মোহাম্মদ আব্দুল হক
পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে একটি দেশ হঠাৎ করে এমনি এমনি স্বাধীন হয়ে যায় না। বিষয়টি আবার এমনও নয় যে কেউ মাথা গরম করে রাগের মাথায় বলে ফেললেই স্বাধীনতা পাওয়া যায়। এতোটা সহজলভ্য নয় যে যেকোনো একজন রাজনীতিক মুখে বললেই একটি অঞ্চলের সকল মানুষ স্বাধীনতার জন্যে অস্ত্রের মুখে লাঠি সোটা নিয়ে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এখানে তিলে তিলে স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত রচিত হয়। হ্যাঁ, নেতা প্রয়োজন। আবার জনতার আকাক্সক্ষার ব্যাপার আছে। স্বাধীনতার জন্যে যখন নেতা এবং জনতা মাটির টানে এক প্রাণ হয়ে উঠে তখনই নেতার আহ্বানে জনতা একটি উদ্দেশ্য নিয়ে জীবনকে পর্যন্ত উৎসর্গ করতে স¤পূর্ণ প্রস্তুত থাকে । এমন ঘটনাই ঘটেছে আমাদের এই বাংলাদেশে ১৯৭১ খ্রীষ্টিয় সালে। মানুষ এখানে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে দৃঢ় সংকল্প করেছিলো। এ উপমহাদেশে বৃটিশ শাসনের অবসান হলে পরে ভারত এবং পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্র হয়ে উঠেছিলো। তৎকালে মূলত ‘মুসলমানদের জন্যে আলাদা রাষ্ট্র’ এ ধরনের কথামালার ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিলো। আমরা তখন পূর্ব পাকিস্তান নামে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অংশ। অস্বাভাবিক এক মানচিত্র হয়েছিলো। মাঝে ছিলো বিশাল আয়তনের এক রাষ্ট্র ভারত। ভারতের দুই দিকে দুই টুকরো পাকিস্তান নিয়ে এক দেশ। শুধু তাই নয় দুই অংশের আবহাওয়া, জলবায়ু, মানুষের চিন্তা, দেহের গঠন, ভাষা অর্থাৎ সংস্কৃতি স¤পূর্ণভাবে আলাদা ধরনের। এমন এক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রশাসনিক সব নিয়ন্ত্রণ আবার ছিলো তখন পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে। স্বাভাবিক কারণেই পূর্ব পাকিস্তান সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অনেক পিছনে পড়ে যেতে লাগলো। এরই মাঝে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে লাগলো। তারা প্রথম শক্ত আঘাত করল আমাদের ভাষার উপর। পাকিস্তান তখন মুসলিম লীগ শাসনাধীন। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরের একেবারে প্রথম দিকে পাকিস্তানের প্রথম শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে একমাত্র সরকারি ভাষা এবং শিক্ষার ভাষা করার প্রস্তাব হলে গর্জে উঠে বাংলা ভাষার ছাত্রসমাজ। ওই বছর ৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদ সভার মাধ্যমেই কার্যত ভাষা আন্দোলনের শুরুটা হয়। ১৯৪৮ খ্রীষ্টিয় সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটসহ নানামুখী আন্দোলনের চাপে ১৫ মার্চ পূর্ব বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন প্রদেশের সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলাকে মেনে নিতে বাধ্য হলেও পরবর্তীতে নানান কৌশলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং খাজা নাজিম উদ্দিন ১৯৫২ সালে রাষ্ট্র ভাষা উর্দুর পক্ষেই চূড়ান্ত মত দেন। এরই জবাবে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সালাম, বরকত, জব্বার, রফিকের প্রাণের বিনিময়ে বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বহুমুখী নির্যাতনের জবাব দিতে দিতে ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি বাংলার মাটি ও মানুষের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনসহ ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। অবশ্য এই ৬ দফা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এরই মাঝে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান হলে আয়ুব স্বৈরাচারের পতন হয়। পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচন দেওয়ার ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭০-এর ৭ ডিসেম্বর নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ২টি আসন ছাড়া বাকি সকল আসনে জয়লাভ করে এ অঞ্চলের নেতৃত্ব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের অধিকার পায়। কিন্তু আবার ইয়াহিয়াসহ পশ্চিম পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের মুখে পড়ে আমাদের নেতৃত্ব চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দিলেন। আমাদের এ অঞ্চলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১-এর ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন সোহরাওয়ার্দী (রেসকোর্স ময়দান) উদ্যানে-“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” মূলত এ ঘোষণার দ্বারা সংগ্রাম শুরু হয়েই যায়। তারপরের ইতিহাস ভয়াল ভয়ংকর এক কালো অধ্যায়। ২৫ মার্চ কাল রাতে পশ্চিম পাকিস্তানের লেলিয়ে দেয়া সৈন্যরা ঢাকার বুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারে আর ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। ঘুমন্ত নিরীহ মানুষের উপর এমন অমানবিক আচরণ নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে ইতিহাসের জঘন্যতম ঘটনা ঘটায় পাকিস্তানি সেনা। তারপর ধীরে ধীরে বাঙলার কৃষক, শ্রমিক, জেলে, দিনমজুরসহ দামাল ছেলেরা সংগঠিত হয়ে জীবন বাজি রেখে নেতৃত্বের আহ্বানে দেশের স্বাধীনতার জন্যে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধ কিন্তু বিশৃঙ্খলভাবে হয়নি, বরং তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত আমাদের সেনা অফিসারদের দক্ষ নেতৃত্বে বিভিন্ন সেক্টরে সুপরিকল্পিতভাবে যুদ্ধ হয়েছে শত্রুর বিরুদ্ধে। তখন সকল সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন সিলেটের কৃতী সন্তান জেনারেল এমএজি ওসমানী। এ যুদ্ধে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছে এবং নারীরা হারিয়েছে সম্ভ্রম। তারপর আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাদল আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিষয়টি দীর্ঘ পথের। কিন্তু এখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল ¯্রােতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এতো স্বল্প সময়ে মাত্র ৯ মাসে একটি দক্ষ সামরিক বাহিনীকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছে দেশমাতৃকার প্রতি আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর ভালোবাসার কারণেই। শেষ পর্যন্ত আমাদের বিজয় হয় এবং সেই থেকেই এই দিনটি বিজয় দিবস হিসেবে আমরা পালন করে থাকি। সংক্ষেপে বর্ণনা করলেও আমাদের এই বিজয় কিন্তু এতো সহজেই আসেনি। শুরুতেই বলেছি স্বাধীনতা এমনি এমনি আসেনা। যখন শত্রুপক্ষের ষড়যন্ত্র ওই মাটির নেতা এবং জনতা এক প্রাণ হয়ে বুঝতে পারে তখনই যুদ্ধে যুদ্ধে স্বাধীনতা আসতে পারে। অনেক ত্যাগের পরেই স্বাধীনতা আসে। এমন স¤পদ যাতে অবহেলায় নষ্ট না হয় সেদিকে আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। যাদের রক্তের, সম্ভ্রমের এবং জীবনের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীন দেশ, তাকে রক্ষার সংগ্রামে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় নিজেকে শুদ্ধভাবে নিয়োজিত রেখেই সঠিক শ্রদ্ধা দেখাতে হবে বর্তমান সময়ের এদেশবাসীকে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামের ও বিজয়ের ইতিহাস জেনে আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজয় দিবস বারবার আসুক। সুখ আর সময়োপযোগী সম্পদ ও জ্ঞানে সমৃদ্ধ হোক বাংলাদেশ।
[মোহাম্মদ আব্দুল হক, লেখক ও কলামিস্ট]
পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে একটি দেশ হঠাৎ করে এমনি এমনি স্বাধীন হয়ে যায় না। বিষয়টি আবার এমনও নয় যে কেউ মাথা গরম করে রাগের মাথায় বলে ফেললেই স্বাধীনতা পাওয়া যায়। এতোটা সহজলভ্য নয় যে যেকোনো একজন রাজনীতিক মুখে বললেই একটি অঞ্চলের সকল মানুষ স্বাধীনতার জন্যে অস্ত্রের মুখে লাঠি সোটা নিয়ে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এখানে তিলে তিলে স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত রচিত হয়। হ্যাঁ, নেতা প্রয়োজন। আবার জনতার আকাক্সক্ষার ব্যাপার আছে। স্বাধীনতার জন্যে যখন নেতা এবং জনতা মাটির টানে এক প্রাণ হয়ে উঠে তখনই নেতার আহ্বানে জনতা একটি উদ্দেশ্য নিয়ে জীবনকে পর্যন্ত উৎসর্গ করতে স¤পূর্ণ প্রস্তুত থাকে । এমন ঘটনাই ঘটেছে আমাদের এই বাংলাদেশে ১৯৭১ খ্রীষ্টিয় সালে। মানুষ এখানে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে দৃঢ় সংকল্প করেছিলো। এ উপমহাদেশে বৃটিশ শাসনের অবসান হলে পরে ভারত এবং পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্র হয়ে উঠেছিলো। তৎকালে মূলত ‘মুসলমানদের জন্যে আলাদা রাষ্ট্র’ এ ধরনের কথামালার ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিলো। আমরা তখন পূর্ব পাকিস্তান নামে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অংশ। অস্বাভাবিক এক মানচিত্র হয়েছিলো। মাঝে ছিলো বিশাল আয়তনের এক রাষ্ট্র ভারত। ভারতের দুই দিকে দুই টুকরো পাকিস্তান নিয়ে এক দেশ। শুধু তাই নয় দুই অংশের আবহাওয়া, জলবায়ু, মানুষের চিন্তা, দেহের গঠন, ভাষা অর্থাৎ সংস্কৃতি স¤পূর্ণভাবে আলাদা ধরনের। এমন এক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রশাসনিক সব নিয়ন্ত্রণ আবার ছিলো তখন পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে। স্বাভাবিক কারণেই পূর্ব পাকিস্তান সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অনেক পিছনে পড়ে যেতে লাগলো। এরই মাঝে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে লাগলো। তারা প্রথম শক্ত আঘাত করল আমাদের ভাষার উপর। পাকিস্তান তখন মুসলিম লীগ শাসনাধীন। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরের একেবারে প্রথম দিকে পাকিস্তানের প্রথম শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে একমাত্র সরকারি ভাষা এবং শিক্ষার ভাষা করার প্রস্তাব হলে গর্জে উঠে বাংলা ভাষার ছাত্রসমাজ। ওই বছর ৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদ সভার মাধ্যমেই কার্যত ভাষা আন্দোলনের শুরুটা হয়। ১৯৪৮ খ্রীষ্টিয় সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটসহ নানামুখী আন্দোলনের চাপে ১৫ মার্চ পূর্ব বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন প্রদেশের সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলাকে মেনে নিতে বাধ্য হলেও পরবর্তীতে নানান কৌশলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং খাজা নাজিম উদ্দিন ১৯৫২ সালে রাষ্ট্র ভাষা উর্দুর পক্ষেই চূড়ান্ত মত দেন। এরই জবাবে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সালাম, বরকত, জব্বার, রফিকের প্রাণের বিনিময়ে বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বহুমুখী নির্যাতনের জবাব দিতে দিতে ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি বাংলার মাটি ও মানুষের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনসহ ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। অবশ্য এই ৬ দফা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এরই মাঝে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান হলে আয়ুব স্বৈরাচারের পতন হয়। পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচন দেওয়ার ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭০-এর ৭ ডিসেম্বর নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ২টি আসন ছাড়া বাকি সকল আসনে জয়লাভ করে এ অঞ্চলের নেতৃত্ব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের অধিকার পায়। কিন্তু আবার ইয়াহিয়াসহ পশ্চিম পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের মুখে পড়ে আমাদের নেতৃত্ব চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দিলেন। আমাদের এ অঞ্চলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১-এর ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন সোহরাওয়ার্দী (রেসকোর্স ময়দান) উদ্যানে-“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” মূলত এ ঘোষণার দ্বারা সংগ্রাম শুরু হয়েই যায়। তারপরের ইতিহাস ভয়াল ভয়ংকর এক কালো অধ্যায়। ২৫ মার্চ কাল রাতে পশ্চিম পাকিস্তানের লেলিয়ে দেয়া সৈন্যরা ঢাকার বুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারে আর ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। ঘুমন্ত নিরীহ মানুষের উপর এমন অমানবিক আচরণ নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে ইতিহাসের জঘন্যতম ঘটনা ঘটায় পাকিস্তানি সেনা। তারপর ধীরে ধীরে বাঙলার কৃষক, শ্রমিক, জেলে, দিনমজুরসহ দামাল ছেলেরা সংগঠিত হয়ে জীবন বাজি রেখে নেতৃত্বের আহ্বানে দেশের স্বাধীনতার জন্যে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধ কিন্তু বিশৃঙ্খলভাবে হয়নি, বরং তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত আমাদের সেনা অফিসারদের দক্ষ নেতৃত্বে বিভিন্ন সেক্টরে সুপরিকল্পিতভাবে যুদ্ধ হয়েছে শত্রুর বিরুদ্ধে। তখন সকল সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন সিলেটের কৃতী সন্তান জেনারেল এমএজি ওসমানী। এ যুদ্ধে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছে এবং নারীরা হারিয়েছে সম্ভ্রম। তারপর আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাদল আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিষয়টি দীর্ঘ পথের। কিন্তু এখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল ¯্রােতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এতো স্বল্প সময়ে মাত্র ৯ মাসে একটি দক্ষ সামরিক বাহিনীকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছে দেশমাতৃকার প্রতি আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর ভালোবাসার কারণেই। শেষ পর্যন্ত আমাদের বিজয় হয় এবং সেই থেকেই এই দিনটি বিজয় দিবস হিসেবে আমরা পালন করে থাকি। সংক্ষেপে বর্ণনা করলেও আমাদের এই বিজয় কিন্তু এতো সহজেই আসেনি। শুরুতেই বলেছি স্বাধীনতা এমনি এমনি আসেনা। যখন শত্রুপক্ষের ষড়যন্ত্র ওই মাটির নেতা এবং জনতা এক প্রাণ হয়ে বুঝতে পারে তখনই যুদ্ধে যুদ্ধে স্বাধীনতা আসতে পারে। অনেক ত্যাগের পরেই স্বাধীনতা আসে। এমন স¤পদ যাতে অবহেলায় নষ্ট না হয় সেদিকে আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। যাদের রক্তের, সম্ভ্রমের এবং জীবনের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীন দেশ, তাকে রক্ষার সংগ্রামে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় নিজেকে শুদ্ধভাবে নিয়োজিত রেখেই সঠিক শ্রদ্ধা দেখাতে হবে বর্তমান সময়ের এদেশবাসীকে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামের ও বিজয়ের ইতিহাস জেনে আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজয় দিবস বারবার আসুক। সুখ আর সময়োপযোগী সম্পদ ও জ্ঞানে সমৃদ্ধ হোক বাংলাদেশ।
[মোহাম্মদ আব্দুল হক, লেখক ও কলামিস্ট]