যাদুকাটার বালু লুট বন্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

আপলোড সময় : ১৭-১০-২০২৫ ১২:৩৬:০৪ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১৭-১০-২০২৫ ১২:৩৬:০৪ পূর্বাহ্ন
তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলন এখন আর শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক কর্মকা- নয় - এটি রূপ নিয়েছে একটি অসংগঠিত, সহিংস, এবং পরিবেশবিধ্বংসী ‘মব ব্যবসা’-তে। বিজিবি’র সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন-“এভাবে চলতে থাকলে ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে” তা শুধু একটি সতর্কবার্তা নয়, এটি এক ভয়াবহ বাস্তবতার ইঙ্গিত। সাম্প্রতিক সময়ে যাদুকাটা নদীর ইজারাবহির্ভূত এলাকা থেকে হাজারো নৌকা ও শ্রমিক একত্র হয়ে যেভাবে বালু লুট করছে, তা আইন, প্রশাসন ও পরিবেশ - তিনকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। রাতের অন্ধকারে সংঘটিত এই ‘মব’ শুধু নদীর তলদেশ নয়, ভেঙে দিচ্ছে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও আইনের ভিত্তিও। বিজিবির ভাষায়, ‘১৫-২০ হাজার শ্রমিক একসঙ্গে বালু উত্তোলনে নামে’, যা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয় - এটি একটি সাংগঠনিক ও প্রভাবশালী চক্রের নিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক অপরাধ। যাদুকাটা নদী শুধু তাহিরপুরের নয়, এটি সুনামগঞ্জের প্রাণ। এই নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে পড়ছে লাউড়েরগড়ের পর্যটন অঞ্চল, সীমান্ত বিওপি এবং অন্তত ২০টি গ্রাম। প্রতিনিয়ত নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন বাড়ছে, যা অচিরেই ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। আর যদি বিজিবিকে অবৈধ বালু উত্তোলন রোধে সার্বক্ষণিক ব্যস্তথাকতে হয়, তবে সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাস্তবেই তৈরি হবে। এখানে প্রশ্ন জাগে- এত বড় অপতৎপরতা কি কেবল কয়েকজন শ্রমিকের হাতে ঘটছে? নিশ্চয়ই না। নদীর বুক চিরে, ইজারাবহির্ভূত এলাকা থেকে কোটি টাকার বালু তুলতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালী, ইজারাদারদের একটি অংশ, এমনকি কিছু দফতরের নীরবতা বা প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া তা সম্ভব নয়। বিজিবির পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত ব্যবস্থা যেমন স্থায়ী পোস্ট স্থাপন, টাস্কফোর্স অভিযান, ইজারার সীমা স্পষ্টকরণ ও নৌ-পুলিশের টহল - অত্যন্ত যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব কত দ্রুত এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করবে? বালু হচ্ছে নির্মাণশিল্পের কাঁচামাল, কিন্তু এই প্রাকৃতিক সম্পদ অনিয়ন্ত্রিতভাবে আহরণ করা মানে নিজের ঘরের মাটি খুঁড়ে ভবিষ্যৎ ডুবিয়ে দেওয়া। যাদুকাটার পাড়ে এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে, খুব শিগগিরই সেই নদী শুধু ভাঙবে না, পুরো অঞ্চলকেই গিলে ফেলবে। আমরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই- অবিলম্বে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে টাস্কফোর্স অভিযান শুরু করা হোক। পাশাপাশি ইজারা বহির্ভূত এলাকায় বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। এছাড়া নদীভাঙন রোধে জরুরি জিওব্যাগ ও পাইলিং প্রকল্প হাতে নেওয়া হোক। একই সাথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ- প্রভাবশালী চক্রের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় ভেঙে দিতে হবে।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com