সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিকে একটি বহুমাত্রিক জনবান্ধব শিল্পচর্চার পাটাতন হিসেবে গড়ে তোলার কথা জানালেন একাডেমির নতুন মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। গত বুধবার বিকেলে একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এই মত দেন তিনি। যোগদানের দ্বিতীয় দিনে শিল্পকলা একাডেমিকে পুনরায় সচল, সংস্কার ও রূপান্তরের রূপরেখা দিয়েছেন তিনি।
সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি হবে বিবিধ সংস্কৃতির হাজার মালভূমি দিয়ে গঠিত সৃষ্টি-কৃষ্টির এক যৌথ জমিন। বহু জাতি, বহু ভাষা, বহু ধর্ম, বহু ভাবাদর্শভিত্তিক সৃষ্টি-সৌন্দর্য-আনন্দের এক জনগণতান্ত্রিক শিল্প-পরিসর রূপে গড়ে উঠবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। দেশজ সংস্কৃতি ও বিশ্ব-সংস্কৃতির যোগ সাধন করে এক নতুন দিনের সাংস্কৃতিক অনুশীলনের সেতুবন্ধন ঘটাবে।
মহাপরিচালক একাডেমির সংস্কার ও রূপান্তরের নানা ধাপ উল্লেখ করেছেন। একাডেমির আইন নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আইন, ১৯৮৯ এর ধারা ২ থেকে ধারা ১৩ এর ৩ নং উপধারা পর্যন্ত কোথাও বস্তুত এই একাডেমি বলতে রাষ্ট্র কী মনে করে এবং এর ভিশন (রূপকল্প) কী, তা স্পষ্ট হয় না।
সৈয়দ জামিল আহমেদ জানান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বর্তমান আইনের ৪ থেকে ১৩ নং ধারা পর্যন্ত স্থগিত বা বাতিল করার প্রয়োজনীয়তার দিকেও দৃষ্টি দেওয়া দরকার। শুধু তা-ই নয়, একাডেমির ভিশন নির্ণয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পূর্ববর্তী রেজিমে সৃষ্ট একাডেমির প্রাতিষ্ঠানিক স্বৈরতান্ত্রিক পরিচালন-পদ্ধতি ও স্বভাবকে বদলে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রীয় সাংস্কৃতিক একাডেমিতে পরিণত করতে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। এর জন্য দীর্ঘ মেয়াদে একে একটি কার্যকর বহুত্ববোধের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে।
মহাপরিচালক মনে করেন, সংস্কৃতি খাতে জিডিপির কমপক্ষে ৩ শতাংশ বরাদ্দ দিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিকে আর্থিকভাবে সক্ষম ও স্বয়ংস¤পূর্ণ করে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। একাডেমির বিকেন্দ্রীকরণের ওপরও জোর দিতে চান সৈয়দ জামিল আহমেদ। তিনি আরও জানান, মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চায় সব ধরনের কট্টরপন্থী অসহিষ্ণু মতাদর্শিক ও ধর্মীয় বাধা এবং প্রতিবন্ধকতা অপসারণ ও মোকাবিলা করতে হবে।
সৈয়দ জামিলের মতে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও সরকারি যথেচ্ছাচারমূলক ইচ্ছাপূরণের তল্পিবাহক প্রতিষ্ঠানে পর্যবসিত হওয়ার দুষ্টচক্র থেকে শিল্পকলা একাডেমিকে বের করে আনা এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি। শিল্পকলা একাডেমিকে এই দেশের জনগণের বহুত্ববোধক সাংস্কৃতিক ইচ্ছার কাছে দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠান রূপে গণ্য করতে হবে।
জামিল আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিকে বিশ্বযোগ ঘটানোর কালচারাল ডিপ্লোমেসি ও গ্লোবাল ক্রিয়েটিভিটির ভরকেন্দ্র হিসেবেও ভাবতে হবে।
একাডেমির সব ধরনের দুর্নীতির কারণ চিহ্নিত করে সেগুলো নিশ্চিহ্নকরণের উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করেই একাডেমির নতুন যাত্রা শুরু হবে বলে জানান নতুন মহাপরিচালক। শিগগির ক্ষতিগ্রস্ত ২১টি জেলা শিল্পকলা একাডেমি সচল করতে সফর করবেন তিনি।
স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে একাডেমিকে তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে কাজ করবেন তিনি। স্বল্প মেয়াদে ৩টি করণীয়র কথা জানান মহাপরিচালক। এক. দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তৈরি এবং একাডেমির পরিষদে আমলা বাদ দিয়ে শিল্পীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; দুই. সব খাতে আর্থিক স্বচ্ছতা তৈরি; তিন. যত দ্রুত সম্ভব একাডেমির কার্যক্রম শুরু করা এবং সব মঞ্চ, রিহার্সাল রুম খুলে দেওয়া।
মতবিনিময়ের শুরুতে গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।