কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প থেকে বাদ যাচ্ছে তাহিরপুর ও শান্তিগঞ্জ

আপলোড সময় : ২৪-১১-২০২৫ ১২:০২:৪০ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২৪-১১-২০২৫ ১২:০৮:২২ পূর্বাহ্ন
শামস শামীম::
২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট একনেকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও শান্তিগঞ্জে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণসহ দেশে ৫০টি কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন হয়েছিল। ৩ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এই প্রকল্পে শান্তিগঞ্জ ও তাহিরপুর উপজেলা এই দুটি চূড়ান্ত ছিল।
২০২৮ সালের মধ্যে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাস্তবায়নের নির্দেশনা থাকলেও এই দুটি উপজেলায় আর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ হবেনা বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শান্তিগঞ্জে বিষয়টি এখনো দোলাচলে থাকলেও তাহিরপুরের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আর নির্মাণ হচ্ছেনা। তাহিরপুরের কেন্দ্রটি জগন্নাথপুরে নিয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত প্রস্তাব দিয়ে গণপূর্ত কর্তৃপক্ষকে ভবন নির্মাণে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিদেশ গমনেচ্ছু ও স্বল্প ও অশিক্ষিত তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য আবাসিক এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হয়। বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ৫০ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দেশের, বিশেষ করে গ্রাম ও উপজেলা স্তরে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলছে সরকার। আবাসিক ও একাডেমিক এই কেন্দ্রের মাধ্যমে যুবক-যুবতীদের কারিগরি দক্ষতা বাড়িয়ে তাদের কর্মসংস্থানে যুক্ত করাই প্রকল্পের লক্ষ্য। বিশেষ করে বিদেশ গমনেচ্ছু যুবদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করাই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।

সূত্র জানায়, এই প্রকল্পে সারাদেশের ৫০টি কেন্দ্র নির্মাণে একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে তাহিরপুর উপজেলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণে চূড়ান্ত অনুমোদনও দেয় জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো। অপরদিকে শান্তিগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণে একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদনসহ নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণের জন্যও কাজ শুরু হয়েছিল। তবে শান্তিগঞ্জের প্রশাসনিক অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন ছিল।

জানা গেছে, সম্প্রতি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো তাহিরপুরে কেন্দ্র নির্মাণ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। তাহিরপুরে কেন্দ্রটি নির্মিত হলে প্রশিক্ষণার্থী পাওয়া যাবেনা এমন তুচ্ছ কিছু কারণে তাহিরপুরের বদলে এটি জগন্নাথপুরে নির্মাণের চূড়ান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। চলতি মাসে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সুনামগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগকে কেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণে চিঠি পাঠিয়েছে। দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক অনুমোদনও। অন্যদিকে একই প্রকল্পে শান্তিগঞ্জেও কেন্দ্র নির্মাণে একনেকে অনুমোনের পর সুনামগঞ্জ সিলেট-সড়কের পাশে জমিও প্রস্তুত ছিল। কিন্তু শান্তিগঞ্জে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ভবন নির্মাণের প্রশাসনিক অনুমোদনও দেওয়া হচ্ছে না।
এই দুটি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাতিল হলে লাখো বেকারের স্বপ্নপূরণ বিলম্বিত হবে এবং তারা দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে ওঠতে প্রতিবন্ধকতার শিকার হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট বাজারের সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী আবুল হোসেন বলেন, তাহিরপুর অবহেলিত জনপদ। একনেকে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প পাশ হওয়ার পর তুচ্ছ কারণে আমাদের ওখান থেকে প্রতিষ্ঠানটি কেটে নিয়ে অন্যত্র নির্মাণ করা হবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। সরকার নতুন করে আরো প্রতিষ্ঠান করুক, আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদেরটা কেটে নিবে কেন? তাহিরপুর উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুনাব আলী বলেন, অবহেলিত তাহিরপুরে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার নির্মিত হবে, বেকার যুবক যুবতি প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হয়ে দেশ বিদেশে কাজ করবে - এই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম আমরা। কিন্তু এখন শুনছি আমাদের কেন্দ্রটা কেটে আরেক উপজেলায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। তাহিরপুরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তাহিরপুরেই নির্মাণ করতে হবে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ও জেলা বিএনপির সদস্য আনসার উদ্দিন বলেন, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যত বেশি হবে, ততো আমাদের বেকার জনশক্তি প্রশিক্ষণ পেয়ে দক্ষ হবে। তারা দেশে ও বিদেশে কাজ করে দেশের উন্নতিতে বিরাট ভূমিকাপ রাখবে। আমাদের শান্তিগঞ্জের কেন্দ্রটাও নির্মাণ করতে হবে। কর্তৃপক্ষ কেন নির্মাণ করবেনা সেটা আমরা জেনে যা করার প্রয়োজন তা করবো।
প্রকল্প পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাহিরপুর উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ হবে না। এটি বাস্তবায়িত হবে জগন্নাথপুর উপজেলায়। আর শান্তিগঞ্জ উপজেলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়েও কোনও সিদ্ধান্ত নেই। আদৌ এখানে হবে কি না আমি স্পষ্ট বলতে পারবো না।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com