
স্টাফ রিপোর্টার ::
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের আসনগুলোতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রবিবার বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এ বৈঠকে বিভাগের চার জেলার ১৯টি সংসদীয় আসনে দলের প্রায় ৮০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক স¤পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী জানান, একক কোনো প্রার্থীকে দল এখনো চূড়ান্ত করেনি। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ডেকে মহাসচিব এ বার্তাই দিয়েছেন, ধানের শীষের মনোনয়ন যে-ই পান, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে। কোনো ধরনের বিভেদ করা যাবে না।
বৈঠকে থাকা বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেন, মহাসচিব প্রথমে সুনামগঞ্জ জেলার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর পর্যায়ক্রমে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেন। বৈঠকে মহাসচিব সবাইকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেন। দল যাঁকে প্রার্থী দেবে, তাঁর বিজয় নিশ্চিতে সবাইকে কাজ করার নির্দেশনা দেন তিনি।
বৈঠকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনেকে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মকা- মহাসচিবের কাছে উপস্থাপন করেন। এ সময় মহাসচিব সবার বক্তব্য মন দিয়ে শোনেন। তবে দেশের বাইরে থাকায় মহাসচিবের বৈঠকে ডাক পাওয়া সত্ত্বেও সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী খন্দকার আবদুল মুক্তাদির এবং সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই ও শাল্লা) আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী নাছির উদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত থাকতে পারেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীকে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কো¤পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে। তবে তিনি বৈঠকে নিজের বক্তব্য উপস্থাপনের সময় মহাসচিবকে জানান, তিনি সিলেট-১ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী, সিলেট-৪-এ নন।
বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপির মহাসচিব বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কিছু বার্তা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জানিয়ে দেন। তিনি বলেছেন, একাধিক জরিপের মাধ্যমে দল সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থীকেই বাছাই করবে। সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য নেতাকেই দল মনোনয়ন দেবে। কেউ যদি দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করেন, তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোট কথা, সবাইকে ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বৈঠক শেষে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে তিনি বৈঠকে ডাক পেয়েছিলেন। মহাসচিব সব মনোনয়নপ্রত্যাশীকে ধানের শীষের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। যথাসময়ে দল যোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবে বলে মহাসচিব জানিয়েছেন।
সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কয়েক মাস ধরেই সিলেটের ১৯টি সংসদীয় আসনেই বিএনপির একাধিক নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাঁরা তৃণমূলে নিজেদের শক্তি জানান দিতে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এতে স্থানীয় পর্যায়ে দলের ভেতরে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব-বিভেদও তৈরি হয়েছে।
বিএনপির একটি সূত্রের বরাতে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের প্রার্থী নির্ধারণ ও যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মূলত সব মনোনয়নপ্রত্যাশীকে ডেকে কথা বলার জন্যই বৈঠকটি তিনি আহ্বান করেছেন। বৈঠক থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এ বার্তা দেওয়া হয়, দল সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে যখন একক প্রার্থী ঘোষণা দেবে, তখন সব মনোমালিন্য ভুলে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে সবাইকে কাজ করতে হবে।
সুনামগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী মাহবুবুর রহমান জানান, বিএনপির প্রার্থী হিসেবে কাউকে ঘোষণা করা হয়নি। মাননীয় মহাসচিব পরিষ্কার করে বলেছেন, আমাদেরকে মাঠে প্রচার কাজ চলমান রাখতে। সমন্বয়ে ভুল বোঝাবুঝি অবসানে তিনি বিবৃতি দিবেন। মহাসচিব হচ্ছেন আমাদের দলের মুখপাত্র, স্যারের বক্তব্যের পর আর কোন কথা থাকতে পারে না।