সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী বিশ্বজিৎ মল্লিকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জব্দ করা হয়েছে একটি সুইসাইড নোটও।
শনিবার রাত ১টার দিকে ক্যা¤পাস সংলগ্ন পার্শ্ববর্তী বড়গুল এলাকার একটি ম্যাচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় রোববার সকালে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ এনে প্রক্টর অফিসে তালা দিয়েছে।
এদিকে বিশ্বজিৎ মল্লিকের একটি ‘সুইসাইড নোট’ পুলিশ উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. রাশেদ তালুকদার।
তিনি বলেছেন, সুইসাইড নোটে নিজের হতাশার কথা লিখে গেছেন বিশ্বজিৎ। লেখা পড়ে মনে হয়েছে মূলত মান অভিমান থেকেই আত্মহত্যা করেছে সে।
বিশ্বজিতের সুইসাইড নোটটি ‘প্রথম কথা’ দিয়ে শুরু হয়ে ‘পঞ্চম কথা’ পর্যন্ত লিখে তারপর ‘সর্বশেষ কথা’ বলে একটি পয়েন্টে এ কথাগুলো লেখা।
বিশ্বজিতের সুইসাইড নোটে ‘প্রথম কথায়’ একে অন্যের প্রেমিকাকে নিয়ে কটু কথা বলার বিষয়টি দৃষ্টিপাত করে দোষ-ত্রুটি যা-ই থাক সামনা-সামনি কথা বলার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। কারো পেছনে কোনো কথা না বলার জন্যও বলা হয় সেখানে।
‘দ্বিতীয় কথা’ পয়েন্টেও প্রেমিকা প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে। যেখানে, যাদের প্রেমিকা আছে তারাও অপরের প্রেমিকা নিয়ে যেন মাথা ঘামায় এমন কথা বলা হয়েছে।
‘তৃতীয় কথা’ পয়েন্টে লেখা হয়েছে, বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার পর একে অপরের প্রতি বিদ্রƒপ ও অশালীন মন্তব্য করার কথা, যেটা ঠিক নয় তার মতে। এ পয়েন্টে একটা প্রশ্ন করা হয়েছে। ‘তাই বলে একটু মার্জিত মন্তব্য করা উচিত নয় কি?’
‘চতুর্থ কথা’ পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়, ‘কিছু কিছু বন্ধু আছেন যারা নিজেদের বন্ধুর ব্যপারে একটু বেশিই নাক গলান। নাকটা কম গলাবেন। অতিরিক্ত নাক গলানো তার যেমন পছন্দ নয়, তেমনি আপনারও নয় মনে রাখবেন।’
এবং ‘পঞ্চম কথা’ পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়, ‘যেসব বন্ধু আপনাদের সাথে কম মেশে তাকে নিয়ে মজা করতে আপনার খুবই ভাল লাগে। কিন্তু যাকে নিয়ে মজা করছেন তার ভাল লাগে না। বরং তাকে নিয়ে মজা না করে, কেন সে আপনাদের সাথে কম মিশছে বা আপনাদের সাথে কয়েকদিন মেশার পর কেন এড়িয়ে যাচ্ছে তা বের তো করবেনই না, উল্টো তাকে লুথা বলবেন। সমস্যা দু’জনেরই আছে শুধু যে বন্ধুটি আপনার সাথে কম মিশেছে তাকে একা দোষ দেবেন না।’
এদিকে সকালে প্রক্টর অফিসে তালা দিয়ে বিক্ষোভকালে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, শুধুমাত্র ঘটনাস্থলে গিয়েই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমনকি লাশের সঙ্গে হাসপাতালে কয়েকটি পুলিশ পাঠানো হয়। এসময় কোনো শিক্ষক সেখানে যাননি। পরে শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে হাসপাতালে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
এসময় সহকারী প্রক্টর সামিউল ইসলাম ও শাকিল ভূইয়া শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এবং ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার বলেন, সমস্ত অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেসের অন্যান্য সদস্যরা জানান, বিশ্বজিত প্রায় একবছর যাবত তাদের মেসে থেকেছেন। তার আচরণে কখনো মনে হয় নি সে আত্মহত্যা করতে পারে। তারা বলেন, বিশ্বজিৎ অনেকটা অন্তর্মুখী। তিনি কারো সঙ্গে খুব একটা মিশতেন না।