শহীদনূর আহমেদ ::
সীমান্তের বিভিন্ন চোরাই পথ দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে গরু-মহিষের চালান। আর এসব অবৈধ গরুর বৈধতা দিচ্ছে বিভিন্ন পশুর হাটের অসাধু ইজারাদাররা।
অনুসন্ধানে জানাযায়, অবৈধভাবে সীমান্তের ওপার থেকে আসা গরু-মহিষ এপারে এসে স্থানীয় হাটে তুললেই ইজারাদারদের হাসিল রশিদ মূল্যে বৈধতা পায়। আর এই কাগজের বলেই ভারতীয় গরু-মহিষ পরিবহনের মাধ্যমের পাঠিয়ে দেয়া হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
সুনামগঞ্জের সাথে ভারতের সীমান্ত রয়েছে ১২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে মধ্যনগর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, সদর উপজেলা ও দোয়ারাবাজার উপজেলার অন্তত ৩০টি সীমান্ত স্পটে চোরাকারবারের সাথে যুক্ত রয়েছেন স্থানীয় সিন্ডিকেট। সম্প্রতি দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর, বাংলাবাজার, বোগলা, লক্ষ্মীপুরসহ চারটি ইউনিয়নে ১৫টি গোপনপথে চোরাকারবার সংঘটিত হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, দোয়ারাবাজার উপজেলার পেকপাড়া, জুমগাঁও, আরমান ছড়া, বাগানবাড়ি, গাছগড়া, ভাঙ্গাপাড়া, কলাউড়া, শ্রীপুর, শ্যামারগাঁও, চাইরগাঁও, ঘিলাতলি, মাঠগাঁও, মৌলারপাড়, কলোনী সীমান্ত, শ্যামারপাড় দিয়ে গরু-মহিষসহ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য অবৈধভাবে নিয়ে আসছে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি চক্র।
স্থানীয়রা জানান, কাঁটাতারের বেড়া নেই সীমান্তের ১২৩৪ থেকে ৩৬ পিলার পর্যন্ত। এসব এলাকা দিয়ে অবাধে প্রবেশ হয় অবৈধ পণ্য। চোরাকারবারিদের রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত সীমান্তের মৌলারপাড়, পেকপাড়া, কলাউড়া, বাগানবাড়ি, শ্যামারগাঁও, ঘিলাতলি। এসব এলাকা দিয়ে বিগত কয়েক মাস ধরে দেদারসে নামছে ভারতীয় গরু, মহিষ ও ছাগল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সীমান্তের পানি নিষ্কাশন পোল বা ড্রেন, সুড়ঙ্গ, কাঁটাতারের গোপনপথ দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নামানো হয় গরু ও মহিষের চালান। গরু বা মহিষ প্রতি ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা চাঁদা দেয়া হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত অসাধু ব্যক্তিদের। নিরাপদে পশু নিয়ে আসতে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন চোরাই শ্রমিক এজেন্টরা। গরু, মহিষ বাংলাদেশে প্রবেশ করালে পশুপ্রতি ১০০০-১২০০ টাকা পান শ্রমিকরা। অবৈধ এসব পশু সীমান্ত পার হওয়ার পূর্বে স্থানীয় গরুর হাটের হাসিল রশিদ হোয়াটসঅ্যাপে পেয়ে যায় চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। এই রশিদের বলে গরু বাজারে তোলে কেনাবেচার মাধ্যমে এর বৈধতা পেয়ে যান চোরাই গরু সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা। আর এই কাজটি নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় প্রভাবশালী ও হাটের ইজারাদার চক্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, দোয়ারাবাজারে এখন বেশি ভারতীয় গরু মিলে। স্থানীয় গরুর হাটকে কেন্দ্র চোরাকারবারি চক্র সক্রিয় রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় যতো হাট রয়েছে সবগুলোতে ভারতীয় গরু উঠে। এই অবৈধ ব্যবসার সাথে বিভিন্ন হাটের অসাধু ইজারাদার, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন। মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে হাট ইজারা নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। ভারতীয় গরুর বৈধতা দিয়ে আয় করেন টাকা। এটি এখন ওপেন সিক্রেট।
এদিকে সীমান্তে চোরাকারবার প্রতিরোধে তৎপরতা বাড়িয়েছে বিজিবি। ফলে প্রায়ই ধরা পড়ছে চোরাচালান। সিলেট ব্যাটালিয়ন ৪৮ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান পিএসসি জানান, চোরাচালান রোধে অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।