1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৭:০৯ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

শারদীয় দুর্গাপূজা ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

  • আপডেট সময় সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৬

পিযুষ চক্রবর্তী
শরতের ষষ্ঠী তিথিতে আদ্যাশক্তি-দশ ভূজা মহামায়া দেবলোক থেকে মর্ত্যলোকে আগমন করেন। তখন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মহামায়া শ্রীশ্রী দুর্গাদেবীকে আরাধনা, উপাসনা, স্তুতি, ভক্তি-শ্রদ্ধা আত্মনিবেদন করেন মায়ের চরণে। সনাতন ধর্মে যত পূজা প্রচলিত আছে তন্মধ্যে দুর্গাপূজাই জাঁকজমকপূর্ণ ও সর্বজনীনভাবে উচ্ছ্বসিত। মহিষাসুর মর্দিনী শ্রীশ্রী দুর্গাদেবী ভারতীয় উপমহাদেশসহ সারা বিশ্বে বহুকাল থেকেই পূজিত হয়ে আসছেন। হিমালয়ে কৈলাশ থেকে দেবী এসে বাংলার সমতল ভূমিতে পূজিত হন প্রতিবছর সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ, শিশু ও আবালবৃদ্ধ বনিতার দ্বারা। সঙ্গে নিয়ে আসেন গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী আর সরস্বতীকে। শাস্ত্রমতে প্রতি বছরে শরৎকালে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। মহালয়ার সময় মন্দিরে মন্দিরে ব্রাহ্মণ কর্তৃক চন্ডী পাঠের মাধ্যমে দেবীকে আহ্বান করা হয়। মন্দিরে মন্দিরে উচ্চারিত হয়Ñ
‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা
নমস্তসৈ নমস্তস্যই নমস্তস্যই নমোঃ নমঃ।’
ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও মূলত মহালয়া থেকেই দুর্গামায়ের আগমন ঘটে। শাস্ত্রীয় বিধানমতে মহালয়ার দুটি পর্ব রয়েছে একটি পিতৃপক্ষ অন্যটি দেবীপক্ষ। অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপক্ষের শেষ হয়, আর প্রতিপদ তিথিতে শুরু হয় দেবী পক্ষ। এদিন গঙ্গা তীরে প্রার্থনা করে ভক্তরা মৃত আত্মীয়-স্বজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার মঙ্গল কামনা করেন।
মহালয়া দুর্গোৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ স-সাগরা পৃথিবীর অধিশ্বর রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তকালে তিনি এই পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজাও বলা হয়।
শ্রী রামচন্দ্র শরৎকালে সীতাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার আগে অকালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। তাই এ পূজাকে অকাল বোধনও বলা হয়। ধর্মমতে, মহালয়ার দিনে দেব দেবীকুল দুর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন। তখন থেকেই ঢাকের কাঠি, কাঁসর-ঘণ্টার আওয়াজ, মঙ্গলশঙ্খ ও উলুধ্বনিতে কেঁপে উঠে প্রতিটি মন্দির। দেবী দুর্গাকে সবাই মা দুর্গা, পার্বতী মহামায়া, কৈলাশি, দুর্গতিনাশিনী, পরমা প্রকৃতি নারায়ণী, মহেশ্বরী ইত্যাদি নানা নামে অভিহিত করেন।
বৈদিক যুগ হতেই শক্তিময়ী নারীর সাধনা এদেশে প্রচলিত ছিল। শক্তি শব্দটি স্ত্রীবাচক।
নারী মূর্তিকে মাতৃরূপে আরাধনা ও উপাসনা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে তিনি নারী বা পুরুষ নন, মহাশক্তি। আর সেই মহাশক্তির অংশরূপিনী নারী শক্তি ঘরে ঘরে বিরাজমান এবং এই নারী শক্তির অবমাননাতে ধ্বংস অনিবার্য। মনুসংহিতায় আছে যএ নার্যস্ত পূজ্যন্তে রমন্তে ত এ দেবতাঃ। অর্থাৎ যে নারীরা শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে পারেন, সেখানেই দেবতা বিরাজ করেন। নারীদেরকে কেবলমাত্র ভোগের সামগ্রী মনে করা হলে সেখানে দেখা দিবে নানাবিধ ব্যাধি, দুঃখ ও অশান্তি।
মহামায়ারূপী নারী-শক্তিই সর্বশক্তির আধার। দুর্গাপূজার মধ্য দিয়ে জগৎ পালনী মহামায়াকে পূজা করি যাঁর কৃপা ভিন্ন ইহ ও পর এ কোন লোকই মানুষ কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। মহামায়া দেবীর দক্ষিণ পদতলে মহাবল বাহন সিংহ এবং বাম পদতলে ছিন্নমুন্ড মহিষের দেহ থেকে সমুত্থিত দুর্ধর্ষ মহিষাসুর বিরাজিত। সিংহ পশুরাজ ও মহিষাসুর অসুরপতি। তারা সমগ্র পশুশক্তি ও অসুরশক্তির প্রতীক। তাঁরা উভয়ই মহাদেবীর পদানত, অর্থাৎ মা দুর্গা সমস্ত পশুশক্তি ও অসুর শক্তির ঊর্ধ্বে বিরাজিতা। অতএব যাবতীয় পাশবিক ও আসুরিকস্তর অতিক্রম না করলে দেবীর প্রসাদ লাভ করা যায় না। মা দুর্গাকে যদি হৃদয়াসনে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, তাহলে ঐহিক ও পারলৌকিক উভয়বিধ কল্যাণ অর্থাৎ ভক্তি ও মুক্তি দুই-ই লাভ হয়। দেবীর পূজায় মানব জীবনের সার্বিক মঙ্গল সাধিত হয়। এতে ধর্ম, অর্থ, কাম, এই চতুবর্গ ফলই লাভ হয়।
জগজ্জননী দেবী দুর্গার আগমনে খুশির আনন্দ ছুঁয়ে যাচ্ছে ঘরে ঘরে, সব বয়সী-মানুষের মনে। এ বৎসর দেবীর ঘোটকে আগমন এবং গমন। পঞ্চমী তিথিতে দেবীর বোধন পালন করা হয়। এ বছর ২০ আশ্বিন ১৪২৩ বঙ্গাব্দ, (৭ অক্টোবর ২০১৬ ইংরেজি) রোজ শুক্রবার থেকে বিল্বষষ্ঠীতে সাংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস এর মধ্য দিয়ে পূজা শুরু এরপর ধারাবাহিকভাবে মহাসপ্তমী বিহিত পূজা, মহাষ্টমী বিহিত পূজা এবং মহানবমী বিহিত পূজা ও ১১ অক্টোবর রোজ মঙ্গলবার দশমী বিহিত পূজা সমাপনান্তে দর্পণ বিসর্জন অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগে এবার শারদীয় দুর্গাপূজা ২৪৫৩টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার সিলেট বিভাগে পারিবারিক, বারোয়ারী ও সর্বজনীন পূজা মন্ডপ (স্থায়ী ও অস্থায়ী) ২৪৫৩টি। সিলেট বিভাগে গত বছর থেকে এবার ৪৯টি পূজা বেড়েছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে পূজা বাড়লেও এবার পূজার সংখ্যা কমেছে মৌলভীবাজারে। এ বছর সিলেট জেলায় বেড়েছে ৩ টি পূজা। জেলায় সর্বজনীন, বারোয়ারী ও পারিবারিক পূজা ৫৮৬টি। এর মধ্যে মহানগরীতে সর্বজনীন পূজা ৪৫টি ও পারিবারিক পূজা ১৯টি। সদর উপজেলায় ৪৯টি, দক্ষিণ সুরমায় ২৩টি, গোলাপগঞ্জে ৬৪টি, বালাগঞ্জে ৩০টি, কানাইঘাটে ৩৪ টি, জৈন্তাপুরে ২০টি, গোয়াইনঘাটে ৩৮ টি, কোম্পানীগঞ্জে ২৭টি, বিশ্বনাথে ২৪টি, ওসমানীনগরে ৩২ টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ৩৭ টি, বিয়ানীবাজারে ৫১ টি ও জকিগঞ্জে ৯৩ টি পূজামন্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। মৌলভীবাজারে এবার পূজামন্ডপ কমেছে ১৬টি। গত বছর ছিল ৯০৫ টি। এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৮৯ টিতে। সুনামগঞ্জে এবার ৪৮টি পূজা বেড়েছে। গত বছর ছিল ৩০২টি। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫০টিতে। হবিগঞ্জে এবার পূজা বেড়েছে ২৮টি। গত বছর ছিল ৬০০ টি। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২৮টিতে। দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। যা স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতি বছরের মতো এবারও পালন করা হচ্ছে। দুর্গাপূজার অনুসারীরা পূজায় আত্মনিয়োগ করার জন্য এবং ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পূজার রীতিনীতি ও দর্শনের মধ্য দিয়ে পূজার আনন্দ উপভোগের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন। যার যার নিকট যার যার ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শারদীয় দুর্গোৎসবের জন্য পূজার ছুটি সরকারিভাবে ১ দিন করা হয়েছে। যা পূজোর জন্য যথোপযুক্ত ছুটি নয়। পূজার জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সুবিধার্থে ৫ দিনই সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ছুটির প্রয়োজন। কারণ ষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত পূজার ভাবগাম্ভীর্য ও পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের মধ্যে আনন্দ ও কৌতুহলের সৃষ্টি হয় পূজা দেখার জন্য গ্রাম-গঞ্জ ও শহরে ছোটাছুটি করেন অনেকেই পূজার আনন্দ উপভোগ করার জন্য। অনেকেই সিলেট শহরের পূজা মন্ডপগুলি পরিদর্শন করেন কেউবা হবিগঞ্জের পূজা মন্ডপে কুমারী পূজা দেখার জন্য ছুটে যান। আবার কিছু উৎসুক দর্শনার্থী পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ছুটে যান পূজার আনন্দ উপভোগ করার জন্য। সনাতন ধর্মীয় উৎসবগুলো আচারনিষ্ঠ, নীতিসিদ্ধ, শাস্ত্রনিযুক্ত। তাই পূজার মূল ভাবধারা যেন অপসংস্কৃতির দ্বারা সংকুচিত না হয়। সেদিকে সর্বজনীন দৃষ্টি থাকা বাঞ্ছনীয়। কবির ভাষায় বলতে হয় Ñ
‘হিন্দুরা কাঠ-মাটি দিয়ে গড়া
করে না পুতুল পূজা
মৃন্ময়ী মাঝে চিন্ময়ী হেরে
হয়ে যায় আত্মহারা।’
দুর্গাপূজা একটি সর্বজনীন ও বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। সিলেট শহরের দর্শনার্থীবহুল উল্লেখযোগ্য দুর্গা পূজা মন্ডপগুলোর মধ্যে মির্জাজাঙ্গালের নিম্বার্ক আশ্রম পূজা মন্ডপ, নাইওরপুলের রামকৃষ্ণ মিশন, নাইওরপুলের বলরাম আশ্রম, বালুচরের দুর্গাবাড়ি, দাড়িয়াপাড়ার চৈতালী, লামাবাজারের তিন মন্দির পূজা মন্ডপ, মির্জাজাঙ্গালের মণিপুরী রাজবাড়ী পূজা মন্ডপ, কাজলশাহ’র সনাতন যুব ফোরাম, টিলাগড়ের গোপালটিলা মন্ডপ, দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী, ব্রাহ্মণশাসন কালীবাড়ীসহ আরো অনেক পূজা মন্ডপ রয়েছে যাতে সনাতন ধর্মাবলম্বী দুর্গাপূজার পুণ্যার্থীসহ সকল ধর্মের লোকের উপস্থিতিতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। পূজার যথাযথ রীতিনীতি শুধুমাত্র ভক্ত ও পুণ্যার্থীদের দ্বারা অনুষ্ঠিত হলেও দুর্গাপূজা সর্বজনীন। এতে জাতিধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে এক উৎসবমুখর আমেজ তৈরি হয়, ষষ্ঠী থেকে শুরু করে বিজয়া দশমী পর্যন্ত।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com