সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বিএনপি নতুন করে শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করছে। নির্বাচন পর্যন্ত পাশে থাকতে শরিকদের কাছ থেকে অঙ্গীকার চায় বিএনপি। শরিকরাও অতীতের মতো ভবিষ্যতে একসঙ্গে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো মিলে একসঙ্গে নির্বাচন করা হবে। ক্ষমতায় গেলে শরিকদের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। এই সরকারই ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনা করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণ-অধিকার পরিষদের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির আলাদা আলাদা বৈঠক হয়েছে। এর আগে সোমবার গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণ-অধিকার পরিষদের একাংশ ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট-এনডিএমের সঙ্গে বৈঠক করে।
কয়েক দিন আগে গণফোরাম, লেবার পার্টিসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠক শেষ হয়েছে। এসব বৈঠকে সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ৩১ দফা রূপরেখা বাস্তবায়নে তৃণমূলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি ও শরিকরা। এটা বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা।
বৈঠক প্রসঙ্গে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত আছি। ক্ষুদ্র পরিসর থেকে সর্বোচ্চ অবদান রাখার চেষ্টা করেছি। কখনো বিএনপির জোট ছেড়ে যাইনি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার হাত ধরে বিজয় এসেছে। এখন হয়তো আন্দোলন কর্মসূচি নেই। তবে সামনে নির্বাচনের বড় ইস্যু রয়েছে। আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েমের জন্য নির্বাচন অপরিহার্য। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচন দিতে পরোক্ষভাবে চাপে রাখতে হবে। সামনের এই সময়ে বিএনপির পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছি। তিনি জানান, বিএনপিসহ শরিকরা খুব একটা ফুরফুরে মেজাজে নেই। কারণ এই সরকারের ধীরগতি কর্মকা- ভাবিয়ে তুলেছে। সেই সঙ্গে সম্প্রতি নতুন নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে উঠছে। এগুলো আমাদের জন্য শঙ্কার। আওয়ামী লীগহীন মাঠে বিরোধী একটা পক্ষ দাঁড়িয়ে যেতে পারে। এ জন্য বিএনপি সব শরিককে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চায়।
আরেকটি শরিক দলের নেতা বলেন, সরকার সংস্কারে গুরুত্ব দিলেও আমাদের সবাইকে নির্বাচনের দিকে ধাবিত হতে হবে। বিএনপি এতে জোর দেওয়ার কথা বলেছেন। আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ থাকা শরিকদের নিয়ে বিএনপি জাতীয় সরকার গঠন করবে। যদিও এর কোনো ধারণা বিএনপি এখনও দেয়নি।
গণ-অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ফারুক হাসান বলেন, জাতীয় সরকার ইস্যুতে বেশি আলাপ হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনের সবাই জাতীয় সরকারে থাকবে। নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ সবাই মিলে এর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফার মধ্যে জাতীয় সরকার নিয়ে বক্তব্য আছে। বিএনপি আশ্বস্ত করেছে জাতীয় সরকারে সবার অংশগ্রহণ থকাবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারকে যৌক্তি সময় দিতে হবে। নির্বাচন আয়োজনের জন্য যতটা সংস্কার প্রয়োজন তা করতে সময় দিতে হবে। তবে কোনো সময়সীমা দেওয়া উচিত হবে না। এতে সরকারের বিরাগভাজন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। নতুন নতুন দল এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে আসেনি। তারা সংস্কারে সহযোগিতার কথা বলছে। এখন সবকিছু পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
গণফোরামের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো মিলে একসঙ্গে নির্বাচন করা হবে। পরে ক্ষমতায় গিয়ে সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। মানে একসঙ্গে নির্বাচন একসঙ্গে সরকার। এ জন্য বিএনপি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে জোর দিয়েছে। এই সময়ে এসে ঐক্যে ফাটল ধরানো যাবে না। জাতীয় ঐক্য ধরে রেখে জাতীয় সরকার হতে হবে। কেননা দেশে গণতান্ত্রিক সরকার জরুরি। এ জন্য দরকার সুষ্ঠু নির্বাচন। বর্তমান সরকারকে কাজে সহযোগিতা করে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যেতে হবে।
এনডিএমের দফতর সম্পাদক জাবেদুর রহমান বলেন, ৩১ দফা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় সরকারের বিস্তারিত আরও পরে ঠিক করা হবে। এমন বৈঠক চলবে। আগে বৈঠক হতো আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করতে, এখন হচ্ছে ভবিষ্যতে কীভাবে আমরা জনগণের আরও কাছাকাছি পৌঁছাতে পারব।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পরবর্তীর বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নতুন ভাবনা প্রত্যাশা পূরণে যারা যুগপৎ আন্দোলনে ছিল তাদের নিয়ে করণীয় ঠিক করতে বসেছি। সবার আস্থা আছে সরকারের ওপর। তাদের সার্বিক সহযোগিতা দেব। রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় তা নিয়ে কথা হয়েছে। ৩১ দফা সবাই মিলে করেছি। বাস্তবায়নও একসঙ্গে করব। জাতীয় সরকার বাস্তবায়নে একসঙ্গে কাজ করব। মৌলিক সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের প্রত্যাশা করি।
এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, নতুন গণতন্ত্র মানুষের হাতে তুলে দিতে হবে। ৩১ দফার মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কার রয়েছে। সবাই মিলে ৩১ দফা বাস্তবায়নে কাজ করব।