সুনামগঞ্জ , সোমবার, ০২ জুন ২০২৫ , ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জমে উঠছে কোরবানির পশুর হাট নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার বন্ধে একসাথে কাজের আহ্বান শান্তিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, রোগীদের চরম ভোগান্তি বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালিত নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়ক সুনামগঞ্জে ২ কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসী কনফারেন্স অনুষ্ঠিত নদ-নদীর পানি বাড়লেও হাওরে পানি কম বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালিত আন্তর্জাতিক গুম সপ্তাহ উপলক্ষে অধিকার’র মানববন্ধন ভাটির হাওরে ক্ষেতমজুররাই নব্য উৎপাদক শক্তি ডিজেলের দাম কমল লিটারে ২ টাকা, পেট্রল-অকটেনে ৩ টাকা দোয়ারায় বজ্রপাতে মারা গেলো তিন গরু রুট পাল্টে নৌপথে সক্রিয় চোরাকারবারিরা প্রশাসনের জব্দকৃত বালুভর্তি বাল্কহেড উধাও! তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় হাওরে ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দাবি নারীনেত্রী দিপালী চক্রবর্তী’র ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

স্মৃতিপট : মাটি ঘেঁষে চলা আর নেই মোহাম্মদ আব্দুল হক

  • আপলোড সময় : ১৩-১১-২০২৪ ০৯:৩১:০২ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৩-১১-২০২৪ ০৯:৩১:০২ পূর্বাহ্ন
স্মৃতিপট : মাটি ঘেঁষে চলা আর নেই মোহাম্মদ আব্দুল হক
আমি বেড়ে উঠেছি পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে হাঁসের ছানার সাঁতার দেখতে দেখতে। আমি বেড়ে উঠেছি বড়শিতে ভাত গেঁথে পুকুর থেকে পুঁটি মাছ ধরতে ধরতে। আমি বৃষ্টির দিনে জাম্বুরাকে ফুটবল বানিয়ে খেলেছি। আমি কৈশোরে ঘরের বারান্দায় কিংবা বিছানায় লুডু খেলেছি। উঠোনে বা বারান্দায় ইটের টুকরো দিয়ে দাগ কেটে ঘর বানিয়ে ষোলোগুটি খেলা খেলেছি। আমরা গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্ধা, হাডুডু খেলতে খেলতে পরে ব্যাডমিন্টন খেলার জগতে পৌঁছেছি। আমরা বেড়ে উঠেছি গরুর গাড়িতে চড়ে নীল আকাশে উড়োজাহাজ উড়ে যেতে দেখে দেখে। আমরা চড়–ই পাখির বাসায় হাত দিয়ে চড়–ই পাখির ছানা ধরেছি। আমরা শৈশব থেকে কৈশোরে গাঁয়ের পথে পথে এবং ছোট্ট শহর সুনামগঞ্জের ছোটো ছোটো রাস্তায় পায়ে হেঁটে, কখনও রিকসায় চড়ে বড়ো একটু একটু করে বড়ো হয়েছি। ওইটুকু সময় পাড়ি দিতে দিতে আমরা গ্রামে গেছি সুরমা নদীর উপর লঞ্চে চড়ে, কখনও নৌকায় চড়ে। আমি আমার গ্রামের বাড়িতে গেলে মাটির মেঠোপথে গরুর গাড়ি বা বইসের গাড়ি (মহিষের গাড়ি) চড়ে আমার চৌদ্দ পুরুষের গ্রাম হরিনাপাটি থেকে লক্ষ্মীপুরের পথে ‘হিংগিদাইড়’ নামক একটি জায়গা পর্যন্ত গেছি। তখন ‘হিংগিদাইড়’ ছিলো একটি ছোটোখাটো নদীর মতো এবং সবসময় কাদাজল থাকতো। ওই ‘হিংগিদাইড়’ পারি দেওয়ার সময় গরুর গাড়ির কাঠের চাকা প্রায় সময়ই এটেল মাটির কাদাজলে আটকে যেতো। দুর্বল গরুর পক্ষে ওই কাদাজল থেকে আমাদেরসহ গরুর গাড়ি টেনে তোলা সম্ভব হতো না। আমরা ছেলের দল তখন গরুর গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে যেতাম। এরপর আমরা আর এগোতে সাহস করতাম না। আমরা ‘হিংগিদাইড়’ থেকে পায়ে হেঁটে হেঁটে দুষ্টুমি করতে করতে বাড়ি ফিরে প্রথমে আমাদের দিঘির পাড়ের সিঁড়িতে শরীর থেকে জামা প্যান্ট বিসর্জন দিয়ে দিঘির জলে সাঁতার কেটে গোসল করে ডুব দিয়ে খেলতে খেলতে চোখ লাল করেছি। এরপর পুকুরের পানিকে বিদায় দিয়ে উপরে উঠে মিষ্টি রোদে গা শুকিয়ে বাড়িতে গেছি। আমরা জাম গাছে চড়ে জাম পেড়ে জামায় মুছে মুখে পুরে খেয়েছি কবি জসীম উদ্দীনের কবিতার মতো- ‘পাকা জামের মধুর রসে / রঙিন করি মুখ।’ আমাদের ছোটোবেলায় গরুর গাড়িতে চড়ে হঠাৎ সামনে আসা ছোটো ছোটো পানি পূর্ণ নালা বা ছোটো নদী পার হওয়ার বিষয়টি ছিলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার মতো- “আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে / বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। / পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি / দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।’ এখনকার শহরে বেড়ে উঠা মানুষের গরুর গাড়ি চড়ার অভিজ্ঞতা নেই। এখন অবশ্য গ্রামেও আর গরুর গাড়ির দেখা মিলে না। সেইসব মাটি ঘেঁষে চলা সতেজ সময় আর নাই। বিজ্ঞানের গতিময়তা ও উন্নত প্রযুক্তির কাছে আমাদের দেখা কতোকিছু আমাদের হাত ধরেই অতীত স্মৃতি হয়ে গেছে। লেখক : কলামিস্ট ও সাহিত্যিক

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স