সরকারি ঘরের জামানতের কথা বলে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
হোসাইন আহমদ ::
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সুনামগঞ্জ জেলাসহ সারাদেশে ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ করে দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সে সময় সরকারি ঘরের জামানতের
কথা বলে ভূমিহীন ৩টি হতদরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে শান্তিগঞ্জ উপজেলার ১নং শিমুলবাক ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাসেল আহমদসহ তার সহযোগী একই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। ইউপি সদস্য রাসেল আহমদ শিমুলবাক ইউনিয়নের মুক্তখাই গ্রামের খলিলুর রহমানের পুত্র এবং তার সহযোগী আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান একই গ্রামের মৃত ফজর আলীর পুত্র।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সদস্যরা জানান, দুই বছর আগে ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণের জন্য জামানতের কথা বলে ৭০ হাজার টাকা করে ৩টি হতদরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং খরচ বাবদ আরো ৩ হাজার টাকা করে ৯ হাজার টাকা নেন ওই ইউপি সদস্য ও তার সহযোগী আওয়ামী লীগ নেতা। কথা ছিল ঘর হস্তান্তরের দুই বছর পর টাকা ফেরত দেওয়ার। হতদরিদ্র ৩টি পরিবারের কাছে ঘর ও দলিল হস্তান্তরের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ও তার সহযোগী আওয়ামী লীগ নেতা ঘরের জামানতের কথা বলে ৩টি হতদরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে নেওয়া ২ লাখ ১০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। টাকা ফেরত চাইতে গেলে উল্টো গালাগাল করেন ইউপি সদস্য রাসেল আহমদ ও তার সহযোগী আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী ৩টি ভূমিহীন হতদরিদ্র পরিবারের। তারা বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ধার দেনা করে টাকা দিয়েছি। এখন দিনমজুরির করে সেই ধারদেনা পরিশোধ করছি।
ভূমিহীন ভুক্তভোগী মুক্তখাই গ্রামের ঝলক মিয়া বলেন, রাসেল আহমদ মেম্বার আমাদেরকে সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে প্রথমে ৩ হাজার টাকা খরচ বাবদ নেয়। পরে সরকারি ঘর আমাদের নামে বরাদ্দ হয়েছে এবং ঘরের জামানত হিসেবে (সিকিউরিটি) ঘর প্রতি ৭০ হাজার টাকা দিতে বলে। উক্ত টাকা দুই বছর পর মেম্বারের মাধ্যমে ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেয়। আমরা সরল বিশ্বাসে টাকা রাসেল আহমদ মেম্বার ও তাহার সহযোগী আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুরকে দেই। ঘর পাওয়ার দুই বছর পর আমাদের জামানতের টাকা ফেরত চাইলে তারা দেই দিচ্ছি বলে সময় নিতে থাকে। পরে উপজেলা সদরে সরকারি ঘর বাস্তবায়নকারী অফিসারের নিকট থেকে জানতে পারি, সরকারি ঘর আমাদেরকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। এতে কোন জামানতের টাকা লাগে না। আমাদের টাকা ইউপি সদস্য রাসেল আহমদ ও আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান আত্মসাৎ করেছেন। এখন টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে টালবাহানা করছে।
ভূমিহীন ভুক্তভোগী মুক্তাখাই গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিনের স্ত্রী মোছা. রুফেদা বেগম বলেন, আমরা ভূমিহীন গরীব মানুষ। সরকারি ঘর দিবে বলে রাসেল মিয়া ও আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুরকে আমি টাকা দিছি। সরকারি ঘর পেয়েছি। জামানতের টাকা ফেরত পাই নাই। পরে জানিতে পারি, রাসেল মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর জামানতের কথা বলে আমাদের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করেছে।
এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ উপজেলার ১নং শিমুলবাক ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাসেল আহমদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা নেননি বলে দাবি করেন তিনি। ঘর ঘর পাওয়া ব্যক্তিদের গোষ্ঠীর সাথে পূর্ব বিরোধ ও মামলা মোকদ্দমা রয়েছে। তাই তারা দীর্ঘদিন পর আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের জন্য আমাকে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি, এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমানের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা বলেন, শান্তিগঞ্জে মুজিব শতবর্ষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার নাম করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পেলে সেটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ