স্টাফ রিপোর্টার ::
তাহিরপুর উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিছবাহুল আলম-এর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। গত ১৪ আগস্ট সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি হিমাংশু রঞ্জন তালুকদার এবং সদস্য মো. আবুল খায়ের। এই অভিযোগের অনুলিপি দেয়া হয়েছে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট।
তারা অভিযোগে উল্লেখ করেন, বিদ্যালয়টি হাওর অধ্যুষিত সুবিধাবঞ্চিত এলাকার একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এলাকার শিক্ষানুরাগীদের উদ্যোগে প্রায় ৩০ বৎসর আগে এই বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিছবাহুল আলমের অনিয়ম দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাত, মাসের পর মাস অনুপস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
তারা আরও উল্লেখ করেন, প্রধান শিক্ষক মিছবাহুল আলম বিদ্যালয় হতে প্রায় ৬০/৭০ কি. মি. দূরবর্তী সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। প্রতিদিন নিজ বাসা থেকে নিয়মিত পাঠদান অসম্ভব বিধায় তিনি অনুপস্থিত থাকেন মাসের পর মাস। তার অনুপস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকগণও দিনের পর দিন পাঠদান হতে বিরত থাকেন। ফলে মাসের অধিকাংশ সময়ে বিদ্যালয়টি শিক্ষকশূন্য অবস্থায় তালাবদ্ধ থাকে। এতে কেমালমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন বিপন্ন হওয়ার দ্বার প্রান্তে পৌঁছেছে।
অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, হাওর অধ্যুষিত ভাটি এলাকার প্রায় ৩০ (ত্রিশ) টি গ্রামের মধ্যে আর কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় উক্ত বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ছয় শতাধিক। বিপুল সংখ্যক এই শিক্ষার্থীর মাসিক বেতন, ভাতা, বাৎসরিক সেশন ফি, পরীক্ষার ফি, উপবৃত্তির টাকা ও অন্যান্য আয় বাবদ বাৎসরিক প্রায় ৮/১০ লক্ষ টাকা বিদ্যালয়ের তহবিলে নিয়মিত জমা হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক মিছবাহুল আলম বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কোন ধরনের হিসাব নিকাশ ব্যতিরেকে বছরের পর বছর এই টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন। এই বিষয়ে চলতি বছরের জুলাই মাসে মাসিক মিটিংয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, শিক্ষকগণ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের সার্বিক আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরূপণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ওই
কমিটির নিকট প্রধান শিক্ষক কোন ধরনের হিসাব-নিকাশ বা আয়-ব্যয়ের নথিপত্র উপস্থাপন করেননি। এই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন। বিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রধান শিক্ষক মিছবাহুল আলমের নিকট হতে সমুদয় টাকা উদ্ধার করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রধান শিক্ষক মিছবাহুল আলমকে অপসারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষ মিছবাহুল আলমের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
তাহিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি। আগামী সপ্তাহে তদন্তে যাবো।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, আমি মোয়াজ্জেমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিছবাহুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছি।