
স্টাফ রিপোর্টার ::
উৎসব করে তাহিরপুরের সীমান্ত নদী যাদুকাটার তীর কেটে বালু লুটের পর সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিকার চাইলেন মহালের ইজারাদাররা। বালু লুটের সময় তারা ‘টু’ শব্দ না করলেও এবার প্রশাসনিক ও পরিবেশবাদীদের চাপে সংবাদ সম্মেলন করে বালু লুটের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অথচ তীর কাটা লুটের বালু থেকে ফুট প্রতি ২৫ টাকা রয়্যালিটি আদায় করেছেন ইজারাদাররা। অভিযোগ উঠেছে গত এক সপ্তাহে অন্তত ৫০ কোটি টাকার বালু লুট করেছে একাধিক চক্র। যা থেকে মোটা অংকের রয়্যালিটিও নিয়েছেন ইজারাদাররা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে যাদুকাটা নদীর ইজারাদার নাসির মিয়া সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন বাসস্টেশনের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন সাংবাদিক প্রশ্ন তুলেন বালু লুটের পর কেন সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। এতে সদুত্তর দিতে পারেননি ইজারাদার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, যাদুকাটা নদীর ইজারা এলাকার বাইরে স্থানীয় সিন্ডিকেট নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলন করছে। ইজারাদারের লোকজনও ইজারা এলাকার বাইরে থেকে বালু উত্তোলন করছে। তবে সম্প্রতি নদীর তীর কাটা হচ্ছে ‘উৎসব’ করে। লুট করা হচ্ছে বালু। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে যাদুকাটা নদী তীরের অন্তত ২১টি গ্রাম। এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ফাজিলপুরে যাদুকাটা নদীর ইজারাদারের লোকজন টংঘর করে টোল-ট্যাক্স আদায় করে। বৈধভাবে বালু উত্তোলন ও অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু একমাত্র পথ ফাজিলপুর দিয়েই দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌকাযোগে সরবরাহ করা হয়। তখন অবৈধভাবে তীর কেটে উত্তোলিত বালু থেকেও রয়্যালিটি আদায় করেন ইজারাদারের লোকজন। এ কারণে তারা তীর কেটে বালু লুটের ঘটনাটি চেপে যান বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
শ্রমিক আন্দোলনের নেতা সাইফুল আলম সদরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বালু-পাথর লুট শুরু হয়। যাদুকাটা নদী পরিবেশ আন্দোলন বেলা’র মামলায় ইজারা বন্ধ থাকলেও গত মাস থেকে ইজারাদার আহরণে এসেছেন। এখন তীর কেটে বালু উত্তোলন করছে নানা চক্র। ইজারাদাররা আবার লুটের বালুর রয়্যালিটিও আদায় করছেন। তারা আন্তরিক হলে লুটের সব বালু জব্দ করার সহজ সুযোগ আছে। কারণ তাদের টোল-ট্যাক্সের পথ দিয়েই লুটের বালু বের হচ্ছে।
যাদুকাটা-১ নদীর ইজারাদার নাসির মিয়া বলেন, আমরা নদীর তীর কাটার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সোচ্চার। প্রশাসনকে দিয়েও অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু নদী তীরবর্তী জায়গার মালিকরা বালু উত্তোলন করছেন। আমাদের বাধা তারা মানছেন না। আমার নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলন বন্ধ এবং সেখানে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান মানিক বলেন, যাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালু লুটের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় জড়িত একাধিকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলাও দায়ের করা হয়েছে। প্রশাসন নদী রক্ষায় তৎপর রয়েছে।
উল্লেখ্য চলতি অর্থ বছরে প্রায় ১০৭ কোটি টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে যাদুকাটা-১ ও ২ বালু মহাল। বেলা’র মামলার কারণে ইজারাদার প্রথম থেকে আহরণ করতে না পারলেও মামলাটি উচ্চ আদালতে সরকারের পক্ষে যাওয়ায় আবার তারা আহরণ শুরু করেছে। তবে নদীটি ইজারার বিপক্ষে বেলা ও পরিবেশবাদী আন্দোলন নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে।