শামস শামীম::
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মেডিকেল অফিসার, নার্স, আয়া, মিডওয়াইফ, টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারসহ জরুরি সেবা সংশ্লিষ্ট পদগুলোতে লোক না থাকায় দুর্গম হাওরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কোনও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষাই হচ্ছেনা, ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবাও পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। এই অবস্থায় গর্ভবতী নারী, শিশু, বৃদ্ধ, হার্ট ও স্ট্রোকের রোগীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
জরুরি চিকিৎসার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে হাওরের অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষ উন্নত চিকিৎসার অভাবে ধুঁকছেন। কবে শূন্যপদগুলো পূরণ করে হাওরবাসীর মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে এটা জানেননা কেউ। দায়িত্বশীলরাও জানিয়েছেন সহসাই এসব পদ পূরণের সম্ভাবনা নেই।
সারাদেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ অবকাঠামোতে পিছিয়েপড়া প্রান্তিক জনপদ সুনামগঞ্জ। প্রাকৃতিক সম্পদে এগিয়ে থাকা এই জেলা আবহমানকাল থেকে জাতীয় উন্নয়ন অবকাঠামোর সমতায় পিছিয়ে আছে। বর্তমানে হাওরের এই জেলায় প্রায় ২৭ লাখ মানুষের বসবাস। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলায় এখনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ হয়নি। জেলায় শত বছরের পুরনো আরো ১৬টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র সচল রয়েছে। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে জুনিয়র কনসালটেন্ট (বিশেষজ্ঞ) চিকিৎসক ও মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও বেশিরভাগ পদই দীর্ঘদিন ধরে খালি। জ্বর, কাশি, সর্দি, ডায়রিয়া, চর্মরোগ বা অন্যান্য মওসুমী রোগের সাধারণ চিকিৎসা ছাড়া বিশেষ বা জটিল রোগের চিকিৎসারও সুযোগ মিলছেনা। যক্ষ্মা কর্মসূচির মাধ্যমে কফসহ সাধারণ কিছু প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার সুযোগ থাকলেও আল্ট্রা, এক্সরে, ইসিজি হচ্ছেনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় জুনিয়র কনসালটেন্ট ৭৩টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি পদে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে। যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর তুলনামূলক কিছুটা যোগাযোগ ভালো সেখানে হাতেগোণা কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। ৫৪ জন মেডিকেল অফিসারের মধ্যে মাত্র ১৪ জন মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ৭০ জনের মধ্যে মধ্যে ১৮ জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স ২৫১ জনের মধ্যে ২৮ জন, কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ৯৫ জনের মধ্যে ২২ জন কর্মরত আছেন। মিডওয়াইফ ৬২ জনের মধ্যে ১ জনও নাই।
এছাড়াও অন্যান্য পদের মধ্যে ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার, ইমার্জেন্সি এটেনডেন্ট, হেলথ এডকেয়ার, ল্যাব এটেনডেন্ট, ওটিবয়, একাউন্টেন্ট, এনেসথিসিস্ট, এসিসটেন্ট নার্স, আয়া, কম্পিউটার অপারেটর, কম্পাউন্ডার, দারোয়ান, অফিস এসিসটেন্ট, প্যাথলজিস্ট পদ শতভাগ শূন্য রয়েছে। তাই সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে প্রশাসনিক কাজও ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এই সুযোগে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে গড়ে ওঠেছে মানহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন চাকুরি নিয়ে যেসব চিকিৎসক যোগদান করেন তারা কোনও মতে দুই বছর পার করেই বদলি হয়ে নিজ এলাকায় চলে যান। তাছাড়া অনেকে উন্নত এলাকায় ভালো প্র্যাকটিস ও সুযোগ সুবিধার জন্য তদবির করে বদলি হয়ে যান। অনেকে বদলির বদলে প্রেষণে অন্যত্র যুক্ত হন।
সম্প্রতি দোয়ারাবাজার, শাল্লা, তাহিরপুর উপজেলায় লোক না থাকায় প্যাথজিক্যাল পরীক্ষা বন্ধ আছে। দোয়ারাবাজার ও শাল্লায় ১ জন করে প্যাথলজিস্ট থাকলেও সম্প্রতি তারা বদলি হয়ে চলে গেছেন। ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জানান, হাওরের গর্ভবতী নারী, শিশু, বৃদ্ধ, হৃদরোগী ও স্ট্রোকের রোগী এবং দুর্ঘটনাকবলিত রোগীরা জরুরি ও জটিল রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। সাধারণ রোগীরাও সব সময় চিকিৎসা পাননা।
সিভিল সার্জন অফিস কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জেলার একমাত্র জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়া অন্য কমপ্লেক্সেগুলোতে ৩১ শয্যার জনবলই রয়ে গেছে। তবে সব উপজেলায় বাস্তবে ৩১ শয্যার জনবলও নেই। ৫০ শয্যার হাসপাতালগুলোতে জুনিয়র কনাসলটেন্ট ও মেডিকেল অফিসারের ১০টি করে পদ থাকলেও হাওরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে মাত্র ২-৩ জন করে কর্মরত আছেন।
শাল্লা উপজেলা কৃষকদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক একরামুল হোসেন বলেন, আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সুন্দর ভবন হয়েছে। সেই ভবনে চিকিৎসা নিতে হাওরের গরিব মানুষ আসে। কিন্তু চিকিৎসা ও ওষুধ পায় না। কোনধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করাতে পারেনা। দুর্গম এই হাওর জনপদের গর্ভবতী নারী, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের রোগী এবং দুর্ঘটনায় কবলিত রোগীরা চিকিৎসার জন্য এসে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, হাওরের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সাব সেন্টারগুলোতে সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পায় না। কোনও প্যাথলজিক্যাল টেস্টের সুযোগ নেই। রাষ্ট্রীয় মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হাওরবাসী। অনেক বড়ো বড়ো আশ্বাস দেওয়া হলেও হাওরবাসীর কান্না শুনে তাদের পাশে কেউ কখনো দাঁড়ায়নি। আমরা অবহেলার মধ্যেই হাবুডুবু খাচ্ছি।
হাওরঘেরা জনপদ তাহিরপুরের বাসিন্দা ও সুনামগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, হাওর সম্পদ ও সম্ভাবনায় এক অনন্য অঞ্চল হলেও যুগযুগ ধরে বঞ্চনার শিকার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কর্মসংস্থানে পিছিয়ে আছে জনপদটি। বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাত চরম অবহেলার শিকার। হাসপাতাল আছে, চিকিৎসক নেই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ৩১ দফার মাধ্যমে মানুষের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে।
শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেবব্রত আইচ বলেন, আমার স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স দুর্গম হাওরে অবস্থিত। এখানে ১০জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু আমিসহ মাত্র ৩জন কর্মরত আছি। এর মধ্যে ১জন প্রেষণে আছেন। তাই আমাদের পক্ষে কাঙ্খিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্যাথলজি বিভাগে কেউ না থাকায় আমাদের হাসপাতালে পরীক্ষাও বন্ধ আছে। মানুষ এসে ফিরে যায়। আমি এ বিষয়ে নানা স্থানে কথা বলছি ও লিখিত দিচ্ছি।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নওশাদ বলেন, আমার হাসপাতালেও মাত্র ৩ জন কর্মরত আছেন। প্যাথলজি বিভাগের কেউ না থাকায় পরীক্ষা হচ্ছে না। তবে যক্ষ্মা কর্মসূচির মাধ্যমে কিছু প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করাচ্ছি আমরা। চিকিৎসকের অভাবে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. জসীম উদ্দিন বলেন, হাওরের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটের কারণে মানুষজন কাক্সিক্ষত সেবা পান না। চিকিৎসার সঙ্গে জরুরি প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষাও করা যাচ্ছে না। যতক্ষণ পর্যন্ত স্থানীয় চিকিৎসক নিয়োগ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণ নিরবচ্ছিন্ন সেবা পাওয়ার সুযোগ নেই। আমি জনবলের জন্য বার লেখালেখি করছি। কথা বলছি। তাতে কিছু হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মেডিকেল অফিসার, নার্স, আয়া, মিডওয়াইফ, টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারসহ জরুরি সেবা সংশ্লিষ্ট পদগুলোতে লোক না থাকায় দুর্গম হাওরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কোনও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষাই হচ্ছেনা, ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবাও পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। এই অবস্থায় গর্ভবতী নারী, শিশু, বৃদ্ধ, হার্ট ও স্ট্রোকের রোগীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
জরুরি চিকিৎসার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে হাওরের অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষ উন্নত চিকিৎসার অভাবে ধুঁকছেন। কবে শূন্যপদগুলো পূরণ করে হাওরবাসীর মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে এটা জানেননা কেউ। দায়িত্বশীলরাও জানিয়েছেন সহসাই এসব পদ পূরণের সম্ভাবনা নেই।
সারাদেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ অবকাঠামোতে পিছিয়েপড়া প্রান্তিক জনপদ সুনামগঞ্জ। প্রাকৃতিক সম্পদে এগিয়ে থাকা এই জেলা আবহমানকাল থেকে জাতীয় উন্নয়ন অবকাঠামোর সমতায় পিছিয়ে আছে। বর্তমানে হাওরের এই জেলায় প্রায় ২৭ লাখ মানুষের বসবাস। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলায় এখনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ হয়নি। জেলায় শত বছরের পুরনো আরো ১৬টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র সচল রয়েছে। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে জুনিয়র কনসালটেন্ট (বিশেষজ্ঞ) চিকিৎসক ও মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও বেশিরভাগ পদই দীর্ঘদিন ধরে খালি। জ্বর, কাশি, সর্দি, ডায়রিয়া, চর্মরোগ বা অন্যান্য মওসুমী রোগের সাধারণ চিকিৎসা ছাড়া বিশেষ বা জটিল রোগের চিকিৎসারও সুযোগ মিলছেনা। যক্ষ্মা কর্মসূচির মাধ্যমে কফসহ সাধারণ কিছু প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার সুযোগ থাকলেও আল্ট্রা, এক্সরে, ইসিজি হচ্ছেনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় জুনিয়র কনসালটেন্ট ৭৩টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি পদে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে। যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর তুলনামূলক কিছুটা যোগাযোগ ভালো সেখানে হাতেগোণা কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। ৫৪ জন মেডিকেল অফিসারের মধ্যে মাত্র ১৪ জন মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ৭০ জনের মধ্যে মধ্যে ১৮ জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স ২৫১ জনের মধ্যে ২৮ জন, কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ৯৫ জনের মধ্যে ২২ জন কর্মরত আছেন। মিডওয়াইফ ৬২ জনের মধ্যে ১ জনও নাই।
এছাড়াও অন্যান্য পদের মধ্যে ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার, ইমার্জেন্সি এটেনডেন্ট, হেলথ এডকেয়ার, ল্যাব এটেনডেন্ট, ওটিবয়, একাউন্টেন্ট, এনেসথিসিস্ট, এসিসটেন্ট নার্স, আয়া, কম্পিউটার অপারেটর, কম্পাউন্ডার, দারোয়ান, অফিস এসিসটেন্ট, প্যাথলজিস্ট পদ শতভাগ শূন্য রয়েছে। তাই সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে প্রশাসনিক কাজও ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এই সুযোগে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে গড়ে ওঠেছে মানহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন চাকুরি নিয়ে যেসব চিকিৎসক যোগদান করেন তারা কোনও মতে দুই বছর পার করেই বদলি হয়ে নিজ এলাকায় চলে যান। তাছাড়া অনেকে উন্নত এলাকায় ভালো প্র্যাকটিস ও সুযোগ সুবিধার জন্য তদবির করে বদলি হয়ে যান। অনেকে বদলির বদলে প্রেষণে অন্যত্র যুক্ত হন।
সম্প্রতি দোয়ারাবাজার, শাল্লা, তাহিরপুর উপজেলায় লোক না থাকায় প্যাথজিক্যাল পরীক্ষা বন্ধ আছে। দোয়ারাবাজার ও শাল্লায় ১ জন করে প্যাথলজিস্ট থাকলেও সম্প্রতি তারা বদলি হয়ে চলে গেছেন। ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জানান, হাওরের গর্ভবতী নারী, শিশু, বৃদ্ধ, হৃদরোগী ও স্ট্রোকের রোগী এবং দুর্ঘটনাকবলিত রোগীরা জরুরি ও জটিল রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। সাধারণ রোগীরাও সব সময় চিকিৎসা পাননা।
সিভিল সার্জন অফিস কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জেলার একমাত্র জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়া অন্য কমপ্লেক্সেগুলোতে ৩১ শয্যার জনবলই রয়ে গেছে। তবে সব উপজেলায় বাস্তবে ৩১ শয্যার জনবলও নেই। ৫০ শয্যার হাসপাতালগুলোতে জুনিয়র কনাসলটেন্ট ও মেডিকেল অফিসারের ১০টি করে পদ থাকলেও হাওরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে মাত্র ২-৩ জন করে কর্মরত আছেন।
শাল্লা উপজেলা কৃষকদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক একরামুল হোসেন বলেন, আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সুন্দর ভবন হয়েছে। সেই ভবনে চিকিৎসা নিতে হাওরের গরিব মানুষ আসে। কিন্তু চিকিৎসা ও ওষুধ পায় না। কোনধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করাতে পারেনা। দুর্গম এই হাওর জনপদের গর্ভবতী নারী, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের রোগী এবং দুর্ঘটনায় কবলিত রোগীরা চিকিৎসার জন্য এসে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, হাওরের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সাব সেন্টারগুলোতে সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পায় না। কোনও প্যাথলজিক্যাল টেস্টের সুযোগ নেই। রাষ্ট্রীয় মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হাওরবাসী। অনেক বড়ো বড়ো আশ্বাস দেওয়া হলেও হাওরবাসীর কান্না শুনে তাদের পাশে কেউ কখনো দাঁড়ায়নি। আমরা অবহেলার মধ্যেই হাবুডুবু খাচ্ছি।
হাওরঘেরা জনপদ তাহিরপুরের বাসিন্দা ও সুনামগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, হাওর সম্পদ ও সম্ভাবনায় এক অনন্য অঞ্চল হলেও যুগযুগ ধরে বঞ্চনার শিকার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কর্মসংস্থানে পিছিয়ে আছে জনপদটি। বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাত চরম অবহেলার শিকার। হাসপাতাল আছে, চিকিৎসক নেই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ৩১ দফার মাধ্যমে মানুষের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে।
শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেবব্রত আইচ বলেন, আমার স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স দুর্গম হাওরে অবস্থিত। এখানে ১০জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু আমিসহ মাত্র ৩জন কর্মরত আছি। এর মধ্যে ১জন প্রেষণে আছেন। তাই আমাদের পক্ষে কাঙ্খিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্যাথলজি বিভাগে কেউ না থাকায় আমাদের হাসপাতালে পরীক্ষাও বন্ধ আছে। মানুষ এসে ফিরে যায়। আমি এ বিষয়ে নানা স্থানে কথা বলছি ও লিখিত দিচ্ছি।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নওশাদ বলেন, আমার হাসপাতালেও মাত্র ৩ জন কর্মরত আছেন। প্যাথলজি বিভাগের কেউ না থাকায় পরীক্ষা হচ্ছে না। তবে যক্ষ্মা কর্মসূচির মাধ্যমে কিছু প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করাচ্ছি আমরা। চিকিৎসকের অভাবে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. জসীম উদ্দিন বলেন, হাওরের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটের কারণে মানুষজন কাক্সিক্ষত সেবা পান না। চিকিৎসার সঙ্গে জরুরি প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষাও করা যাচ্ছে না। যতক্ষণ পর্যন্ত স্থানীয় চিকিৎসক নিয়োগ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণ নিরবচ্ছিন্ন সেবা পাওয়ার সুযোগ নেই। আমি জনবলের জন্য বার লেখালেখি করছি। কথা বলছি। তাতে কিছু হচ্ছে না।