
স্টাফ রিপোর্টার ::
সিলেট বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় এবারের পাসের হার ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা গত ১৯ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থী।
সিলেট বোর্ড প্রতিষ্ঠার পর ২০০৬ সাল থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ক্রমেই বেড়েছে। ওই বছর পাসের হার ছিল ৬৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এবারই প্রথম সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৬০ শতাংশের নিচে নেমেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত ফলাফল তুলে ধরেন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ফলাফলে সব সূচকে এগিয়ে আছেন ছাত্রীরা।
শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এবার সিলেট বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৬৯ হাজার ৯৪৪ জন। যেখানে ৬৯ হাজার ১৭২ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ৩৫ হাজার ৮৭১ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৬০২ জন। এই ফল অনুযায়ী, সিলেট বিভাগে পাসের হার ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। যা বিগত ১৯ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
জানাযায়, সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি পাসের হার সিলেট জেলায় এবং সবচেয়ে কম মৌলভীবাজার জেলায়। সিলেটে পাসের হার ৬০ দশমিক ৬১ শতাংশ, হবিগঞ্জে ৪৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ, সুনামগঞ্জে ৪৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং মৌলভীবাজারে ৪৫ দশমিক ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন।
এদিকে জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও এগিয়ে সিলেট জেলা। এবার জেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ২০৮ জন। এরপরই আছে মৌলভীবাজার জেলা। সেখানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৯৯ জন। এরপর যথাক্রমে হবিগঞ্জ জেলায় ১৩৫টি এবং সুনামগঞ্জ জেলায় ৬০টি জিপিএ-৫ এসেছে।
ভালো ফলাফলে বিগত কয়েক বছরের ধারা ধরে রেখে এবারও ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে মেয়েরা। এ বছর মেয়েদের পাসের হার ৫৩ দশমিক ১৩ এবং ছেলেদের পাশের হার ৪৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দৌড়েও মেয়েরা এগিয়ে। ৯২১ জন মেয়ে এবং ৬৮১ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী পাসের হার সবচেয়ে কম মানবিক বিভাগে। এই বিভাগে পাস করেছেন ৪৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ পরীক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৫০ দশমিক ১৮ শতাংশ।
১৬০২ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্তের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে পেয়েছেন ১ হাজার ৩৭৯ জন, মানবিক বিভাগে ১৫৩ জন আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। আর গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৬ হাজার ৬৯৮ জন। সিলেটে এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় ধস নেমেছে।
সিলেট বোর্ডের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ৬৯ হাজার ১৭২ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৩৫ হাজার ৮৭১ জন; জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৬০২ জন। ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত করোনা মহামারি, বন্যা পরিস্থিতি এবং ছাত্র আন্দোলনের কারণে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা হয়নি। এবার পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা ও ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য বেশি হওয়ায় প্রভাব পড়েছে ফলাফলে। এছাড়া কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত না হওয়াও পাসের হার কম হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ।
চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যরকম ভাবনা চলে এসেছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগের মতো হৃদ্যতাপূর্ণ স¤পর্ক দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সময় লক্ষ্য করা গেছে - শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কাছে টেনে নেওয়ার তুলনায় দূরত্ব বেড়েছে। এখন আর শিক্ষকদের শাসন করতে দেখা যায় না। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব লক্ষ্য করা গেছে। পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে গুণগত শিক্ষকের অভাব বিষয়গুলো ফলাফলে প্রভাব পড়ছে।
আনোয়ার হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, সিলেট বোর্ডের পাসের হার বৃদ্ধি করতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বোর্ডের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগভিত্তিক যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।