অবৈধ ক্রাশার মেশিন বন্ধে পদক্ষেপ নিন

আপলোড সময় : ২৩-১১-২০২৫ ১১:৪৫:০১ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৩-১১-২০২৫ ১১:৪৫:০১ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জের ছয় উপজেলায় দুই শতাধিক অনুমোদনহীন ক্রাশার মেশিন যে অবাধে চলছে - এটি শুধু আইন অমান্য নয়; এটি ভয়াবহ পরিবেশ ধ্বংস, জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় এবং রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ক্ষতির একটি নির্মম উদাহরণ। আদালতের নির্দেশনা, সরকারি নীতিমালা, পরিবেশ অধিদপ্তরের সতর্কবার্তা- সব কিছুই যেন ঠুনকো কাগুজে নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর তার সুযোগে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী, স্থানীয় প্রভাবশালী মহল এবং নীরব প্রশাসনিক স্বজনপ্রীতির মেলবন্ধনে গড়ে উঠেছে পাথর ভাঙার এই অবৈধ সাম্রাজ্য। ২০১৯ সাল থেকে স্টোন ক্রাশার লাইসেন্স বন্ধ। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী স্টোন ক্রাশিং জোন স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত নতুন লাইসেন্স বা নবায়নও সম্ভব নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো- সরকার যখন লাইসেন্স দেয় না, তখন কিভাবে দিন-রাত সরব ক্রাশার মেশিন? কার নির্দেশ, কার সাহস, কার নীরব অনুমতিতে লোকালয়ের পাশে, নদীর তীরে, কৃষিজমির মাঝখানে এই বিপজ্জনক মেশিনগুলো বেপরোয়াভাবে চলছে? এটা কি কেবল ব্যবসায়ীদের দোষ - নাকি এর সঙ্গে যুক্ত আছে প্রশাসনের চোখ বুজে থাকা বা দেখেও না দেখার প্রবণতা? যত্রতত্র স্থাপিত এসব মেশিন বাতাস, পানি ও মাটিকে বিপজ্জনকভাবে দূষিত করছে। শব্দদূষণে শিশু ও বৃদ্ধরা কানে কম শুনছেন, ধুলাবালুতে বাড়ছে চর্মরোগ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট। কৃষিজমির মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে, নদীর তীর ভাঙছে, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে - যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ হুমকি। একদিকে আমরা পরিবেশ রক্ষার কথা বলি, অন্যদিকে আমাদের নাকের ডগায় ঘটে চলা এই ধ্বংসযজ্ঞ রোধে কার্যকর ভূমিকা দেখি না - এ যেন রাষ্ট্রীয় উদাসীনতার প্রকাশ। প্রতি ক্রাশার মেশিনে বছরে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা রাজস্ব পাওয়ার কথা। পাঁচ বছরে কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব হাতছাড়া হয়েছে। একদিকে সরকার রাজস্ব আদায়ের নানা উদ্যোগ নেয়, অন্যদিকে এমন একটি বৃহৎ খাত থেকে রাজস্ব হারানো অত্যন্ত দুঃখজনক। এই ক্ষতির দায় কে নেবে? আমরা মনে করি, পরিবেশ অধিদপ্তর ৫৭টি ক্রাশার মেশিনে জরিমানা করলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। প্রশ্ন হলো- জরিমানা কি লাইসেন্সের বিকল্প? জরিমানা দিয়ে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ কি আইনের অপব্যবহার নয়? জব্দের ঘোষণা কাগজে থাকলেও মাঠে দেখা যাচ্ছে- মেশিন চলছে, ধুলা উড়ছে, নদীর তীর ভাঙছে। ২০১৬ সালে নীতিমালা প্রণয়ন করা হলেও আজ পর্যন্ত স্টোন ক্রাশিং জোন স্থাপিত হয়নি। উপযুক্ত জায়গা নির্ধারণ, পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা, শব্দ নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন - এসব কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। ফল হিসেবে- আদালতের আদেশ অমান্য হচ্ছে, সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, স্থানীয় মানুষ অসুস্থ হচ্ছে, কৃষিজমি ও নদী ধ্বংস হচ্ছে। আমরা দাবি জানাই- অবিলম্বে স্টোন ক্রাশিং জোন স্থাপন করতে হবে। লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে হবে। লোকালয়ে সব অবৈধ ক্রাশার মেশিন স¤পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। দোষী ব্যবসায়ীই নয় - প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করতে হবে। এই অবৈধ ক্রাশার মেশিন কেবল পাথর ভাঙছে না, ভেঙে দিচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রকৃতি, নদী তীর - সব কিছু। রাষ্ট্রের আইনকে অবজ্ঞা করে চলা এই ব্যবসা বন্ধ না করলে সুনামগঞ্জের পরিবেশগত বিপর্যয় একসময় আর ফেরানো যাবে না। সরকার, প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে এখনই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নয়তো ভবিষ্যতে এর দায় সবাইকে বহন করতে হবে।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com