন্যে একটি সমৃদ্ধ ও টেকসই অর্থনীতির নিশ্চিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
গত দেড় দশকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যে কয়েকটি দেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলোতে প্রতিবেশী দেশগুলোকে পেছনে ফেলে এখন সামনের সারিতে বাংলাদেশ। বর্তমান বিশ্বের অনেক স্বল্পোন্নত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আদর্শ হিসেবে দেখা হচ্ছে বাংলাদেশকে। দেশটি বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছয় শতাংশের ওপরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) বলছে, আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ ২০টি অর্থনীতির একটি হবে বাংলাদেশ। বাজারের আকার, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিভিন্ন খাতে যেমন কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য। বর্তমান সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে “জিরো টলারেন্স (শূন্য সহনশীলতা)” দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির হারকে একটি স্থিতিশীল অবস্থাই ধরে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়িত হবে।
[মো. হাসানুর রহমান (হাসান), প্রভাষক, অর্থনীতি বিভাগ, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ইউনিভার্সিটি, জামালপুর সদর]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com