স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদে দেশে প্রায় পাঁচ হাজার ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে। প্রতিটি সেন্টারে একজন নারী ও একজন পুরুষ উদ্যোক্তা রয়েছেন। এ হিসেবে দেশে প্রায় ১০ হাজার উদ্যোক্তা রয়েছেন। সরকারের এসব কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য হলো ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়া। এ জন্য সরকার উদ্যোক্তাদের মাল্টিমিডিয়া, প্রজেক্টর, ডিজিটাল ক্যামেরা, ওয়েব ক্যাম, ইন্টারনেট মডেম এবং সোলার প্যানেল ইত্যাদি সরবরাহ করেছে। এতে খরচ হয়েছে প্রায় দেড়শত কোটি টাকা। এসব সেবা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সরকারি হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে ৪৫ লাখ সেবাসমূহ এখন পর্যন্ত ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে প্রায় ২১ কোটি ৬০ লাখ সেবা দেয়া সম্ভব হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী উদ্যোক্তারা ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে জনগণকে সেবা দিয়ে আয় করবেন। সরকার তাদের কোনো প্রকার বেতন-ভাতা দেবেন না।
উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সরকারি সেবা তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী ইতিমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু আমরা ইদানিং উদ্যোক্তাদের কার্যক্রমে হতাশ হচ্ছি দিনে দিনে। তারা দাবি তুলছেন ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করার জন্য। তাদের দাবি ওই পদে তাদের নিয়োগ দিয়ে জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত করতে। এ থেকে বুঝা যায় কোটি কোটি টাকায় সরকার উদ্যোক্তা সৃষ্টির উদ্যোগ নিলেও উদ্যোক্তাদের শুরু থেকেই লক্ষ্য ছিল সরকারিভাবে চাকরি নিয়েই কাজে যোগ দেয়া। যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সরকার ‘উদ্যোক্তা’ সৃষ্টি করেছিল, তা সাধারণ উদ্যোক্তা সেসব সুযোগ পায়নি। উদ্যোক্তাদের যে কঠোর পরিশ্রম, ত্যাগ আর বুদ্ধির পরীক্ষা দিতে হয় তাঁদের মনে সেই মানসিকতা তৈরি করতে পারেনি।
বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫৫ শতাংশ তরুণ নতুন গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি ১০ জনের প্রায় ১০ জনই চান একটা চাকরি। এক হিসাবে দেখা গেছে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে যোগ হয় এবং অর্ধেকের ঠাঁই হয় স্থানীয় ও বিদেশি চাকরির বাজারে। এ পরিস্থিতি থেকে আমাদের উত্তরণের সঠিক পথ হল তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তাসুলভ মনোভাব গড়ে তোলা। নিজে চাকরি না করে চাকরি দেয়ার মানসিকতা গড়ে তোলা।
ইউনিয়ন পরিষদে ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের নীতি বহির্ভূত চাকরি পাওয়ার দাবির মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে। তাদের শ্রম ও মেধা দিয়ে ডিজিটাল সেন্টারগুলোকে আরো উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে হবে। তবেই নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে সমাজ ও দেশ এগিয়ে যাবে।