
দোয়ারাবাজার উপজেলার খাসিয়ামারা নদীতে রাবার ড্যাম কৃষকদের জীবনরেখা। এই ড্যামের পানিই সেচের মাধ্যমে শত শত একর জমিতে ফসল ফলায়, জীবিকা দেয় হাজারো পরিবারকে। অথচ আজ সেই রাবার ড্যামটি বেপরোয়া বালুখেকো সিন্ডিকেটের অবাধ বালু উত্তোলন ও নৌকা চলাচলের কারণে ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে। স্থানীয় কৃষকদের উদ্বেগ এখন আতঙ্কে রূপ নিয়েছে- রাবারের গায়ে যদি সামান্য ছিদ্রও হয়, তবে এক মৌসুমেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে পুরো কৃষি ব্যবস্থা।
এই বিষয়ে গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড্যামের পাশে ও গোড়ার অংশে স্থাপন করা হয়েছে ড্রেজারের পাইপ, যা নদীর তলদেশ থেকে বালু টেনে তুলছে। বালু বোঝাই স্টিলবডি ও বারকি নৌকা প্রতিদিন রাবার ড্যামের উপর দিয়ে যাতায়াত করছে। এই অনিয়মের পেছনে চলছে অর্থের বাণিজ্য - প্রতিটি নৌকা থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে প্রভাবশালী মহল। প্রশাসনের নীরবতা ও স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। এমনকি সম্প্রতি প্রতিবাদ করতে গিয়ে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাবার ড্যামের উপর দিয়ে ভারী নৌকা চলাচল রাবারের আয়ুষ্কাল কমিয়ে দিচ্ছে, ড্যামের আশপাশে ড্রেজার চালানো সরাসরি প্রকৌশলগত ঝুঁকি তৈরি করছে। একটি সামান্য ছিদ্রই পুরো সেচব্যবস্থাকে অচল করে দিতে পারে, যা কৃষক সমাজের জন্য হবে এক ভয়াবহ দুর্যোগ।
অভিযোগ এসেছে, বৈধ ইজারার সীমার বাইরে গিয়ে সিন্ডিকেট বালু তুলছে। ইজারার মেয়াদ, শর্ত ও সীমারেখা স্পষ্ট থাকা সত্ত্বেও এই অবাধ বালু উত্তোলন কেবল প্রাকৃতিক স¤পদের লুটপাট নয়, এটি রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো ধ্বংসের শামিল। এই পরিস্থিতিতে শুধু তদন্ত কমিটি গঠন করলেই চলবে না; প্রয়োজন মাঠপর্যায়ে দ্রুত অভিযান, ড্রেজার জব্দ, বালু পরিবহন বন্ধ ও দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
রাবার ড্যাম রক্ষা করা মানে কেবল একটি প্রকল্প নয়, এটি কৃষকের জীবন, খাদ্যনিরাপত্তা ও জাতীয় স¤পদ রক্ষা করা। প্রশাসনের দায়িত্ব এখন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকা বালুখেকোদের দমন করা এবং ইজারা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা।
সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চল আজ প্রকৃত অর্থে বালু সিন্ডিকেটের কবলে। নদী ও কৃষি - দুটোই বিপন্ন। তাই এখনই সময়, কথার নয়, কার্যকর উদ্যোগের। রাবার ড্যাম রক্ষা করতে না পারলে আগামী অগ্রহায়ণেই মাঠে দেখা দেবে বন্ধ্যা বাস্তবতা, যেখানে থাকবে না ধান, থাকবে শুধু হতাশ কৃষকের চোখের জল।