গতকালের (১ আগস্ট ২০২৪) দৈনিক সুনামকণ্ঠে সুনামগঞ্জের একজন সাংবাদিক লিখেছেন, “ছোট বড় ১৩৭টি হাওর এবং ২৬টি নদীবেষ্টিত জলেভাসা অনগ্রসর জনপদের ক’জন বাবা-মায়ের আর্থিক সামর্থ্য আছে যে নিজের সন্তানকে শহরে বা বড় শহরে বা মহানগরে খ্যাতনামা স্কুল-কলেজে পড়ালেখা শেখানোর। নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যাওয়া পরিবারের লোকজন ঠিক মতো তিন বেলা পেটপুরে খেতে পারে না।” ভাটি বাংলার এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, দেশের মেধাবীরা চাকরি পাওয়ার জন্যে চাকরিতে বৈষম্যনিরোধের আওয়াজ তোলে যে-আন্দোলনে নেমে সরকারের অবস্থা টালমাটাল করে তোলেছেন তাঁরা (মেধাভিত্তিক চাকরি প্রার্থী আন্দোলকরা) আসলে কারা? তাঁদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ভেতরে আসলে কি বৈষম্য লুকিয়ে নেই? তাতে নুন
আনতে পান্তা ফুরিয়ে যাওয়া মানুষদের কী পরিমাণ স্বার্থ আছে?
একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারা যায় যে, এই চাকরিতে বৈষম্যবিরোধী এই আন্দোলনের ভেতরে বৈষম্য লুকিয়ে আছে। জানা কথা, এই আন্দোলনের সফলতা মুষ্ঠিমেয় মেধাবীদের চাকরি নিশ্চিত করবে, যারা ধনী পরিবার থেকে আগত। কারণ দেশের ভেতরে নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায় যে-বিপুল সংখ্যক পরিবারের তাঁরা ঠিক মতো তিন বেলা পেটপুরে খেতে পারে না পর্যন্ত, সেইসব পরিবারের সন্তানরা মেধা তালিকায় নাম লেখানোর আগেই শিক্ষার সকল সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। তারা চাকরিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাফল্যের ফল ভোগ করতে গিয়ে মেধা তালিকায় কোনও দিনই অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। তাই বলে কি তাঁদের কোনও মেধা নেই বলে ধরে নিত হবে? এতে দেশের সকল মানুষের শিক্ষার্জনের ক্ষেত্রে কি বৈষম্য বাড়ছে না? এই পরিপ্রেক্ষিতে বুঝতে কষ্ট হয় না যে, অপেক্ষাকৃত অনুন্নত ও বিভিন্ন সুবিধাবঞ্চিত জেলা-উপজেলার শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়ে (চাকরি পাওয়া থেকে) প্রকারান্তরে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়িয়ে তোলছে। জেলা ও নারী কোটা সমৃদ্ধ নিয়োগ পদ্ধতি কীছুটা হলেও বৈষম্য দূর করার পক্ষে অনুকূল ছিল। আদালতের আদেশানুসারে হালে বহাল করা নারী ও জেলা কোটা বর্জিত নিয়োগ পদ্ধতি বরং বৈষম্যকে আর বাড়িয়ে তোলবে, কেবল সুবিধাভোগী ধনীর সন্তানেরা চাকরি পাবে। সুতরাং কোটা বহাল রাখার ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে, না হলে ধনীর সন্তান শিক্ষাসুবিধাসহ অন্যান্য প্রকারের যে-সকল সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে গরিবের সন্তানকেও সেসব-সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। রাজধানী বা অন্য কটি বিভাগীয় শহরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যে- সুযোগ-সুবিধা দেওয়া আছে সে সুযোগ-সুবিধা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের জেলা-উপজেলাগুলোতেও সমানভাবে দিতে হবে। পুঁজিবাদের দৈত্যকে ঘাড়ে তোলে রেখে তেমন সমান সুযোগ-সুবিধা কেউ দিতে পারবেন কি? পথে নেমে আন্দোলন করে সরকার পতনে হয়তো সফল হওয়া যাবে কিন্তু চাকরিতে বৈষম্য নিরসন কীছুতেই নয়। ন’মণ (৯ মণ) ঘিও হবে না, রাধাও নাচবে না।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha