গীতিকার আশরাফুল আলম

‘কেমনে বাঁচি বন্ধুরে তুই বিহনে’

আপলোড সময় : ১৩-১২-২০২৫ ১১:২৭:২৮ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৩-১২-২০২৫ ১১:৩২:০২ অপরাহ্ন
বিশ্বজিত রায়::
সুনামগঞ্জের মুহাম্মদ আশরাফুল আলম। নিভৃতচারী এক গীতিকার। তাঁর লেখা গানে আছে দেহতত্ত্ব, আধ্যাত্মিকতা, প্রেম, ভালোবাসা, বিরহ, বেদনার মাখামাখি। তিনি এ পর্যন্ত নিজ ভান্ডারে জমিয়েছেন হাজারখানেক গান। অনেকটা একাকীত্ব থেকেই গানে মনোনিবেশ তাঁর। নিবিষ্ট চিত্তে গান লেখেন। সেই গান গেয়ে মাঝে মাঝে কণ্ঠ চর্চাও করেন তিনি।
সম্প্রতি তাঁর লেখা একাধিক গান বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্রে প্রচারিত হয়েছে। প্রচারিত গানের একটি হচ্ছে ‘গোলাতে ধান রাখিয়া আমায় রাখলো পাহারাদার / দিনে রাইতে বস্তা কাটে সয়না অত্যাচার।’ অন্যটি ‘নিশি গেল আশার আসে, নিদ্রা নাই মোর নয়নে / কেমনে বাঁচি বন্ধুরে তুই বিহনে’। মো. ওয়াসিমের সুর, শিল্পী ওমর ফারুকের গাওয়া ‘গোলাতে ধান রাখিয়া আমায় রাখলো পাহারাদার’ গানটিতে নশ্বর দেহ, অবিনশ্বর প্রাণ, ঘাত-প্রতিঘাতে জর্জরিত মানব জীবনের মর্মস্পর্শী বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। কখনও কখনও বিরহ কাতরতাও দাগ কেটে যায় এই গীতিকবির মনে। প্রিয়জনের শূন্যতা অনুভবে তিনি লিখেছেন- ‘কেমনে বাঁচি বন্ধুরে তুই বিহনে’। মনে হয় মনের মানুষটিকে ভেবে ভেবে বিনিদ্র রাতও কাটিয়েছেন এই গীতিকার। একাকী রজনীর নিভৃত পাতায় তিনি লিখেছেন- ‘নিশি গেল আশার আসে, নিদ্রা নাই মোর নয়নে’। প্রত্যহ কর্মব্যস্ততা শেষে অনেকটা নেশার ঘোরে গান লিখতে বসেন।
সঙ্গীতসাধক আশরাফুল আলমের জন্ম তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণকুল গ্রামে। পিতা মো. ফজলুল হক ও মাতা মোছা. শ্যামনাহার বেগমের তিন ছেলে সন্তানের মাঝে আশরাফুল আলম সবার বড়। পিতার কর্মস্থল তাহিরপুরের দক্ষিণকুল গ্রামে জন্ম হলেও তাঁর পৈতৃক ভিটা সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা গ্রামে। বাবার ব্যবসাস্থল হওয়ায় দক্ষিণকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি এবং বালিজুরি হাজী এলাহি বক্স উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৫ সালে দুই বিষয়ে লেটার মার্ক পেয়ে এসএসসি পাশ করেন আশরাফ। ২০০০ সালে জামালগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ২০০২ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এই গানপোকা মানুষটি।
পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে ২০০৩ সালে বাড়ি ছেড়ে ঢাকার একটি সুয়েটার ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেন। কর্মব্যস্ততা শেষে শূন্যতা পেয়ে বসলেই গান লেখায় মগ্ন হতেন তিনি। একটা সময়ে চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে আসেন। ২০০৬ সালে বেসরকারি একটি এনজিওতে চাকরি হয় তাঁর। ২০১৩ সালে জামালগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে চাকরি হলে এনজিও ছেড়ে ফের বাড়ি ফেরা হয় আশরাফুলের। অদ্যাবধি সেখানেই কর্মরত আছেন গীতিকার আশরাফ আলম। ছোটকাল থেকে গানের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। গানপ্রেমিক বাবার দোতরা বাজিয়ে গান গাওয়ার অভ্যাস তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। এ পর্যন্ত হাজারখানেক গান লিখেছেন তিনি। সময়ে পেলেই গান লেখেন। গানের ভুবনে মজে থাকতে মন চায়।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আছে- ‘একটা দমের নাই ভরসা, কেন এত বাহাদুরি / পালকি চড়ে যেতে হবে ওগো নাইওরি...।’ ‘ভিক্ষার ঝুলি কান্দে লইয়া রইলাম দাঁড়াইয়া / ও পাড়ের সওদাগর / কোন দুয়ারে যাব আমি দিলে তাড়াইয়া...।’ ‘চাওয়া পাওয়ার বাসনা এ জীবনেও যাবে না / যত পায় ততই চায় মন বেপারি...।’ ‘স্বার্থক জীবন হইতোরে বন্ধু আইলে ভাঙা ঘরে / দূরে দূরে থাইকো নারে ডাকি তোমায় বিনয় করে।’ ‘অন্তরে বিরহের আগুন নিভে নারে জল দিলে / কি কারণে বন্ধুরে তুই পুড়লেরে তিলে তিলে।’ ‘পুড়তে পুড়তে হইলাম সারা, নিভে কি আর জল ঢালিলে / জ্বলছি প্রেমানলে একি ছিল মোর কপালে।’ আশরাফ আলম জানিয়েছেন, ইহকাল-পরকালের ভাবনা এবং গানে গানে দুঃখ-বেদনা ভুলে থাকার পাশাপাশি এই মানব পৃথিবীকে জানা-বোঝার প্রচেষ্টায়ই গান লেখা তাঁর। গান লেখার সেই চিন্তাচেতনা তাঁকে লোভ, লালসা, মন্দ মোহ থেকে সর্বদা বিরত রাখছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সিলেট বেতারের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক (সঙ্গীত) মো. আব্দুল হক জানিয়েছেন, গীতিকার আশরাফুল আলম সম্পর্কে তাঁর তেমন জানাশোনা নেই। তবে বেতার হচ্ছে একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত। আশরাফুল আলমের লেখা গান মানসম্মত বলেই গীতিকার নির্বাচন বোর্ড তাকে তালিকাভুক্ত করেছে। দুই-তিনশ’ স্ক্রিপ্ট যাচাই-বাছাই করে যেহেতু তাঁর গান উত্তীর্ণ হয়েছে সেহেতু তাকে ভালো বলা যায়।

তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি আশরাফুল আলমের লেখা একাধিক গান সিলেট বেতারে প্রচার হয়েছে। তাঁর প্রচারিত গানের মধ্যে আছে ‘গোলাতে ধান রাখিয়া আমায় রাখলো পাহারাদার।’ ‘নিশি গেল আশার আসে, নিদ্রা নাই মোর নয়নে।’ ‘আসিয়া ভবকুলে শিসা কিনলাম হীরা ফেলে’ এবং ‘মাথায় নিলায় কলঙ্কের ঢালি প্রাণ বন্ধুরে।’

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com