সুনামগঞ্জ , রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫ , ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
পাঁচ গুণিজনকে সম্মাননা প্রদান ‘রাজসাক্ষী’ হিসেবে শর্তসাপেক্ষে চৌধুরী মামুনকে ক্ষমা করা যেতে পারে : ট্রাইব্যুনাল ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়ে যায়নি, স্পষ্ট হচ্ছে অদৃশ্য শত্রু : তারেক রহমান চার উপজেলায় এসিল্যান্ড নেই, দুর্ভোগে সেবাপ্রত্যাশীরা শহরের খাল উদ্ধারে ফের শুরু হচ্ছে অভিযান তাহিরপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০ এনসিপি’র সুনামগঞ্জ জেলা সমন্বয় কমিটি গঠন অপহরণের ১৪ দিন পর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ব্যবসায়ীকে উদ্ধার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতার বিরুদ্ধে টিআরের বরাদ্দ আত্মসাতের অভিযোগ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে অক্টোবরে আসামি থেকে রাজসাক্ষী : সুবিধা-অসুবিধা জুয়া ও মাদকে সয়লাব শ্রীপুর বাজার জগন্নাথপুরে এমপি প্রার্থী এমএ কাহারের সমর্থনে লিফলেট বিতরণ অবসরপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি ১ কোটি ৬২ লাখ টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ আমরা ফ্যাসিস্টমুক্ত দেশ গড়তে চাই : আরিফুল হক চৌধুরী নিত্য যানজটে ভোগান্তি শহরবাসীর জেলায় পাসের হার ৬৮.৪৬%, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪১৭ জন বিএনপিতে দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই হবে না : কামরুজ্জামান কামরুল শিক্ষক সংকটের মধ্যে আরো ৫ জন বদলি!

নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে সুরমা ভ্যালি পার্ক

  • আপলোড সময় : ২৮-০৯-২০২৪ ০৯:৩১:২৯ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৮-০৯-২০২৪ ০৯:৩১:২৯ পূর্বাহ্ন
নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে সুরমা ভ্যালি পার্ক
আকরাম উদ্দিন :: দেশের দীর্ঘতম নদী আঁকাবাঁকা সুরমার মনোরম পরিবেশে সুনামগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে হালুয়ারঘাট এলাকায় ৭ একর জায়গার উপর অবস্থিত ‘সুরমা ভ্যালি ডিসি পার্ক’। এই পার্ক এলাকা থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দৃশ্যমান উঁচু উঁচু পাহাড়-টিলা দর্শন করা যায়। এমন স্থানে অবস্থিত এই পার্কের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় এই পার্কের নতুনভাবে উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের উদ্বোধন হয়। সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী। এরই ধারাবাহিকতায় পার্কের উন্নয়ন ও সংস্কারকাজের দায়িত্ব নেন সুনামগঞ্জের বর্তমান জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। ইতোমধ্যে সুরমা ভ্যালি ডিসি পার্কের সকল উন্নয়ন প্রায় শেষ হয়েছে। সুরমা ভ্যালি ডিসি পার্কে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দর্শনার্থীরা আগমন করছেন। সরকারি ছুটির দিনে বা অবসর সময়ে নির্মল পরিবেশে কিছু সময় কাটানোর জন্য বন্ধু-বান্ধব, সপরিবারে প্রকৃতিপ্রেমীরা এখানে আসেন। সুরমা ভ্যালি ডিসি পার্ককে কেন্দ্র করে আশপাশ এলাকায় দিনে দিনে লোক সমাগম বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা বাড়ছে। পার্কের আশপাশে অস্থায়ী দোকান পেতে বসতে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরাও সুযোগ খুঁজছেন। প্রতিষ্ঠালগ্নে এই পার্কের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আগমনকারী কিছু লোকের সৌজন্যম্যলক আচরণের কারণে নানা অনৈতিক কার্যকলাপের প্রচার ছিল, উঁচু গাছের ছায়া ছেড়ে নদীর কিনারে নিচু এলাকা ঘেঁষে প্রচ- রোদে ছাতা মেলে তরুণ-তরুণী অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতো, সুরমা নদীতে নৌকায় আসা-যাওয়া যাত্রীরা তা প্রত্যক্ষ করে লজ্জায় মুখ লুকাতেন। এছাড়া মাদকাসক্তদের বিচরণ ছিল পার্কটিতে। এসব কারণে পার্কটিতে আসতে বিমুখ ছিলেন দর্শনার্থীরা। তবে এবার জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠিত পার্কে এসব অনাচারের অবসান হয়েছে। জানাযায়, এবার পার্কের ভেতরে ও বাইরের এলাকায় দিনে ও রাতে সার্বক্ষণিক দায়িত্বশীল লোকজন অবস্থান করছেন। একই সাথে পার্কের ভেতরে ও আশপাশ এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে সি.সি ক্যামেরা। এসব নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং নানা খাতে ব্যয়ের কারণে পার্কে প্রবেশ ফিও চালু করা হয়েছে। এই পার্কের ভেতরে রয়েছে ২টি গোলঘর, ১টি নাগরদোলা, ২টি চরকি, ৬টি দোলনা, দর্শনার্থীদের বসার জন্য ২০টি বেঞ্চ, ১টি জাম্পিং, ২টি ছবি সেশন ফ্রেইম, ৫টি বসার ছনের ঘর, নারী ও পুরুষের আলাদা বাথরুমের ব্যবস্থা। হাওরবেষ্টিত বন্যাপ্রবণ এলাকা থাকায় শিশুদের সাঁতার শিখানোর জন্য রয়েছে স্বচ্ছ পানির ১টি মিনি সুইমিংপুল (চৌবাচ্চা), ফুল গাছে সাজানো ফ্লাওয়ার ফেস্টিবল মাঠ। পার্কের বাইরে করা হচ্ছে দর্শনার্থীদের যানবাহন পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা। পরামর্শ : ১. সুরমা ভ্যালি ডিসি পার্কে দর্শনার্থীদের আগমন বাড়াতে প্রয়োজন পার্কের সামনের সড়কের প্রশস্ত পাকাকরণ, যাতে সহজে যানবাহন পার্কের গেইটের সামনে যেতে পারে। ২. শহরের উকিলপাড়া এলাকার রিভারভিউ থেকে দর্শনার্থীদের জন্য নৌভ্রমণ পরিবহনের ব্যবস্থা করা। এই নৌপরিবহন সরাসরি সুরমা ভ্যালি ডিসি পার্কে আসা ও যাওয়ার ব্যবস্থা করা। ৩. পার্কের সামনে সীমিত সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ দোকানের বসার স্থান নির্ধারণ করা। ৪. নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা করা। ৫. পার্কের ভেতরে ধূমপান নিষিদ্ধ করা। দর্শনার্থীদের প্রত্যাশা : সুরমা ভ্যালি ডিসি পার্ক দর্শনার্থীদের সঠিক সেবা দিতে পারলে সুনামগঞ্জ অতি অল্প সময়ে দেশ-বিদেশে সুপরিচিতি লাভ করবে। বাইরের দর্শনার্থীদের নিরাপদ সময় কাটানোর স্থান হিসেবে পরিচিতি পাবে। কর্ম শেষে পরিবারবর্গ নিয়ে নিরাপদে সময় কাটানোর একটি সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হবে। পরিবার নিয়ে পার্কে বেড়াতে আসা অবসরপ্রাপ্ত মো. আব্দুল কাদির বলেন, জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নকাজ হওয়ায় আজকে পার্কে আসতে আর ভয় হয় না। খুবই ভাল লাগছে, আনন্দ লাগছে। পার্কের পরিবেশ এভাবে থাকলে দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। সানজিদা আক্তার বলেন, আগে পার্কে আগে দুই-এক বার আসছিলাম, ভয় পেয়েছি। এখন আসতে ভয় পাই না। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা আছে। পার্কের দায়িত্বে লোকজনও আছেন। খুবই ভাল লাগছে। সুরমা ভ্যালি পার্কে বেড়াতে আসা জাউয়াবাজার ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক দুলাল মিয়া বলেন, সুরমার মনোরম পরিবেশে এই একমাত্র পার্ক। এবার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চালু হয়েছে। সি.সি ক্যামেরাও লাগানো হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ায় এখন পরিবার নিয়ে আসলেও সমস্যা নেই। কিন্তু আগে সুষ্ঠু পরিবেশ ছিল না। তিনি সবসময় পার্কের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। পার্কের ঠিকাদার আলমগীর হোসেন বলেন, পার্কের উন্নয়নকাজ আরও রয়েছে। সব কাজ শেষ হবে সপ্তাহখানেকের মধ্যে। নারী পুরুষ শিশু সবাই আসতে পারেন, কোনো সমস্যা নেই। সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পার্ক রক্ষণাবেক্ষণের লোকজন দিনে ও রাতে থাকেন। একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে আরও কাজ হবে। জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, সুরমা ভ্যালি ডিসি পার্ক ঢেলে সাজানো হয়েছে। আরও কাজ হবে। একটি সবুজ পার্কে রূপান্তর করা হবে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও ফুলের গাছে ভরে দেয়া হবে পুরো পার্ক এলাকা। পার্কে প্রবেশের রাস্তায় কাজ করা হবে, যাতে দর্শনার্থীদের গাড়ি পার্কের সামনে চলে আসতে পারে। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি নির্জন স্থান হবে পার্ক এলাকা। শিশুরা খেলাধুলা করতে পারবে, পাশাপাশি সাঁতার শেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, শহরের উকিলপাড়া এলাকায় রিভারভিউ থেকে সুরমা ভ্যালি ডিসি পার্ক পর্যন্ত দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্য নৌপরিবহন চালুর পরিকল্পনা আছে। তিনি আরও বলেন, সুরমা ভ্যালি ডিসি পার্কে কোনো অনাচার করার সুযোগ নেই। সি.সি ক্যামেরার আওতায় পুরো পার্ক ও আশপাশ এলাকা রয়েছে। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটাকে জেলার একমাত্র বৃহৎ পার্কে রূপান্তর করা হবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স