শহীদনূর আহমেদ ::
পুলিশ সংগঠনের নাম দিয়ে পাহাড়ের টিলা ক্রয় করে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মো. মোজাম্মেল হক। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় একাধিক পাহাড়ি টিলাসহ প্রায় ২০০ বিঘা জমির মালিক এই পুলিশ কর্মকর্তা। অভিযোগ রয়েছে পুলিশি প্রভাব বিস্তার করে কম মূল্যে ভূমি কেনার পাশাপাশি সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখল করে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের সহায়তায় এ সা¤্রাজ্য গড়েছেন তিনি। সরকার পতনের পর থেকে ডিআইজির বিপুল সম্পত্তি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন স্থানীয়রা বাসিন্দারা।
জানাগেছে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম চিনাউড়া। গ্রামের উত্তর কান্দিগাঁও মৌজার এ পাহাড়ি টিলার মালিক হিসেবে “আনন্দ পুলিশ পরিবার কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ” এর নামে সাইনবোর্ড টানানো থাকলেও স্থানীয়রা এটিকে ‘ডিআইজির টিলা’ হিসেবে জানেন। সাইনবোর্ডে দুইটি উত্তর কান্দাগাঁও মৌজায় ২৫১ ও ৫০২ খতিয়ানে প্রায় ৭৮৭.৫ একর ভূমি উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে ‘ডিআইজির টিলা’র দখলে রয়েছে প্রায় ২০ একর ভূমি। অভিযোগ রয়েছে- পুলিশি ক্ষমতার দাপট আর নিজের গড়া সিন্ডিকেটের প্রভাব খাটিয়ে কম দামে জমি ক্রয়ের পাশাপাশি সরকারি ভূমি ও নিরীহ ব্যক্তিদের ভূমি দখল করে তার কাঁটার বেড়া দিয়েছেন পুলিশ হেডকোয়ার্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক।
সূত্র জানায়, স্ত্রী ফারজানা মোজাম্মেল-এর আনন্দ প্রোপার্টিজ লিমিটেড এর নামে রঙ্গারচর ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় চিনাউড়া, হাসাউড়া, বনগাঁওয়ের একাধিক পাহাড়ি টিলা, পার্শ্ববর্তী কাংলার হাওরে ফসলি জমিসহ ২০০ বিঘা জমি ক্রয় করেন অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হক। আইনের মারপ্যাঁচ এড়াতে কৌশলে এই বিপুল সম্পদের মালিকানা স্ত্রী ও পরিবারের অন্যদের নামে থাকলেও এসব সম্পত্তি মূলত ডিআইজি পরিচালনা করেন। আর সামনে রাখেন অস্তিত্বহীন আনন্দ পুলিশ পরিবার বহুমুখী সমবায় সমিতির নাম। যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্ত্রী ফারজানা মোজাম্মেল। পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে সমবায় সমিতির আড়ালে বিলাসবহুল রিসোর্ট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন ডিআইজি মোজাম্মেল। সরকার পতনের পর থেকে ডিআইজির এই সম্পত্তি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
চিনাউড়া গ্রামের এখলাছুর রহমান বলেন, আমরা শুধু জানি এ পাহাড়ের টিলা ডিআইজি সাহেবের। আমি কখনো দেখিনি, খালি নাম শুনছি। তাইনের দাপটে আমরা এলাকায় টিকতাম পারিনা। স্থানীয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কম দামে মানুষের জমি ক্রয় করে জবরদস্তি করে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকদের জমি দখল করেছেন তিনি। তার জমিতে কেউ ঢুকলেই পুলিশ দিয়ে ভয় দেখানো হতো।
তালেব আলী নামের স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ডিআইজি সাব এই এলাকায় ৫ কেয়ার কিনে ২০ কেয়ার জোরে দখল করছেন। অনেক খাস জমি তার দখলে। কেউ ভয়ে এতোদিন কথা বলতে পারেনি। কথা বললেই তিনি পুলিশ দিয়ে ভয় দেখাতেন। এখন আমরা সরকারি জায়গা উদ্ধার চাই।
উন্নয়নকর্মী সালেহিন চৌধুরী শুভ বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা কি করে এতো সম্পত্তির মালিক হন। এটি তদন্ত করে দেখার দরকার। আয় বহির্ভূত সম্পত্তি হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
রঙ্গারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হাই বলেন, আমার জানা মতে ডিআইজি ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় জমিতে বিপুল সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। যে সম্পত্তিতে অনেক ওয়ারিশানদের হক রয়েছে। তিনি জোরদখল করে অনেক সরকারি খাস জমি দখল করে নিয়েছেন। মানুষ এখন মুখ খুলতে শুরু করেছে। অনেকেই তাদের জমি বুঝে নিতে চায়। এ ব্যাপারে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
ডিআইজির পাহাড়ি টিলাসহ সকল সম্পত্তির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
পাহাড়ি টিলার বিষয়ে জানতে সাইনবোর্ডে থাকা মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করা হলেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ডিআইজি টিলার কেয়ারটেকার আদম আলীর মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, এই টিলা ডিআইজি স্যারের। আমি মাসিক বেতনে টিলা দেখাশুনা করি। সম্প্রতি কিছু মানুষ টিলা দখল করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে স্যারকে জানিয়েছি। তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।