স্টাফ রিপোর্টার ::
ঘটনা-১। বুধবার সন্ধ্যা। সদর উপজেলার শাখাইতি মাদ্রাসার সামনের রাস্তায় দেখা গেল কয়েকজন কোমলমতি মাদ্রাসা পড়–য়া কিশোর শিক্ষার্থী। বুকে ধর্মীয় কিতাব। হাতে গ্রামের চেয়ারম্যান প্রার্থী জমিয়ত নেতা মুফতি শামছুল ইসলামের লিফলেট এবং ব্যালট পেপার। দল বেধে তারা ছুটছেন বিভিন্ন গ্রামের দিকে। আলাপকালে তারা জানালেন, তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হাদিস-কোরআনের আলোকে ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের বুঝানোর জন্য। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে প্রতীক সম্বলিত ব্যালট পেপার। ঘরে ঘরে গিয়ে ইসলাম রক্ষার কথা বলে এই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মুফতি শামছুল ইসলামের পক্ষে ভোট চাইছেন। এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাংবাদিক পরিচয়ে নাম জানতে চাইলে তারা অপারগতা প্রকাশ করে।
ঘটনা-২। প্রায় দশদিন আগে শাখাইতি গ্রামের কয়েকজন সচেতন তরুণ রাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. বুরহান উদ্দিনের পক্ষে মিছিল করেন। এই খবর পেয়ে মুফতি শামছুল ইসলামের সমর্থকরা তাদেরকে শাসিয়ে দেন। পরে গ্রাম ডেকে তাদেরকে এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাওয়ানো হয়।
ঘটনা-৩। একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা আতঙ্কের মধ্যে আছেন। গ্রামের সাধারণ কোন ভোটার অন্য কোন প্রার্থীর সমর্থক বা প্রার্থীর সঙ্গে কথা বললে তাদেরকে প্রকাশ্যে শাসিয়ে দিচ্ছেন মুফতি শামছুল ইসলামের সমর্থকরা। এমনকি গত দশ দিন ধরে সন্ধ্যার পরে অন্য কোন প্রার্থী এবং তাদের সমর্থককে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছেনা। এই কাজেও মাদ্রাসা পড়–য়া কোমলমতি সহজ-সরল শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
শাখাইতি গ্রামের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভোটার জানান, গ্রামের ধর্মপ্রাণ মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে মুফতি শামছুল ইসলাম তাদেরকে নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করছেন। তার প্রতিষ্ঠান শাখাইতি মাদ্রাসার সকল শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকবৃন্দকেও বাধ্যতামূলকভাবে নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করছেন। ধর্মপ্রাণ মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে তাকে ভোট দেওয়ার জন্য হাদিস-কোরআনের বিভিন্ন ব্যাখা করে তাকে ভোট দেওয়ার প্রার্থনা জানাচ্ছেন।
এদিকে একই উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের জমিয়ত প্রার্থী মাওলানা আব্দুল ওয়াহাব এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ধর্মপ্রাণ মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করে ভোটপ্রার্থনা করছেন বলে এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে. শুধু শাখাইতি মাদ্রাসাই নয় আশপাশের বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দকে গ্রামে ডেকে এনেছেন মুফতি শামছুল ইসলাম। তার পক্ষে কাজ করার জন্য শাখাইতি মাদ্রাসায় তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি তাদের হাতখরচও চালাচ্ছেন। তার এসব কর্মীরা সাধারণ মানুষের ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ ভোটারদের বিভ্রান্ত করছেন। ভোটের দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার আনার জন্য ছাত্রদের বিভিন্ন পাড়া এলাকা বণ্টন করে দিয়েছেন। জানা গেছে ইউনিয়নের বৃহত্তম গ্রামের প্রার্থী হিসেবে তিনি তার গ্রামের কেন্দ্রে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রহরি হিসেবে ব্যবহার করে গ্রামের সম্পূর্ণ ভোট তার বাক্সে নিতে নানাভাবে তৎপরতা শুরু করেছেন তিনি।
গৌরারং এলাকার ভোটার আয়ুব আলী বলেন, মাদ্রাসা-মসজিদ থেকে হেফাজতে ইসলামের প্রার্থী আব্দুল ওয়াহাব সাহেবকে ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। এতে ধর্মপ্রাণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদেরও ভোটের মাঠে নামানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
এরালিয়া গ্রামের মাওলানা মাহবুব বলেন, অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যারা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধর্মের কথা বলে বিভ্রান্ত করে তাঁরা আসলে প্রকৃতভাবে ধর্মের খাঁটি প্রতিনিধি নয়। বৈষয়িক লাভের জন্য তারা ধর্মকে ব্যবহার করে সাময়িক ফায়দা নিতে চায়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও আমাদের ধর্মের নাম ভাঙিয়ে একজন প্রতিনিধি সাধারণ ভোটারদের বিভ্রান্ত করে ইসলামের সম্প্রীতি-সৌহার্দ্য-সৌন্দর্য্যকে নষ্ট করছেন। প্রতারণামূলক প্রচারণা থেকে তিনি ভোটারদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
কাঠইর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং প্রার্থী মো. লুৎফুর রহমান বলেন, অনেক ভোটার আমাকে জানিয়েছেন মুফতি সাব মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের তার নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করছেন। একজন ধর্মীয় প্রতিনিধির এমন কাজে সচেতন ভোটাররা সায় দিবেন না বলে আমি বিশ্বাস করি।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মুফতি শামছুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং হুজুররা আমার জন্য অনেক কষ্ট করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আমার পক্ষে এলাকায় এসে কাজ করছেন। কাউকে কোনভাবে প্রভাবিত করা হচ্ছেনা বলে তিনি জানান।
সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার ফাওজুল কবীর খাঁন বলেন, নির্বাচনী কাজে শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করা আইনসঙ্গত নয়। ধর্মীয় উন্মাদনা বা বিভ্রান্তি চালানোও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। যে প্রার্থী এটা করেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।