রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কূটনীতিকরা

আপলোড সময় : ১৮-১০-২০২৫ ০৮:০০:৪১ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১৮-১০-২০২৫ ০৮:০০:৪১ পূর্বাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক :: দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বাড়ছে উত্তাপ; কূটনৈতিক মহলেও বেড়েছে তৎপরতা। জুলাই সনদ ঘিরে রাজনৈতিক বিভেদ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়া নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছেন কূটনীতিকরা। এছাড়া কিছুসংখ্যক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ও এর প্রেক্ষিতে নতুন করে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছে আন্তর্জাতিক মহল। ঢাকায় কর্মরত কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এসব বিষয় ওঠে এসেছে। তবে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীন এখন অভিন্ন অবস্থানে পৌঁছেছে। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবেই। এটা এমন নয় যে কথার কথা বলে ফেলেছি। এটা ফেব্রুয়ারিতে হবে এবং উৎসবমুখর নির্বাচন হবে।” অন্যদিকে ওয়াশিংটন, নয়াদিল্লি ও বেইজিং থেকে আসছে একই সুর, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিলম্বিত করা যাবে না। তাদের মতে, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা জনগণের ভোটে নির্বাচিত রাজনৈতিক শক্তির হাতে যত দ্রুত সম্ভব তুলে দেওয়া উচিত। ইউরোপীয় ইউনিয়নও পাঠাচ্ছে পর্যবেক্ষক দল, নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণের জন্য। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় আশ্বস্ত হলেও দূতাবাসগুলো এখন সরকারের নির্বাচনী প্রস্তুতি, রাজনৈতিক সংলাপের অগ্রগতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কূটনীতিকরা বিভিন্ন ফোরাম ছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাটে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠকে বসে নির্বাচন নিয়ে নেতাদের ভাবনা জানার চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক দলগুলোও এখন নিয়মিত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছে। সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স) ট্র্যাসি অ্যান জ্যাকবসন বলেন, “আমরা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে এবং কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে সমর্থন করি, যারা আগামী বছরের শুরুতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথনকশা প্রণয়নে কাজ করছে। আমরা আশা করি, নির্বাচন শান্তি ও নিরাপত্তার পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে এবং একটি সফল গণতান্ত্রিক সরকারের জন্ম দেবে, যা বাংলাদেশের জনগণের আকাক্সক্ষা ও স্বপ্নের প্রতিফলন ঘটাবে।” তিনি বলেন, আমরা, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বা যুক্তরাষ্ট্র সরকার, কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না। তবে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দেখা করি তাদের কর্মসূচি ও লক্ষ্য বুঝতে। আমরা কোনো নির্দিষ্ট রাজনীতিবিদকেও সমর্থন করি না, কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য বোঝার জন্য সাক্ষাৎ করি। আমরা কোনো নির্দিষ্ট ফলাফলকেও সমর্থন করি না, এটি বাংলাদেশের জনগণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় এবং আমরা আশা করি আপনারা সে কাজে সফল হবেন। ওয়াশিংটন থেকেও একই সুর এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেন, আমরা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন রক্ষায় বাংলাদেশি জনগণের আকাক্সক্ষার পাশে আমরা আছি। গত ৯ অক্টোবর জার্মানির রাষ্ট্রদূত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে গুলশানে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা হয়। ৮ অক্টোবর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার মির্জা ফখরুলের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে সংসদ শক্তিশালী করা, আগামী নির্বাচন ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ হয়। দ্বিপাক্ষিক বিষয় ছাড়াও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গ ওঠে আসে বৈঠকে। অন্যদিকে ১৫ অক্টোবর নরওয়ের রাষ্ট্রদূত, ১৪ অক্টোবর ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ও ১২ অক্টোবর জার্মানির রাষ্ট্রদূত জামায়াতের আমির ড. শফিউর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তাঁদের বৈঠকে সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থতি, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। ভারতও নির্বাচনের বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। সূত্রের খবর, দেশটি বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তাদের প্রত্যাশা, নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সম্প্রতি বলেছেন- “বাংলাদেশে নির্বাচন বিলম্বিত না হয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই হওয়া উচিত। নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আমরা প্রস্তুত।” বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন অংশীদার চীনও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা আশা করি বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যাতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকে। অন্যদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিবিড় নজরদারিতে রেখেছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে সংস্থাটির প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচন কমিশনকে কারিগরি সহায়তা দিতেও প্রস্তুত তারা।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com