মোছাঃ মাহমুদা চৌধুরী রোজী::
আমাদের বর্তমান সবচেয়ে সমাজে সবচেয়ে বড় সমস্যা, বড় আতঙ্ক, বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে মূল্যবোধের অবক্ষয়। মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে সমাজ সবসময় সামাজিক আচরণই প্রত্যাশা করে। নীতিহীন ব্যক্তি বা সমাজ কিংবা রাষ্ট্র কোনটাই হিতকর নয়। অনিয়ম, উচ্ছৃঙ্খল, সামাজিক বন্ধনে ভাঙনের সুর বাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে। মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এমন কী ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে নির্ভেজাল সম্পর্কের ফাটল ধরাচ্ছে মূল্যবোধের অবক্ষয়। যেখানে আদর, প্রেম-ভালোবাসা, সম্মানবোধ থাকার কথা, নীতিহীনতার কারণে সেখানে জায়গা নিচ্ছে চরম অবিশ্বাস, অসম্মানের প্রতিযোগিতা। ফলে বেড়ে চলেছে আত্মহত্যাসহ অন্যান্য অপরাধপ্রবণতা। নষ্টের দোরগোড়ায় পবিত্র সম্পর্কগুলো।
সাম্প্রতিক সময়ে শিশুহত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই, খাদ্যে ভেজাল এমনকি শিশুখাদ্যে পর্যন্ত ভেজাল। যে ওষুধ মানুষের জীবন বাঁচায় সেই ওষুধেও ভেজাল - এসবই সমাজের সকরুণ চিত্র। এ যেন পরস্পরের ক্ষতি সাধনের মহাপ্রতিযোগিতা। সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতা হত্যার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। বৃদ্ধাশ্রমের কথা না হয় না-ই বললাম। শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত সবখানেই মূল্যবোধের অবক্ষয় বিরাজমান। ঐশী কর্তৃক মা-বাবাকে নৃশংস হত্যা কিংবা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাবুল কর্তৃক স্ত্রী পরিকল্পিতভাবে হত্যা সমাজের জন্য বিরাট অশনি সংকেত। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্র মূল্যবোধের ক্রান্তিলগ্নে উপস্থিত। বিবেকবান, স্বচ্ছধারার মানুষ মাত্রই চিন্তিত। প্রকৃত জীবনবোধ, জীবনাদর্শের অভাবে ভোগবিলাসিতা, স্বার্থপরতা চরমে।
আত্মহত্যার পাল্লা ভারি হচ্ছে দিন দিন। এমন অস্থির, অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশের জন্য কে দায়ী? কেউই একা দায়ী নয়। দায়ভার সবার। বিশ্বসভ্যতার সাথে টিকে থাকতে হলে মানবিক মূল্যবোধের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে ভাবতে হবে এখনই। শুধু ভাবনাতেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও। যদি ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, যতই আমরা এক্স, ওয়াই, জেড কিংবা আলফা জেনারেশনের কথা বলি না কেন, দিনশেষে সবই বৃথা হবে। এই চরম দুরাবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে পরিবারকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।