শামস শামীম::
সুনামগঞ্জের ধোপাজান নদীতে ড্রেজারে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলাকে তোয়াক্কা না করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বালু পাথর মহাল একটি কোম্পানিকে এক বছরের জন্য বিধি বহির্ভূত ইজারা দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের ওই কোম্পানি গত ১১ অক্টোবর থেকে রাতে অন্তত অর্ধশত ড্রেজারে সিলিকা বালু লুট করে নিচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার বালু লুট করেছে তারা। নির্ধারিত এলাকা থেকে দিনে একবার ভিট মাটি উত্তোলন করতে বিআইডব্লিউটিএ অনুমোদন দিলেও কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কোম্পানি স্থানীয় বালু লুটকারী দিয়ে রাতে লুট করে নিচ্ছে মূল্যবান খনিজ বালু। এতে হুমকিতে পড়েছে নদী তীরবর্তী গ্রাম। বঞ্চিত হচ্ছে নদীর উপর নির্ভরশীল অন্তত ২০ হাজার বারকি শ্রমিক।
স্থানীয় বারকি শ্রমিক, নদী তীরবর্তী মানুষ ও পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা প্রতিবাদ করায় তাদেরকে হুমকি ধমকি দেওয়া হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতাকর্মী সূত্রে জানা গেছে, অতীতে ইজারাদাররা সনাতন পদ্ধতির বদলে ড্রেজারে বালু লুট করায় পরিবেশ আন্দোলন বেলা ২০১২ সালে মামলা দায়ের করে। আদালত ড্রেজার নিষিদ্ধ করে। কিন্তু ইজারাদার আবারও ড্রেজার ব্যবহার করায় বেলা ২০১৪ সালে আদালত অবমাননার মামলা করে। মামলা নং ২২৪। এদিকে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় ২০১৮ সাল থেকে ধোপাজান বালু-পাথর মহাল ইজারা বন্ধ রয়েছে। এতে চলতি অর্থ বছর পর্যন্ত প্রায় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। সম্প্রতি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বালু ও পাথর মহালটি গোপনে লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে ভিট মাটি উত্তোলনে বিধি বহির্ভূত অনুমতি দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। গত ১১ অক্টোবর থেকে রাতে অন্তত ৫০টি ড্রেজারে মাটির বদলে বালু উত্তোলন করে বিপন্ন করে ফেলছে নদীটিকে। প্রতি রাতে ড্রেজারে অন্তত ২ লাখ ৫০ হাজার ফুট বালু লুট করছে। যার বাজার মূল্য ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা।
সরেজমিনে নদীতে গিয়ে দেখা গেছে, অক্ষয়নগর থেকে ডলুরা পর্যন্ত নদীর দুই তীরে ড্রেজারে রাতে বালু লুট করা হচ্ছে। দিনেও ড্রেজারে মাটির বদলে বালু উত্তোলন চলছে। এই বালু কার্গো ও বাল্কহেড নৌকায় তুলে সুনামগঞ্জ শহরের ওয়েজখালি, জলিলপুর, জয়নগরসহ বিভিন্ন স্থানে স্তূপ করে ঢাকাসহ সারাদেশে কার্গোতে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএর দুর্নীতিবাজ চক্র মোটা অংকের সুবিধা পেয়ে সিলিকা বালু লুটের সুযোগ করে দিয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী, নদীর উপর নির্ভরশীল বারকি শ্রমিক ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। নদীটিতে বালু মজুদের পরিমাণ নিয়ে কোনও গবেষণা না করেই অনুমোদন দেওয়ায় এটিকে প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা।
জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই বাংলাদেশ আভ্যন্তরিণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ সিলেট আঞ্চলিক দফতর লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ব্যবস্থাপনা অংশীদার মুজাহিদুল ইসলাম মুরাদকে ধোপাজান নদী থেকে ভিট মাটি উত্তোলনে লিখিত অনুমোদন দেয়। সিলেট-ঢাকা সড়কে মাটির জন্য মাত্র ৬৬ লক্ষ ৭৬ হাজার ৯৪২ টাকায় রাজস্ব ধার্য্য করে অনুমোদন দেওয়া হয়। অথচ তারা এক রাতেই ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার বালু লুট করে নিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের একাধিক নৌঘাট ইজারা নেয় একটি চক্র। তারাই বিআইডব্লিউটিএ’র দুর্নীতিবাজ চক্রকে রিজার্ভ ধোপাজান নদীটি ইজারা দিতে প্রস্তাব দেয় এবং মোটা অংকের ঘুষ প্রদান করে। গত ২২ জুন আবেদনের পর ৯ জুলাই অনুমোদন দেয় বিআইডব্লিউটিএ। বিআইডব্লিউটিএ’র দুর্নীতিবাজ চক্রকে ম্যানেজ করে বালু লুটকারীরা এলাকার নাম উল্লেখ না করে কৌশলে বিশাল মৌজার কথা উল্লেখ করে ড্রেজারে নদীর বালু লুটের কৌশল নেয়। অনুমতিপত্রে দেখা গেছে নির্ধারিত এলাকায় বিকেল ৫টার পর ভিট বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাতেই ড্রেজারে বালু লুট করছে তারা। ভিট মাটি ঢাকা-সিলেট সড়কে ব্যবহার করার কথা থাকলেও সড়কে ব্যবহার না করে বাল্কহেড ও কার্গোতে সারাদেশে বিক্রি করছে।
জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ ও ইজারাদার বালু লুটে সহযোগিতা নেয় আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ‘বালুখেকো’ হিসেবে পরিচিত স্থানীয় একাধিক চক্রের। তারাই ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে রাতে নদীটি থেকে বালু লুট করছে।
সরেজমিন এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, ধোপাজান নদী তীরবর্তী গ্রামের মানিক মিয়া, উড়ারকান্দা গ্রামের মনা, রমজান আলী ও জাকির হোসেন, মণিপুরী হাটির আল আমিন, জায়েদ আলী, বাবুল, কাইয়ারগাঁও গ্রামের মকবুল, লালপুর গ্রামের মমিন, বাদাঘাটের সুমন, অমল, ইকবাল ও সাজু মিয়াসহ জেলা শহরের আরো কয়েকজন প্রভাবশালী ড্রেজারে বালু লুট করছে।
স্থানীয়রা জানান, ধোপাজান নদীটি ভিটা বালু তোলার অনুমতি বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসন গত ২৪ আগস্ট চিঠি দিয়েছে। জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমতি ছাড়াই বিধি বহির্ভূত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করা হয় ওই পত্রে। তাছাড়া নদীটিতে পাথর মিশ্রিত সিলিকা বালু বলেও উল্লেখ করা হয়। তাই বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমতির ফলে সরকার বিপুল রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতির আশঙ্কার কথা জানানো হয় জেলা প্রশাসনের পত্রে। ওই পত্রটি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো হয়েছিল।
এদিকে প্রশাসন রাতের আঁধারে বালু লুটে ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় শ্রমিক ও পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা শুক্রবার রাতে উড়ারকান্দা পুলিশ ফাঁড়ির কাছে বালু ভর্তি একাধিক বাল্কহেড আটক করেন। আটক নৌকা ছাড়িয়ে নিতে ক্যাডার দিয়ে স্থানীয়দের হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বারকি শ্রমিক নেতা হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানাচ্ছি ধোপাজান নদীটি ইজারা দিয়ে পরিবেশসম্মত সনাতন উপায়ে বালু পাথর আহরণের জন্য। কিন্তু আমাদের দাবি না মেনে সরকার ইজারা বন্ধ রেখে এখন বিধি বহির্ভূতভাবে বিআইডব্লিউটিএ নদীতে ভিট মাটি তোলার কথা বলে খনিজ মন্ত্রণালয়ের কোয়ারি থেকে সিলিকা বালু লুটের অনুমতি দিয়েছে।
সুনামগঞ্জ শ্রমিক আন্দোলনের নেতা সাইফুল আলম সদরুল বলেন, ইতোমধ্যে অন্তত ২৪ কোটি টাকার সিলিকা বালু লুট করে নিয়েছে চক্রটি। মোটা অংকের সুবিধা নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ’র দুর্নীতিবাজ চক্র। বিধি বহির্ভূত এই অনুমোদন আদালত অবমাননার শামিল। কারণ নদীতে ড্রেজার না চালানোর জন্য আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। এই চুক্তি বাতিল না হলে নদীটি ধ্বংস হয়ে যাবে। এলাকায় বিপর্যয় নেমে আসবে। সরকারও হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে।
জনৈক অভিযুক্ত সুমন মিয়ার মোবাইল ফোনে বারবার যোগযোগ করলেও তিনি কল ধরেননি।
লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কর্মকর্তা রাশেদ আলম বলেন, মাটি এবং বালু উত্তোলনের জন্য আমাদের অনুমতি দিয়েছে সরকার। আমরা এ পর্যন্ত তিনদিন বালু তুলে সিলেট-ঢাকা সড়কের কাজের জন্য স্তূপ করছি। রাতে ড্রেজারে বালু উত্তোলনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কেন তোলা হচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যখন তখন তুলতে পারবো। পরে আবার তিনি বলেন, রাতে যারা বালু তোলছে তারা আমাদের কেউ না।
বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসি মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, রাতে ড্রেজারে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পেয়ে আমরা অভিযান চালিয়েছি। আমাদের অভিযানের খবর পেয়ে বালু লুটকারীরা পালিয়ে যায়।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া গনমাধ্যমকে বলেন, খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বালু মিশ্রিত পাথর মহালের বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমতি বাতিলের জন্য স্থানীয়দের একাধিক স্মারকলিপি ও প্রতিবাদ কর্মসূচির বিষয়টি আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। এছাড়াও রাতে ড্রেজারে বালু উত্তোলন করলে অভিযানও চালাচ্ছি। এই মহালটি সিলিকা বালু মহাল হিসেবে গেজেটভুক্ত।
বিআইডব্লিউটিএ সিলেটের সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকার যোগাযোগ করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
সুনামগঞ্জের ধোপাজান নদীতে ড্রেজারে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলাকে তোয়াক্কা না করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বালু পাথর মহাল একটি কোম্পানিকে এক বছরের জন্য বিধি বহির্ভূত ইজারা দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের ওই কোম্পানি গত ১১ অক্টোবর থেকে রাতে অন্তত অর্ধশত ড্রেজারে সিলিকা বালু লুট করে নিচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার বালু লুট করেছে তারা। নির্ধারিত এলাকা থেকে দিনে একবার ভিট মাটি উত্তোলন করতে বিআইডব্লিউটিএ অনুমোদন দিলেও কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কোম্পানি স্থানীয় বালু লুটকারী দিয়ে রাতে লুট করে নিচ্ছে মূল্যবান খনিজ বালু। এতে হুমকিতে পড়েছে নদী তীরবর্তী গ্রাম। বঞ্চিত হচ্ছে নদীর উপর নির্ভরশীল অন্তত ২০ হাজার বারকি শ্রমিক।
স্থানীয় বারকি শ্রমিক, নদী তীরবর্তী মানুষ ও পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা প্রতিবাদ করায় তাদেরকে হুমকি ধমকি দেওয়া হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতাকর্মী সূত্রে জানা গেছে, অতীতে ইজারাদাররা সনাতন পদ্ধতির বদলে ড্রেজারে বালু লুট করায় পরিবেশ আন্দোলন বেলা ২০১২ সালে মামলা দায়ের করে। আদালত ড্রেজার নিষিদ্ধ করে। কিন্তু ইজারাদার আবারও ড্রেজার ব্যবহার করায় বেলা ২০১৪ সালে আদালত অবমাননার মামলা করে। মামলা নং ২২৪। এদিকে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় ২০১৮ সাল থেকে ধোপাজান বালু-পাথর মহাল ইজারা বন্ধ রয়েছে। এতে চলতি অর্থ বছর পর্যন্ত প্রায় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। সম্প্রতি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বালু ও পাথর মহালটি গোপনে লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে ভিট মাটি উত্তোলনে বিধি বহির্ভূত অনুমতি দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। গত ১১ অক্টোবর থেকে রাতে অন্তত ৫০টি ড্রেজারে মাটির বদলে বালু উত্তোলন করে বিপন্ন করে ফেলছে নদীটিকে। প্রতি রাতে ড্রেজারে অন্তত ২ লাখ ৫০ হাজার ফুট বালু লুট করছে। যার বাজার মূল্য ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা।
সরেজমিনে নদীতে গিয়ে দেখা গেছে, অক্ষয়নগর থেকে ডলুরা পর্যন্ত নদীর দুই তীরে ড্রেজারে রাতে বালু লুট করা হচ্ছে। দিনেও ড্রেজারে মাটির বদলে বালু উত্তোলন চলছে। এই বালু কার্গো ও বাল্কহেড নৌকায় তুলে সুনামগঞ্জ শহরের ওয়েজখালি, জলিলপুর, জয়নগরসহ বিভিন্ন স্থানে স্তূপ করে ঢাকাসহ সারাদেশে কার্গোতে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএর দুর্নীতিবাজ চক্র মোটা অংকের সুবিধা পেয়ে সিলিকা বালু লুটের সুযোগ করে দিয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী, নদীর উপর নির্ভরশীল বারকি শ্রমিক ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। নদীটিতে বালু মজুদের পরিমাণ নিয়ে কোনও গবেষণা না করেই অনুমোদন দেওয়ায় এটিকে প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা।
জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই বাংলাদেশ আভ্যন্তরিণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ সিলেট আঞ্চলিক দফতর লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ব্যবস্থাপনা অংশীদার মুজাহিদুল ইসলাম মুরাদকে ধোপাজান নদী থেকে ভিট মাটি উত্তোলনে লিখিত অনুমোদন দেয়। সিলেট-ঢাকা সড়কে মাটির জন্য মাত্র ৬৬ লক্ষ ৭৬ হাজার ৯৪২ টাকায় রাজস্ব ধার্য্য করে অনুমোদন দেওয়া হয়। অথচ তারা এক রাতেই ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার বালু লুট করে নিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের একাধিক নৌঘাট ইজারা নেয় একটি চক্র। তারাই বিআইডব্লিউটিএ’র দুর্নীতিবাজ চক্রকে রিজার্ভ ধোপাজান নদীটি ইজারা দিতে প্রস্তাব দেয় এবং মোটা অংকের ঘুষ প্রদান করে। গত ২২ জুন আবেদনের পর ৯ জুলাই অনুমোদন দেয় বিআইডব্লিউটিএ। বিআইডব্লিউটিএ’র দুর্নীতিবাজ চক্রকে ম্যানেজ করে বালু লুটকারীরা এলাকার নাম উল্লেখ না করে কৌশলে বিশাল মৌজার কথা উল্লেখ করে ড্রেজারে নদীর বালু লুটের কৌশল নেয়। অনুমতিপত্রে দেখা গেছে নির্ধারিত এলাকায় বিকেল ৫টার পর ভিট বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাতেই ড্রেজারে বালু লুট করছে তারা। ভিট মাটি ঢাকা-সিলেট সড়কে ব্যবহার করার কথা থাকলেও সড়কে ব্যবহার না করে বাল্কহেড ও কার্গোতে সারাদেশে বিক্রি করছে।
জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ ও ইজারাদার বালু লুটে সহযোগিতা নেয় আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ‘বালুখেকো’ হিসেবে পরিচিত স্থানীয় একাধিক চক্রের। তারাই ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে রাতে নদীটি থেকে বালু লুট করছে।
সরেজমিন এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, ধোপাজান নদী তীরবর্তী গ্রামের মানিক মিয়া, উড়ারকান্দা গ্রামের মনা, রমজান আলী ও জাকির হোসেন, মণিপুরী হাটির আল আমিন, জায়েদ আলী, বাবুল, কাইয়ারগাঁও গ্রামের মকবুল, লালপুর গ্রামের মমিন, বাদাঘাটের সুমন, অমল, ইকবাল ও সাজু মিয়াসহ জেলা শহরের আরো কয়েকজন প্রভাবশালী ড্রেজারে বালু লুট করছে।
স্থানীয়রা জানান, ধোপাজান নদীটি ভিটা বালু তোলার অনুমতি বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসন গত ২৪ আগস্ট চিঠি দিয়েছে। জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমতি ছাড়াই বিধি বহির্ভূত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করা হয় ওই পত্রে। তাছাড়া নদীটিতে পাথর মিশ্রিত সিলিকা বালু বলেও উল্লেখ করা হয়। তাই বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমতির ফলে সরকার বিপুল রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতির আশঙ্কার কথা জানানো হয় জেলা প্রশাসনের পত্রে। ওই পত্রটি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো হয়েছিল।
এদিকে প্রশাসন রাতের আঁধারে বালু লুটে ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় শ্রমিক ও পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা শুক্রবার রাতে উড়ারকান্দা পুলিশ ফাঁড়ির কাছে বালু ভর্তি একাধিক বাল্কহেড আটক করেন। আটক নৌকা ছাড়িয়ে নিতে ক্যাডার দিয়ে স্থানীয়দের হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বারকি শ্রমিক নেতা হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানাচ্ছি ধোপাজান নদীটি ইজারা দিয়ে পরিবেশসম্মত সনাতন উপায়ে বালু পাথর আহরণের জন্য। কিন্তু আমাদের দাবি না মেনে সরকার ইজারা বন্ধ রেখে এখন বিধি বহির্ভূতভাবে বিআইডব্লিউটিএ নদীতে ভিট মাটি তোলার কথা বলে খনিজ মন্ত্রণালয়ের কোয়ারি থেকে সিলিকা বালু লুটের অনুমতি দিয়েছে।
সুনামগঞ্জ শ্রমিক আন্দোলনের নেতা সাইফুল আলম সদরুল বলেন, ইতোমধ্যে অন্তত ২৪ কোটি টাকার সিলিকা বালু লুট করে নিয়েছে চক্রটি। মোটা অংকের সুবিধা নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ’র দুর্নীতিবাজ চক্র। বিধি বহির্ভূত এই অনুমোদন আদালত অবমাননার শামিল। কারণ নদীতে ড্রেজার না চালানোর জন্য আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। এই চুক্তি বাতিল না হলে নদীটি ধ্বংস হয়ে যাবে। এলাকায় বিপর্যয় নেমে আসবে। সরকারও হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে।
জনৈক অভিযুক্ত সুমন মিয়ার মোবাইল ফোনে বারবার যোগযোগ করলেও তিনি কল ধরেননি।
লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কর্মকর্তা রাশেদ আলম বলেন, মাটি এবং বালু উত্তোলনের জন্য আমাদের অনুমতি দিয়েছে সরকার। আমরা এ পর্যন্ত তিনদিন বালু তুলে সিলেট-ঢাকা সড়কের কাজের জন্য স্তূপ করছি। রাতে ড্রেজারে বালু উত্তোলনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কেন তোলা হচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যখন তখন তুলতে পারবো। পরে আবার তিনি বলেন, রাতে যারা বালু তোলছে তারা আমাদের কেউ না।
বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসি মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, রাতে ড্রেজারে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পেয়ে আমরা অভিযান চালিয়েছি। আমাদের অভিযানের খবর পেয়ে বালু লুটকারীরা পালিয়ে যায়।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া গনমাধ্যমকে বলেন, খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বালু মিশ্রিত পাথর মহালের বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমতি বাতিলের জন্য স্থানীয়দের একাধিক স্মারকলিপি ও প্রতিবাদ কর্মসূচির বিষয়টি আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। এছাড়াও রাতে ড্রেজারে বালু উত্তোলন করলে অভিযানও চালাচ্ছি। এই মহালটি সিলিকা বালু মহাল হিসেবে গেজেটভুক্ত।
বিআইডব্লিউটিএ সিলেটের সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকার যোগাযোগ করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।