শহীদনূর আহমেদ ::
সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে পাহাড় থেকে বস্তা মাথায় নিয়ে নেমে আসছে একদল লোক। সীমান্তের কাঁটাতার মাড়িয়ে ‘গোপনপথ’ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে ভারতীয় পণ্য নিয়ে এভাবেই বাংলাদেশে প্রবেশ করে চোরাকারবারে নিয়োজিতরা। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সীমান্তে চোরাচালানের এই দৃশ্য ধরা পড়ে এ প্রতিবেদকের ক্যামেরায়।
ওইদিন ছদ্মবেশে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের চিনাউড়া সীমান্তের স্থানীয় বিওপির কয়েক’শ মিটার অদূরে গেলে দেখা হয় চোরাকারবার সিন্ডিকেটের স্থানীয় সদস্য লিয়াকত আলীর সাথে। তিনি সীমান্তের বাংলাদেশ অভ্যন্তরে বসে ওপার থেকে আসা চোরাই পণ্যের হিসাব রাখাসহ ভারতীয় এজেন্টদের সাথে মোবাইলফোনে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন।
পরিচয় গোপন রেখে কথা হয় তার সাথে। লিয়াকত আলী জানান, সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বুঙ্গার (ভারতীয় পণ্য) ব্যবসা হয়। তিনিসহ চিনাউড়া গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বুঙ্গার ব্যবসা করেন। স্থানীয় বিজিবি’র ব্যাপারে লিয়াকত বলেন, সরকার পতনের পর লাইনে তেমন কড়াকড়ি নেই। তবে সব সময় সাবধান থাকতে হয়।
চোরাকারবারে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, চিনাউড়ার মতো সদর উপজেলার ডলুড়া, আশাউড়া, বনগাঁও এলাকার একাধিক পথে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করায় স্থানীয় সিন্ডিকেট। শ্রমিকরা কেবল মুজুরি ভিত্তিতে ভারত থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পণ্য পাচারের কাজ করেন। বস্তা প্রতি ৩০০-৫০০ টাকা মুজুরি হারে নির্দিষ্ট চোরাইপথে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাতের বিভিন্ন সময় এই কাজ করেন শ্রমিকরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্থবিরতার সুযোগে নতুন নতুন চোরাই পথ তৈরি করেছে চোরাকারবারি চক্র। সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর সীমান্তের অন্তত ১৫টি পয়েন্ট দিয়ে ভারত থেকে আসছে সুপারি, চিনি, কসমেটিকস, মসলা, মাদকদ্রব্যসহ গরু, মহিষ। বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছে ইলিশ, শিং মাছ, রসুন, শুকনো সুপারিসহ বিভিন্ন সিরামিক্স পণ্য। সীমান্ত এলাকার স্থানীয় সিন্ডিকেট চোরাকারবারের মূলে থাকলেও এটি দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করতে শহরের একটি প্রভাবশালী কাজ করে। ধাপে ধাপে চলে চোরাকারবারের অবৈধ লেনদেন। এর সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানাযায়, চোরাই ব্যবসা পরিচালনায় দুই দেশের সীমান্তের হুন্ডি ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে। যার মাধ্যমে স্থানীয় এজেন্টরা টাকা ও ভারতীয় রুপির একচেঞ্জ করে থাকে। এজেন্টরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষায় দু’দেশীয় সিম ব্যবহার করে থাকে। চোরাকারবারের এই ব্যবসায় সীমান্ত এলাকার অসচ্ছল উঠতি বয়সী তরুণদের টার্গেট করে পরিচালিত হয়ে থাকে বলে জানায় সূত্রটি।
এদিকে চোরাকারবার প্রতিরোধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সীমান্ত এলাকায় নজদারির পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে জনবল। টহল টিমের তৎপরতায় ধরা পড়ছে চোরাই পণ্য।
সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল একে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, চোরাকারবার প্রতিরোধে আমরা আগের চেয়ে আরও তৎপর। সীমান্তে জনবল বাড়ানো হয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারিতে কাজ করছে টহল টিম। বিশেষ করে সীমান্তের ১৫০ গজ কড়াকড়িতে রয়েছে। প্রতিনিয়ত অভিযানে অবৈধ পণ্য জব্দ হচ্ছে।