শহীদ মিনার ভাঙা : ইতিহাস ও চেতনার প্রতি নির্মম অবজ্ঞা

আপলোড সময় : ১৬-১০-২০২৫ ০৮:০৭:০৩ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১৬-১০-২০২৫ ০৮:০৭:০৩ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ঐতিহাসিক শহীদ মিনার ভেঙে সেখানে ‘প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী ফলক’ নির্মাণের ঘটনা আমাদের সমাজের সাংস্কৃতিক চেতনা ও ইতিহাসবোধের ভয়াবহ অবক্ষয়কে নগ্নভাবে উন্মোচিত করেছে। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় স্মৃতি বহনকারী এই শহীদ মিনারটি শুধু ইট-পাথরের নির্মাণ ছিল না - এটি ছিল একাত্তরের রক্তস্নাত সংগ্রাম ও বাঙালির আত্মপরিচয়ের প্রতীক। অথচ সেই ঐতিহাসিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার সাহস দেখিয়েছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যার দায়িত্ব ছিল নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস ও মূল্যবোধ শেখানো। ষাটের দশকে নির্মিত এই শহীদ মিনারটি সুনামগঞ্জের মানুষের গৌরবের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে ছিল দীর্ঘদিন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালে একে ভেঙে ফেললেও মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে কলেজের ছাত্রসমাজ ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা একে পুনঃর্নির্মাণ করেন। এই মিনার তাই একযোগে ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির ধারক। এর ভাঙচুর কোনো সাধারণ নির্মাণ কাজ নয় - এটি আমাদের জাতিস্মৃতি ও মুক্তির ইতিহাসের ওপর হাতুড়ির আঘাত। অবাক করা বিষয় হলো, কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে তারা “জানতেন না” এটি ঐতিহাসিক শহীদ মিনার। এমন বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীনতার সীমা ছাড়িয়ে নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞানতার পরিচয় দেয়। একটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষক পরিষদ যদি নিজেদের প্রতিষ্ঠানেই নির্মিত শহীদ মিনারের ইতিহাস সম্পর্কে না জানেন, তবে সেই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার আলোক কেমনভাবে জ্বলবে? শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা শুরুতেই বিকল্প স্থান প্রস্তাব করেছিলেন, কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের একাংশের অদূরদর্শী জেদের কারণে অবশেষে ভাঙন ঘটে ইতিহাসের। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জে যে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে তা অযৌক্তিক নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় বইছে, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন, ছাত্র সংগঠনগুলো লিখিত স্মারকলিপি দিয়েছে। কারণ শহীদ মিনার কেবল একটি স্থাপনা নয়; এটি আমাদের আত্মপরিচয়ের কেন্দ্রবিন্দু। একে ভাঙা মানে আমাদের আত্মপরিচয়কে ধ্বংস করা। আজ সময় এসেছে প্রশাসন ও শিক্ষাব্যবস্থার দায়িত্বশীলরা বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করার। অবিলম্বে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ঐতিহাসিক শহীদ মিনারটি তার পূর্বের স্থানে ও আকৃতিতে পুনঃনির্মাণ করতে হবে। একই সঙ্গে, যারা দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে ইতিহাসের এই অপমান ঘটিয়েছে, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী ফলক নির্মাণে কেউ আপত্তি করছে না - কিন্তু তা ইতিহাস ধ্বংস করে নয়, বরং ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অন্য স্থানে হোক। শহীদ মিনার বাঙালির আত্মার প্রতীক, স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি। এই প্রতীকের অবমাননা মানে জাতির আত্মাকে আহত করা। আমরা আশা করি, সুনামগঞ্জবাসীর ঐক্যবদ্ধ দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত এই ভুল সংশোধন করবে। কারণ, ইতিহাসের ওপর আঘাত কোনো সময়েই ক্ষমাযোগ্য নয়।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com