স্টাফ রিপোর্টার ::
হেমন্তের সন্ধ্যা। শীতের আমেজ। কেউ কেউ চলে আসেন নির্ধারিত সময়ের আগেই। গরম কফি পানের সঙ্গে তারা মেতে ওঠেন খুশগল্পে। এক সময় নানা শ্রেণিপেশার মানুষে মুখর হয়ে ওঠে মিলনায়তন। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান।
সুনামগঞ্জে প্রথম আলো’র ২৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সুধী সমাবেশের শুরুটা এমনই ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান হয়।
এতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, রাজনীতিক, শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সংস্কৃতিকর্মী, আইনজীবী, নারী অধিকার আন্দোলনের নেত্রী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন অংশ নেন। তারা প্রথম আলোর কাছে তাদের প্রত্যাশা তুলে ধরার পাশাপাশি নানা পরামর্শ দেন, প্রশ্ন করেন।
সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।
সুনামগঞ্জে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক খলিল রহমানের সঞ্চালনায় সুধী সমাবেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল আহাম্মেদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন মনজুর চৌধুরী, সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ মোনাওয়ার আলী, প্রবীণ শিক্ষক যোগেশ্বর দাস, কবি ও লেখক সুখেন্দু সেন, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সৈয়দ মহিবুল ইসলাম, জেলা মহিলা পরিষদের সহসভাপতি সঞ্চিতা চৌধুরী, সুনামগঞ্জ মুক্তি সংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. চান মিয়া ও অ্যাডভোকেট তৈয়বুর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি নাদীর আহমদ, ব্যাংক কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন লিটন, শিক্ষক শামসুল আহমদ, উন্নয়নকর্মী সালেহিন চৌধুরী, পৌর জামায়াতের আমির আবদুস সাত্তার মো. মামুন, আইনজীবী মতিয়া বেগম, জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শরিফা আশ্রাফী শম্পা, বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি অনিসিমাস চৌধুরী, কবি ওবায়দুল মুন্সী, বন্ধুসভার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহিদুর রহমান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, প্রথম আলো সত্য বলে। এই সত্য বলার সাহস ধরে রাখতে হবে। প্রথম আলোকে মানুষ বিশ্বাস করে। মানুষ প্রথম আলোর খবরে আস্থা পায়। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময়ে মানুষ প্রথম আলোর কাছ থেকেই সত্য জেনেছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গ টেনে অনেক বক্তা বলেন, মানুষ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। মানুষ দেশে শান্তি ও স্বস্তি চায়। নির্বাচনের দিনগুলোতে প্রথম আলোকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে। গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া কলেজ জীবন থেকে প্রথম আলো পড়েন, পড়াশোনা পাতা কেটে রাখতেন। তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে বেড়ে ওঠেছেন জানিয়ে বলেন, আজ সুধী হিসেবে ডেকেছেন এ জন্য ধন্যবাদ। প্রথম আলো দেশের কথা, মানুষের কথা বলছে; ভবিষ্যতে মানুষের পাশে থেকে সত্য বলে যাবে, এটাই প্রত্যাশা।
পুলিশ সুপার তোফায়েল আহাম্মেদ বলেন, প্রথম আলোর সঙ্গে কিন্তু মানুষ সব সময় ছিল। এ কারণেই প্রথম আলো প্রথম। প্রথম আলোর সঙ্গে মানুষ আছে।
প্রবীণ আইনজীবী হুমায়ুন মনজুর চৌধুরী বলেন, প্রথম আলোকে হৃদয়ে ধারণ করি। আমরা বিশ্বাস
করি প্রথম আলোর সংবাদ সত্য। যখন শুনি প্রথম আলো বিক্রি হবে তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। প্রথম আলো সব বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যাবে। প্রথম আলোর সঙ্গে আমরা আছি, থাকব।
আইনজীবী সালেহ আহমদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে যেন প্রথম আলো কখনো আপস না করে। এখানে যেন কখনো নিরপেক্ষ ভূমিকা না রাখে।
সমাজ ও দেশকে এগিয়ে নিতে প্রথম আলোর ওপর মানুষ যে দায়িত্ব দিয়েছে সেটি প্রথম আলোকে পালন করতেই হবে বলে মন্তব্য করেন নারী নেত্রী সঞ্চিতা চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে পাঠকদের প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পাঠকেরা প্রথম আলোর কাছে তাদের প্রত্যাশাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন। পাঠকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রথম আলো’র নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। সাজ্জাদ শরিফ বলেন, আমরা পাঠকের মতামতকে গুরুত্ব দিই, আপনাদের জন্য, পাঠকদের জন্য প্রথম আলো আজ এই পর্যায়ে এসেছে।
সাজ্জাদ শরিফ বলেন, আমরা কোনো সরকারের সময়ই শান্তিতে ছিলাম না, স্বস্তিতে ছিলাম না। আপনারই আমাদের সাহস, শক্তি। প্রথম আলোর সব স্বীকৃতি, প্রাপ্তি আপনাদের সমর্থন, সাহস ও সহযোগিতার জন্য। সব অপ্রচার, অপচেষ্টাকে পেছনে ফেলে প্রথম আলো বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চায়।
তিনি আরো বলেন, পাঠকেরাই প্রথম আলোর শক্তি। প্রথম আলো সব সময় পাঠকের মতামতের গুরুত্ব দিয়ে থাকে। পাঠকই প্রথম আলোর প্রাণ।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে অতিথি ও সুধীজনদের প্রথম আলো’র পক্ষ থেকে উপহার এবং আপ্যায়ন তুলে দেওয়া হয়। সমাবেশ আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করেন সুনামগঞ্জ বন্ধুসভার সদস্যরা।