
স্টাফ রিপোর্টার ::
লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উদযাপন করা হয়েছে। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাসনরাজা মিলনায়তনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে, জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় এই দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পাল।
আলোচনা সভায় সহকারী কমিশনার দ্বিপান্বিতা দেবী’র সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন। প্রবন্ধকার লালন দর্শনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং এর মানবতাবাদী তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন।
আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. রোখসানা পারভীন চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য জাদুঘরের ডেপুটি কিউরেটর মোহাম্মদ সুবাস উদ্দিন। বক্তারা লালনের গান ও দর্শন কীভাবে সমাজকে প্রভাবিত করেছে এবং এর প্রাসঙ্গিকতা আজও কতটা অমলিন, সে বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, লালন সাঁইয়ের জীবনাচরণ ও দর্শন আমাদের সমাজের জন্য এক বিশাল অনুপ্রেরণা। তাঁর গান ও সুর মানবতাবাদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বার্তা দেয়। নতুন প্রজন্মকে লালন দর্শন সম্পর্কে অবগত করা আমাদের দায়িত্ব, তাঁর গানগুলো মানবিক সমাজ গঠনে সহায়ক হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোথায় পাবো তারে, আমার মনের মানুষ যে রে’- এই হাহাকারটা কিন্তু লালনের মধ্যেও আছে। ‘বাড়ির পাশে আরশি নগর-একদিনও দেখলাম না তারে’ - এই যে একধরণের হাহাকার তাদের গানের মধ্যে। উনারা আসলে তাদের গানের মধ্যে যে দেহতত্ত্ব, প্রেম ও অধ্যাত্মবাদের কথা তুলে ধরেছেন, তার মূল লক্ষ্যই হলো মানুষের মধ্যে সেই ‘মনের মানুষ’ বা পরমাত্মার সন্ধান করা। মানবদেহকেই তাঁরা সাধনার কেন্দ্র হিসেবে দেখেছেন, যেখানে অচিন পাখিরূপে লীলাময়ের বাস। লালনের গান মূলত এই আত্ম অনুসন্ধান, মানবতাবাদ এবং মানুষের প্রতি মানুষের নিঃস্বার্থ প্রেমেরই বার্তা দেয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মতিউর রহমান খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুনজিত কুমার চন্দ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) তাপস শীল প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় লালন সাঁইয়ের গান নিয়ে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। লালনের গান পরিবেশন করে শিল্পীরা দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন।