ধোপাজান-চলতি নদী কিছুতেই থামছে না বালু-পাথর লুট
- আপলোড সময় : ২০-১০-২০২৪ ০৩:০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২০-১০-২০২৪ ০৩:০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাধীন ইজারাবিহীন ধোপাজান-চলতি নদীতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু-পাথর লুটপাট অব্যাহত রয়েছে। অপরদিকে, প্রকাশ্য দিবালোকে সুরমা ইউনিয়নের মইনপুর গ্রামের সুরমা নদীরপাড় যেন ‘পাথর ডিপোতে’ পরিণত হয়েছে। এখানেই চলছে ক্র্যাশারে পাথর ভাঙা, নৌকায় লোড করার ব্যবসা। বালু-পাথর লোড করতে অর্ধশত বেল্ট স্থাপন করে নির্বিঘেœ অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এখন চলতি নদীতে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভিন্ন পথ অবলম্বন করে জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন সিন্ডিকেটের ৫ জন ব্যবসায়ী। তারা হলেন কবির আহমদ, জাইদ হোসেন, সন্তোষ দাস, ফয়েজ মিয়া ও জাকির হোসেন। তাদের দায়িত্ব হলো মইনপুর গ্রামে আসা বালু-পাথর বেচাকেনা এবং ক্র্যাশার মেশিনে পাথর ভেঙে বিক্রি করা। এই ব্যবসার আড়ালে রয়েছেন আরও একাধিক ব্যক্তি। তাদের দায়িত্ব হলো দিনে ও রাতে সুযোগ পেলেই ড্রেজার চালানোর নির্দেশনা দেয়া, চলতি নদীর পাড়ে উত্তোলিত স্তূপকৃত পাথর পিকআপ ও ট্রলিতে করে শহীদ মিনারের পাশের সড়ক দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের উপর দিয়ে চৌমুহনী হয়ে সুরমা ইউনিয়নের কৃষ্ণনগরের সড়ক পথ ব্যবহার করে বেরীগাঁও হয়ে হালুয়ারঘাট পর্যন্ত নিরাপদে পৌঁছে দেয়া। পরে যানবাহনের চালকগণ মইনপুর গ্রামে নিজ দায়িত্বে পাথর নিয়ে পৌঁছেন। সড়ক পথের বিভিন্ন স্থানে এই সিন্ডিকেটের অর্ধশত লোক অবস্থান করে নিরাপদে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ‘ম্যানেজ’ করার দায়িত্বে রয়েছেন সিন্ডিকেটের একাধিক ব্যক্তি।
স্থানীরা জানান, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার অংশে নদীপথ ও সড়কপথে এতোদিন দিনে ও রাতে সময় সুযোগে ড্রেজার মেশিন চালিয়ে পাথর উত্তোলন করে বাল্কহেড ও ‘পঙ্গপাল’ নামক যানবাহন ভর্তি করে অবাধে বেচাকেনা করা হতো। এখন দিনের বেলায় বন্ধ থাকলেও রাতের বেলায় ড্রেজার দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে নদী থেকে। রাতের বেলায় নদী পথে পাথরবাহী নৌযান আসা-যাওয়া করছে বলেও জানান স্থানীয়রা।
সুরমা নদীরপাড়ের সরকারি জায়গা অবৈধভাবে ভাড়া :
মইনপুর গ্রামের একাধিক বাসিন্দা তাদের দখলীয় নদীরপাড় এলাকার জায়গা পাথর ব্যবসায়ীদের নিকট বাৎসরিক হিসাবে অবৈধভাবে ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা কামাচ্ছেন। কিন্তু এই ব্যবসার জায়গা দেওয়ার কারণে এলাকার হাজারো পরিবার নোংরা পরিবেশে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। যারা পাথর ব্যবসার জন্য জায়গা ভাড়া দিয়ে লাভবান হচ্ছেন তারা হলেন- আনোয়ার হোসেন, পিতা মৃত হারিছ আলী, নায়েব আলী, পিতা মৃত আব্দুল গণি, কুদরত আলী, পিতা মৃত আলম উল্লাহ।
যানবাহন চলাচলের কারণে নানা সমস্যা :
বালু-পাথরবাহী এসব যানবাহন চলাচলে দিনে দিনে নানা সমস্যা বৃদ্ধি হচ্ছে। রাস্তা-ঘাটের বিনাশ ঘটছে। প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হাজারো মানুষ। সড়কে বেপরোয়া চলাচলের কারণে নানা দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। ট্রলি ও পিকআপের শব্দে কাঁপছে এলাকা। সড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানজটের কবলে পড়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, চাকুরীজীবি এবং সাধারণ মানুষজন।
ক্র্যাশার মেশিন ও যানবাহনের শব্দে মানুষ অতিষ্ঠ :
ক্র্যাশার মেশিনের শব্দে মইনপুরবাসী এবং যানবাহনের বিকট শব্দে পুরো অঞ্চলবাসী অতীষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। সুরমা ও জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের রোগী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ, শিক্ষার্থীর লেখাপড়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে এবং রাতের ঘুম হারাম হয়েছে। যানবাহনের বিকট শব্দে ও চলাচলে প্রক¤িপত হচ্ছে এলাকার ঘর-বাড়ি। ঘর-বাড়িরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
দোকানীরা অতিষ্ঠ :
চৌমুহনী বাজারের দোকানী, ব্যবসায়ী, মীরেরচর পয়েন্টের ব্যবসায়ী, মঙ্গলকাটা বাজারের ব্যবসায়ী এবং হালুয়ারঘাট বাজারের ব্যবসায়ীরা বালু-পাথরবাহী বেপরোয়া যানবাহন চলাচলে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। তারা ব্যবসার কাজে মারাত্মক বাধার সম্মুখিন হচ্ছেন বলে জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এখানে ব্যবসা শুরু হওয়ার পর থেকে পুরো গ্রামের ক্ষতি হচ্ছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে শতাধিক ঘর। একটি প্রাইমারি স্কুল নদীতে বিলীন হয়েছে। আরও ঝুঁকিতে আছে ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, মসজিদ ও মাদ্রাসা। এটার প্রতিকার হওয়া জরুরি দরকার।
পথচারী রহিম আলী বলেন, বছরের পর বছর চলছে অবৈধ গাড়ি দিয়ে বালু-পাথরের অবৈধ ব্যবসা। এমনিতে পুলিশ আসে, প্রশাসনের লোক এই সড়ক দিয়ে চলাফেরা করে। কিন্তু কিছু বলতে দেখিনি।
দোকানী সাব্বির মিয়া বলেন, পাথরবাহী ট্রলি, পিকআপ চলাচলের কারণে সড়কের পাশে নিরাপদ নই আমরা। ধুলো-বালি উড়ে জিনিসপত্রে পড়ে। দোকানে বসে কথাও বলা যায় না। ফায়দা লুটতে প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে। আমাদের বিচার চাওয়ার জায়গা নেই।
সুরমা ইউপি সদস্য আব্দুল হাই বলেন, ক্র্যাশার মেশিন ও ট্রলির শব্দে আমাদের এলাকার মানুষ সড়কে চলাচলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। রোগী ও শিশুরা মারাত্মক অশান্তিতে ভুগছেন। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার পেতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করবো।
ইউপি সদস্য ফিরোজ মিয়া বলেন, মানুষ চলাচল সড়কে পাথরবাহী ট্রলি ও পিকআপ চলাচলের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে। এতে মানুষের ভোগান্তি হয়। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এখনই প্রয়োজন।
সুরমা ইউপি চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা বলেন, আমাদের সুরমা ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাট ভাঙছে বেপরোয়া ট্রলি ও পিকআপ চলাচলে। দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এসব অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধ হচ্ছে না। কয়েক জন ব্যবসায়ীর কারণে কোটি কোটি টাকার রাস্তা-ঘাটের বেহাল অবস্থা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ ডিবি পুলিশের ওসি আমিনুল হক জানান, মইনপুর সুরমা নদীর তীরে ধোপাজান চলতি নদীর পাথর ডা¤িপং করা হচ্ছে, এইমাত্র জানলাম। তবে খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. নাজমুল হক জানান, হালুয়ারঘাট মইনপুরে সুরমা নদীর তীরে ধোপাজান চলতি নদীর অবৈধ পাথর ডা¤িপং করা হয়। তা আমার জানা নেই। তবে আপনার কাছ থেকে এইমাত্র জানলাম। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ