টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে কর্তৃপক্ষের আরো নজরদারি বাড়াতে হবে। বিশেষ করে টাঙ্গুয়ার হাওরের সংরক্ষিত কান্দাগুলো বর্তমানে মহিষের চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। মহিষ পালনে ব্যবহার হচ্ছে টাঙ্গুয়ার হাওরের সংরক্ষিত সবুজ বনভূমি। একটি চক্র ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও নেত্রকোণার কলমাকান্দা থেকে কয়েক শতাধিক মহিষ টাঙ্গুয়ার হাওরের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে নিয়ে আসেন প্রতি বছর। এসব মহিষ প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রামসার সাইট ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকার বিভিন্ন কান্দা, ঘাস ও বনে আবৃত উঁচু সবুজ ভূমিতে অবাধে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ফলে হাওরের কান্দায় লাগানো ও প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা হিজল-করচের চারা নলখাগড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন, পাখির বাসা বিভিন্ন প্রজাতির কচ্ছপের ডিম মহিষের পায়ের তলায় পিষ্ঠ হচ্ছে।
হেমন্ত মওসুমে টাঙ্গুয়ার হাওরের দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ বনাঞ্চল জেগে ওঠে। নানা প্রজাতির ঘাসে তখন ছেয়ে যায় হাওরের কান্দাগুলো। এসময় একশ্রেণির মহিষ পালকরা ঘাস খাওয়াতে মহিষের পাল নিয়ে আসেন টাঙ্গুয়ার হাওরে। মহিষের মালিকগণ স্থানীয় প্রভাবশালীদেরকে টাকা দিয়ে এ সুযোগ নিচ্ছেন প্রতি বছর। পরিবেশ বিধ্বংসী এমন কার্যক্রম চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রকৃতি সংরক্ষণে নিয়োজিত সংশ্লিষ্টদের চোখের সামনে প্রকৃতি বিনাশী এমন ঘটনা ঘটলেও তারা রয়েছেন নিশ্চুপ। মহিষকে ঘাস খাওয়ানোর নামে বিনাশ হচ্ছে পাখির বাসা, পাখির ডিম ও কচ্ছপের ডিম। তাছাড়া মহিষের পায়ের তলায় পিষ্ঠ হচ্ছে মূল্যবান হিজল করচের চারাসহ নানা জাতের গাছের চারা। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে হাওরের স্থলজ ও জলজসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণবৈচিত্র্য। পরিবেশ বিনাশী এমন ঘটনা ঘটলেও হাওরটির পরিবেশ বাঁচাতে এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
হাওরের কান্দাগুলোর মধ্যে বড়বন, টানেরবন, বিরাসখালী, গোলডোবা, ইকরদাইড়, বাঘমারা, জয়পুর হাওর ও পাদিচোরাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘাস খেতে অবাধে চষে বেড়াচ্ছে মহিষের পাল। এতে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন, পরিবেশবাদী ও সুধীজন টাঙ্গুয়ার পরিবেশের এমন ক্ষতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এখনই মহিষগুলোকে টাঙ্গুয়া থেকে না তাড়ালে টাঙ্গুয়ার যে ক্ষতি হবে তা পূরণ করা অসম্ভব হয়ে উঠবে। আমরা মনে করি টাঙ্গুয়ার জীববৈচিত্র্য অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। আর তা রক্ষা করতে না পারলে দায়ী হতে হবে কর্তৃপক্ষকেই। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এমনটাই প্রত্যাশা।