সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোর বিরুদ্ধে পরিচালিত সাম্প্রতিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান আবারও প্রমাণ করেছে- খাদ্যে ভেজাল, অসচেতনতা ও অনিয়ম এখনও উদ্বেগজনকভাবে বিদ্যমান। বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান হৃদয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘনের দায়ে বেশ কয়েকটি হোটেলকে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার পরিমাণ মাত্র ছয় হাজার টাকা হলেও এর বার্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভিযানে দেখা গেছে, শহরের বহু হোটেল ও রেস্তোরাঁয় ভোক্তা সম্পূর্ণ না খাওয়া ‘উচ্ছিষ্ট’ ভাত পুনরায় সংরক্ষণ করে নতুন গ্রাহকদের কাছে পরিবেশন করা হচ্ছিল। খাদ্যের এই অপব্যবহার শুধু অনৈতিকই নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। বাসি খাবার থেকে সহজেই ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে পারে, যা ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ নানাবিধ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। একটি সভ্য সমাজে নাগরিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
এই বাস্তবতায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে প্রশ্ন হলো- এ ধরনের অভিযান কি যথেষ্ট? উত্তর স্পষ্ট- না। কারণ জরিমানার ভয়ে একদিন বন্ধ থাকা অনিয়ম পরদিনই ফিরে আসতে পারে। তাই এই অভিযানকে নিয়মিত করতে হবে এবং নজরদারির আওতা বাড়াতে হবে। শুধু জরিমানাই নয়, প্রয়োজন মালিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিলের মতো কঠোর পদক্ষেপ।
এখানে ভোক্তাদের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি সচেতন হন, অভিযোগ করেন এবং প্রতারণার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তবে ব্যবসায়ীরা কৌশলে অনিয়ম করার সাহস পাবেন না। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের কার্যকর প্রয়োগ, প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ এবং জনগণের অংশগ্রহণ - এই তিনের সমন্বয়েই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে- এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই এবং আশা করি অন্যান্য উপজেলাতেও একইভাবে কঠোর তদারকি জোরদার করা হবে। জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে খাদ্য পরিবেশনায় অনিয়মের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের এখনই সময়।
খাদ্য নিরাপত্তা কোনো দয়া নয়, এটি জনগণের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার রক্ষায় প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান ও কার্যকর পদক্ষেপ চলমান থাকুক - এই প্রত্যাশাই রইল।