দেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মারা গেছেন, যিনি জাতীয় সংসদে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন সাতবার।
ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ভোর রাত ৪টা ১০ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সুরঞ্জিত রক্তে হিমোগ্লোবিন স্বল্পতাজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
তিনি আমাদের দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব। বিখ্যাত পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন সবার উপরে। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জন্ম ১৯৪৬ সালে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার আনোয়ারাপুর গ্রামে। প্রথম জীবনেই বামপন্থি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়া এই রাজনীতিবিদ মোট সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে স্নাতকোত্তর করে ঢাকা সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে আইনে ডিগ্রি নেন সুরঞ্জিত। পরে কিছুদিন আইন পেশায় যুক্তও ছিলেন। ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত সুরঞ্জিত ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ের নির্বাচনে ন্যাপ থেকে জয়ী হয়ে আলোচনার জন্ম দেন। একাত্তরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন ৫ নম্বর সেক্টরের সাব কমান্ডার হিসেবে।
সুরঞ্জিত ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন ন্যাপ থেকে। ১৯৭৯ সালের সংসদে ছিলেন একতা পার্টির প্রতিনিধি হয়ে। ১৯৯১ সালের সংসদে গণতন্ত্রী পার্টি থেকে নির্বাচিত হন তিনি। ছোট দলের বড় নেতা হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত সুরঞ্জিত আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য অন্য আসনে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন তিনি। এরপর অষ্টম, নবম ও দশম সংসদেও তিনি নির্বাচিত হন। দেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য সুরঞ্জিত ছিলেন নবম সংসদে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যান। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে জাতি হারালো একজন দেশ প্রেমিক রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ হারালো একজন অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান, আর আমরা হারালাম সকল প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের একজন অগ্র সেনানীকে। তাঁর মৃত্যুতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা কখনো পূরণ হবার নয়। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা।