সুনামগঞ্জ , মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫ , ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
মরা চেলা নদীতে বালুখেকোদের তান্ডব, হুমকিতে রোপওয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প টাঙ্গুয়ার হাওর জলাভূমি বাস্তবায়ন প্রকল্পের সম্প্রদায়ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কর্মশালা সুনামগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাড. আব্দুল হকের প্রচারণা শুরু দেশ বদলাতে চাইলে নিজেকে বদলাতে হবে : বিভাগীয় কমিশনার এক মাসে জব্দ প্রায় ১৫ কোটি টাকার অবৈধ পণ্য জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়ক সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন পথে যেতে যেতে : পথচারী সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা বজ্রপাতের ঝুঁকিতে সুনামগঞ্জ শীর্ষে বন্ধ করা হলো সেই গ্যাস পাইপ লাইনের লিকেজ আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখছে সুনামগঞ্জের ইমা হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সে গ্রাহক হয়রানি, বছরের পর বছর ঘুরেও মিলছে না বীমার টাকা পাকিস্তানে আত্মঘাতী হামলায় ১৬ সেনা নিহত টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষায় কাজ করবে সরকার: মহাপরিচালক শহরে সক্রিয় মাদক কারবারিরা চোখের সামনে বিলীন হচ্ছে ভিটেমাটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে মানববন্ধন অ্যাড. নুরুল ইসলামকে ফতেপুর বিএনপি নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন আধিপত্য নিয়ে লড়াইয়ের অবসান চান গ্রামবাসী কাজ না করেই তিন প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

রাষ্ট্রসংস্কার যেন রাষ্ট্রের পোশাক বদল না হয়ে যায়

  • আপলোড সময় : ২৫-০৯-২০২৪ ১২:০৯:৫২ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৫-০৯-২০২৪ ১২:০৯:৫২ পূর্বাহ্ন
রাষ্ট্রসংস্কার যেন রাষ্ট্রের পোশাক বদল না হয়ে যায়
চলচ্চিত্রের কোনও এক মাফিয়ার প্রতিপালিত মস্তান কোনও এক প্রতিবাদী ব্যক্তিকে খুন করলো। একটি শিশু ঘটনা ক্রমে সে-খুন করার দৃশ্যটি দেখে ফেললো। এই জন্য শিশুটিকেও খুন করে ফেললো মস্তান। খুনের কোনও সাক্ষী থাকুক সেটা মস্তান চায় না। অথবা প্রকাশ্য দিবালোকে জনসমক্ষে তুচ্ছ কারণে কাউকে খুন করলো পরাক্রান্ত এক সমাজবিরোধী, জিজ্ঞাসিত হয়ে সৎ পুলিশের কাছে কেউ খুনের কথা স্বীকার করলো না, মুখে তালা মেরে রইলো। একজন অন্তঃসত্ত্বা পতিতাকে পতিতাবৃত্তির অপরাধে যুবকেরা মারধর করলো দিন-দুপুরে বাজারের রাস্তায় ফেলে, কেউ এগিয়ে এলো না। একজন নারী বুদ্ধিজীবী তাঁর প্রবন্ধে প্রশ্ন তোললেন, ওদেরকে এমনভাবে মারবেন কেন? একটি আট-নয় বছরের ছেলে চায়ের দোকানে চাকরি করে। সে একজন খদ্দেরকে চা দিয়েছে। খদ্দের চায়ের পিরিচে উপচে পড়া চা দেখে রেগে গিয়ে ছেলেটির পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিয়ে মেরে ফেললো, বাজারের মানুষ ভয়ে নির্বিকার রইলো। মেয়েটি সুন্দরী ছিল বলে সে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হলো, সমাজ তার পক্ষে দাঁড়ালো না, আইন অভিযোগের অপেক্ষায় রইলো, অভিযোগ করতে মেয়েটি বা তার স্বজনরা থানা পর্যন্ত যেতে পারলো না, পথে প্রতিহত হয়ে ফিরে এলো এলাকা ছাড়ার পরোয়ানা ঘাড়ে নিয়ে। গত কদিন আগে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অতিথিশালায় একজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো চুরির অভিযোগে। গত রোববার (২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪) রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের এক নবীন শিক্ষার্থীকে মানসিক নির্যাতন ও মারধর করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মার্কেটিং বিভাগের দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। এইসব ঘটনা সমাজ পরিসরে সৃষ্ট সামাজিক সম্পর্কের ভেতরে মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব বর্তমানের তাৎপর্যকে তোলে ধরে। ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে যেমন এই দ্বন্দ্ব বিদ্যমান তেমনি বৃহৎ পরিসরে সম্প্রদায়, শ্রেণি, রাজনীতিক দল-প্রতিষ্ঠানের ভেতরেও এই পারস্পরিক দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। তার প্রতিফলন ঘটে রাষ্ট্রের আধারে রাজনীতিক দ্বন্দ্বিকতার ভেতরে, যা জনশ্রেণিগুলোর পারস্পরিক দ্বন্দ্বসংঘাতের রাজনীতিক প্রতিরূপ। এই কারণে রাষ্ট্রের ভেতরে পুলিশ, সমরসেনা, আমলা ইত্যাদি প্রশাসনিক জনবল তৈরি হয়েছে এবং জাতীয় সংসদ নামের একটি রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব ঘটেছে। বলতে ভালো ঠেকায় না বটে, কিন্তু অকাট্য সত্য বলার খাতিরে বলতেই হয় যে, প্রকারান্তরে মানুষের মধ্যে বৈরিতা-বিদ্বেষ এভাবেই বিস্তৃত হয়েছে। উৎপাদন সম্পর্ক বলে একটা কথা আছে। সেটা হলো : মানুষ যা কীছু ব্যবহার বা ভোগ করে তার উৎপাদন, বণ্টন, বিনিময় ও ভোগের সামগ্রিকতা। মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার তোয়াক্কা না করে এই উৎপাদন সম্পর্কের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে একটি সামাজিক সম্পর্ক দানা বাঁধে। মুনাফানির্ভর পুঁজিবাদী অর্থনীতির চালিকাশক্তি হলো শ্রমিকের শ্রমজাত উদ্বৃত্তমূল্য শোষণ। এই কারণে পুঁজিবাদী সমাজসাংস্থিতিক পরিসরে সামাজিক সম্পর্কের পাটাতনে উদ্ভূত হয় শ্রেণিবৈষম্যের অনিবার্য বাস্তবতা। উদ্ভূত এই সামাজিক সম্পর্কটা অবশ্যই একটি দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক বা বৈরসম্পর্ক। এই মূলগত বৈরিতা থেকে পুঁজিবাদী সমাজের মানুষ মনোগতভাবে এক অন্যের সহমর্মী নয় বরং পরস্পর বিদ্বেষী। এমতাবস্থায় সমাজে কাঠামোগত সহিংসতার বিস্তার ঘটে। উপরে যে-সহিংসতার কয়েকটি দৃষ্টান্ত হাজির করা হয়েছে মাত্র। এই সকল সহিংসতার পুরো বিবরণ দিতে গেলে কয়েক লক্ষাধিক বাক্য সন্নিবেশিত করেও শেষ হবে না। আমরা আমাদের সমাজসংস্কৃতিকে এভাবেই গড়েপিটে বানিয়ে দিয়েছি। তার প্রতিফলন আমরা দেখেছি বিগত সরকারগুলোর শাসনামলে, যেখানে দুর্নীতির বিস্তার এতোটাই ঘটেছিল যে, শেষ পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে সরকারের পতন অনিবার্যতা পেয়ে গেছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রসংস্কারের প্রশ্ন উঠেছে এবং কেউ কেউ বলছেন, শান্তি ও নিরাপত্তা পেতে এবং বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্য অর্জনে সেটা করতেই হবে। কারণ তাঁরা রাষ্ট্রকে আপাতত নিপীড়নযন্ত্রের বেশি কীছু ভাবতে পারছেন না। আবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে রাষ্ট্রসংস্কার শেষ পর্যন্ত পোশাক পাল্টানোর মতো একটি বিষয় হয়ে পড়বে এবং তেমন যদি হয় তবে আমরা মনে করি : রাষ্ট্রসংস্কারের কোনও প্রয়োজন নেই, আর্থনীতিক সম্পর্ক তথা সামাজিক সম্পর্কটাকে বদলে দিন। আর্থনীতিক সম্পর্ক বদলে গেলে রাষ্ট্র এমনিতেই বদলে যাবে, অর্থাৎ রাষ্ট্রসংস্কার হয়ে যাবে। মোট কথা : রাষ্ট্রসংস্কার মানে সামাজিক সম্পর্কের বদল। সুতরাং রাষ্ট্রসংস্কারের নামে রাষ্ট্রের পোশাক বদল করতে যাওয়া যাতে না হয় তার দিকে খেয়াল রাখুন।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য

সর্বশেষ সংবাদ