সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বিদায়ী আগস্টে সারাদেশে ৪৬৭টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৪৭৬ জন নিহত এবং ৯৮৫ জন আহত হয়েছেন। আগস্টে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। ১৯৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৬ জন নিহত, ২০১ জন আহত হয়েছেন। এটা মোট দুর্ঘটনার ৪১ দশমিক ৩২ শতাংশ, নিহতের ৪৩ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং আহতের ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের মাসিক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ পথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
বৃহ¯পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্টে রেলপথে ১০টি দুর্ঘটনায় আট জন নিহত, দুই জন আহত হয়েছে। নৌ পথে ১৩টি দুর্ঘটনায় ৫০ জন নিহত, দুই জন আহত এবং ৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৪৯০টি দুর্ঘটনায় ৫৩৪ জন নিহত এবং ৯৮৯ জন আহত হয়েছেন।
এ মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। ১১৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২১ জন নিহত ও ২৬১ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে। ২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ জন এবং আহত হয়েছেন ৯৩ জন।
সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে একজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯০ জন চালক, ৭৫ জন পথচারী, ৩৯ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৪ জন শিক্ষার্থী, একজন শিক্ষক, ৬৬ জন নারী, ৪৯ জন শিশু, তিন জন সাংবাদিক, একজন আইনজীবী এবং ১২ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। তাদের মধ্যে নিহত হয়েছেন একজন পুলিশ সদস্য, ৭৬ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৭৪ জন পথচারী, ৫৫ জন নারী, ৪৩ জন শিশু, ৩৩ জন শিক্ষার্থী, ১৭ জন পরিবহন শ্রমিক, একজন শিক্ষক, একজন সাংবাদিক, একজন আইনজীবী এবং ১১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
এ সময় সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত ৭৪৫টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা গেছে, ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২১ দশমিক ২০ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১০ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাস, ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
মোট দুর্ঘটনার ৪১ দশমিক ৫৪ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ৩৩ দশমিক ১৯ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২২ দশমিক ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ বিবিধ কারণে, শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ ট্রেন যানববাহনে সংঘর্ষ এবং চাকায় ওড়না পেছিয়ে শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ মাসে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২০ দশমিক ৭৭ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩৯ দশমিক ১৮ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ ঢাকা মহানগরী ও ১ দশমিক ২৮ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।
আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণ :
আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কিছু কারণের কথা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এগুলো হলো- দেশের সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশের অনুপস্থিতির সুযোগে আইন লঙ্ঘন করে যানবাহনের অবাধ চলাচল; জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় এবং অতি বৃষ্টির কারণে সড়কের মাঝে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে; জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টানিং চিহ্ন না থাকার কারণে নতুন চালকের এসব সড়কে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন; মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা; উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাদাঁবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন; অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানোকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।