সুনামগঞ্জ , বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫ , ১৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
১৫ হাওরে নির্মাণ হচ্ছে স্থায়ী ফসলরক্ষা বাঁধ জেলা কৃষিঋণ মেলা ও প্রকাশ্যে কৃষিঋণ বিতরণ অনুষ্ঠিত গর্ভবতী মায়েদের নিয়ে জনউদ্যোগের সচেতনতামূলক সভা ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের শীতবস্ত্র বিতরণ জগন্নাথপুরের নির্বাচন কর্মকর্তাসহ দু’জন সাময়িক বরখাস্ত চাইনিজ নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা ‘মানুষের উৎপাতে’ পাখি নেই টাঙ্গুয়ার হাওরে ফিমেইল একাডেমির সুনাম এখন দেশ-বিদেশে : সাবেক জেলা প্রশাসক জাফর সিদ্দিক জনগণের বিপক্ষে কাজ করলে ৫ আগস্টের মতোই পরিণতি হবে : তারেক রহমান জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ দু’জন কারাগারে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে অগ্রগতি বিষয়ে মতবিনিময় দেখার হাওরের বড়দৈ কাষ্ঠগঙ্গা বিল শুকিয়ে মাছ শিকার শান্তিগঞ্জে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, আহত ৫ হাফভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডা, সুবিপ্রবি শিক্ষার্থী আহত, সড়ক অবরোধ সিলেটে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ পুনঃস্থাপনসহ ৩০ দফা দাবিতে স্মারকলিপি সভাপতি মেহেদী হাসান, সম্পাদক তামিম রায়হান এফআইভিডিবি’র উদ্যোগে খাদ্য অধিকার নেটওয়ার্ক সভা মুক্তি ও স্পার্টাকাসের স্বপ্নময় পৃথিবী বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস পালিত পাগনার হাওরের জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নিলেন জেলা প্রশাসক

তাজ্জুদ আলীদের তাজ্জব ব্যাপার বন্ধ করো

  • আপলোড সময় : ২৮-১০-২০২৪ ০৯:২৬:৩৪ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৮-১০-২০২৪ ০৯:২৬:৩৪ পূর্বাহ্ন
তাজ্জুদ আলীদের তাজ্জব ব্যাপার বন্ধ করো
গত রবিবারে (২৭ অক্টোবর ২০২৪) গণমাধ্যমান্তরে প্রকাশিত একটি সংবাদপ্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘তাজ্জুদ আলী, তাজ্জব সীমান্তবাসী’। তবে এতে কোনও তাজ্জব ব্যাপার-স্যাপার প্রকাশিত হয়নি বলে অনেকের ধারণা। কারণ বর্তমান সমাজবাস্তবতায় তাজ্জুদ আলী ও তার ছেলেরা ব্যক্তিগত সম্পদসঞ্চয়ের সহজ পথ বেছে নিয়েছে মাত্র এবং প্রতিষ্ঠিত আর্থসামাজিক ব্যবস্থার পরিসরে এটাই স্বাভাবিক, প্রচলিত আইনের দৃষ্টিতে সেটা যতোই অপরাধ বলে পরিগণিত হোক না কেন। যখন বৈধ উপায়ে বেঁচে থাকার পথ বন্ধ হয়ে যায় তখন বেঁচে থাকতে হলে তো অবৈধ পথ অবলম্বন করতেই হবে। এই যুক্তিটি শুনতে যতোই খারাপ লাগুক না কেন আমাদের দেশের সীমান্ত এলাকার মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে কর্মসংস্থানের প্রকট অভাবকে স্বীকার করে নিতেই হবে, উপেক্ষা করা যাবে না। সীমান্তবর্তী লোকে কীছু করার পায় না বলেই ‘বেলেকি’ হয়ে যায়, দেশের ভেতরে যেমন ভাত পায় না বলেই অনেকে অপরাধী হতে বাধ্য হয়। সুনামগঞ্জে চোরাচালানকে ‘বুঙ্গা’ বা ‘বুঙ্গার কারবার’ বলা হয়। এই অর্থে ইংরেজি ‘ব্ল্যাক’ থেকে কারবারটিকে ‘ব্ল্যাক করা’ এবং চোরাচালানীদেরকে লোকে ‘বেলেকি’ও বলে। আমাদের দেশের তিন দিকে ভারত এবং বিগত শতকের সাতচল্লিশোত্তর কাল থেকে ভারত আমাদের দেশটিকে তার কীছু কীছু পণ্যের অপরিবর্তর্নীয় বাজার করে রেখেছে। যেমন এই দেশে সাতচল্লিশের দেশভাগের পর থেকে ‘বাদশার বাদশাহী চলে’ অর্থাৎ নাসরুদ্দিন (মুঘল বাদশা) বিড়ির চোরাকারবার কখনওই বন্ধ হয় নি এবং হবেও না কোনও দিন। পুঁজিবাদী অর্থনীতির সঙ্গে তাল রেখে কালক্রমে এই তুচ্ছ নাসিরুদ্দিন বিড়ি থেকে শুরু করে এখন মদ, গাঁজা, স্বর্ণ, হেরোইন, ইয়াবা ইত্যাদি হরেক রকমের মালামালের চেরাচালানের স্বর্গরাজ্যে পর্যবসিত হয়েছে দেশ, হয়েছে চোরাচালানের আন্তর্জাতিক বিপণনের পথ। কেউ স্বীকার করুন আর না করুন প্রকৃত অবস্থা কিন্তু তাই। এমন কি রীতিমতো চক্র গড়ে তোলে মানুষ পাচার হচ্ছে দেশ থেকে, ফেরানো যাচ্ছে না। প্রশাসন এইসব বেলেকিদের চেনে না এমন তো নয়। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নিতে পারে না। প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়েছে, “সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল একে এম জাকারিয়া কাদির বললেন, সীমান্তের অপরাধীদের একটি তালিকা পুলিশ সুপারকে দিয়েছি আমরা। এরমধ্যে সাইকুল ইসলাম অন্যতম। সে চোরাচালান ব্যবসার গডফাদার। সীমান্তের দেড়শ গজ সীমানার মধ্যে সে বিজিবি’র উপস্থিতিতে কখনোই যায় না। অন্য লোকদের দিয়ে ব্যবসা করায়। এজন্য বিজিবি তাকে আটক করতে পারে নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর পুলিশ তাকে আটক করেছিল। হাতকড়াসহ পালিয়েছে সে এই তথ্য পুলিশ সুপারের কাছ থেকে জেনেছি। আমরাও সীমান্তে এই ম্যাসেজ পাঠিয়েছি।” কথা হলো, একজন বেলেকিকে ধরায় দায়িত্ব কি কেবল ‘বিজিবি’র উপরই থাকবে? থানার তৎপরতা বাড়বে না কেন এবং কেন স্থানীয় প্রশাসনের কোনও কর্তব্য তাতে থাকবে না? এমন প্রশ্ন যদি নিরর্থক হয় অর্থাৎ দায়িত্ব যদি তাদের থাকে যদি থাকে তবে তারা যথাযথ পর্যায়মাত্রায় তৎপর হবেন না কেন? এইসব উৎকট প্রশ্নের উত্তর অনেকের কাছে অনেক প্রকারের। কিন্তু কারও কারও ধারণায় প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন স্বার্থান্ধ মানুষেরা সমাজের অধিপতি হয়ে বসেছে। তারা টাকার বিনিময়ে সব আইন ও শাসনপ্রশাসন ইত্যাদি সবকীছু ম্যানেজ করে এবং এইভাবে সমাজের ভেতরে যাচ্ছেতাই করার রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। তারা জানে, ব্যক্তিগত সম্পদের পাহাড়ের চূড়ায় অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার উদ্ভব ঘটে, তার শক্তিতে তৈরি হয় সামাজিক চক্র। তাজ্জুদ আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম এই ক্ষমতার অধিকারি হয়েছে। তাকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যে ১৫০ জন তৎপর হয়েছে, বিপরীতে পুলিশের পক্ষে দেড়জনও কোনও তৎপরতা দেখায় নি। তাজ্জুদ আলীর তাজ্জব ব্যাপার দেশের সর্বত্রই ঘটে চলেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্য নিরসনের বাসনা দেশের মানুষ ব্যক্ত করেছেন, শেখ হাসিনা বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারকে উপেক্ষা করে ডিম সিন্ডিকেট ২০ দিনে ১২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর থেকে বর্তমান মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত এই স্বল্প সময়ে সুনামগঞ্জের বালুখেকোরা ১০০ কোটি টাকার বালু লুট করেছে। মনে হচ্ছে, যে-সরকারই আসুক তাতে কীছু যায় আসে না, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার বিপরীতে সব রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি যেমন প্রতারণায় পর্যবসিত হয়ে এসেছে তেমনিই হবে। তাজ্জুদ আলীদের তাজ্জব ব্যাপার দেশের সর্বত্রই চলছে এবং চলবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স