সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে কর্মরত ওয়ার্ডবয় মো. পিয়াল হোসেনের ওপর হামলার ঘটনা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের চলমান নিরাপত্তাহীনতা, দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য এবং শাস্তির অভাবের প্রমাণ। স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলা যেন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হচ্ছে। অথচ যারা দেশের সবচেয়ে দুর্বল ও বিপন্ন মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে জীবনরক্ষার কাজ করে যাচ্ছেন, তাদেরই যদি নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে স্বাস্থ্যখাত টিকবে কীভাবে?
সদর হাসপাতালের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ১৫০০ থেকে ২০০০ রোগী সেবা নিতে আসেন, যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। ইনডোরেও ২৫০ শয্যার জায়গায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ৫০০’র অধিক রোগীকে। প্রয়োজনীয় ৬৮ জন চিকিৎসকের জায়গায় রয়েছেন মাত্র ৩২ জন। নার্স, টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য পদগুলোতেও একই সংকট। এমন কর্মপরিবেশে থাকা স্বল্পসংখ্যক কর্মীরা যখন সীমাহীন চাপের মধ্যেও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তখন সেসব কর্মীর ওপর হামলা কেবল নিন্দনীয় নয়, বরং মানবিক ও নৈতিকতার চরম লঙ্ঘন।
পিয়াল হোসেনের ওপর হামলা হয়েছে ‘সিরিয়াল ভেঙে আগে এক্সরে করতে না দেওয়ায়’। আরও ভয়াবহ বিষয় হলো- হামলাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে দেরি হওয়া। এ ধরনের উদাসীনতা হামলাকারীদের উৎসাহিত করে, আর স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল ভেঙে দেয়।
হাসপাতালের কর্মীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন- হামলাকারী গ্রেফতার না হলে তারা দিনে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করবেন। এই অবস্থায় রোগীদের ভোগান্তি যে আরও বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু এর দায় বহন করবে কে?
আমরা মনে করি, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিনটি জরুরি বিষয় এখনই নিশ্চিত করতে হবে- প্রথমত: স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে কঠোরভাবে। হাসপাতালে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি প্রয়োগ করতে হবে যেকোনো হামলা বা হুমকির ক্ষেত্রে। দ্বিতীয়ত: দালাল চক্র, প্রভাবশালী মহল ও অরাজক উপাদানকে হাসপাতালে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। তৃতীয়ত: হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাঘাত ঘটানোর সাহস না পায়।
একইসঙ্গে সাধারণ জনগণকেও বুঝতে হবে- হাসপাতাল কোনো যুদ্ধক্ষেত্র নয়, এটি সেবা পাওয়ার জায়গা। ধৈর্য্য, নিয়ম মানা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মান দেখানো প্রতিটি রোগী ও স্বজনের দায়িত্ব। ওয়ার্ডবয় মো. পিয়াল হোসেনের ওপর হামলার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপের দাবি রাখে। প্রশাসন যদি এবারও উদাসীন থাকে, তবে স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অরাজকতার দায় তাদেরই বহন করতে হবে। সুনামগঞ্জসহ দেশের হাসপাতালগুলোতে সেবা নিশ্চিত করতে হলে প্রথমেই সেবাদাতাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। সেই দায়িত্ব রাষ্ট্রেরও, নাগরিকেরও।