বিজিবি’র সংবাদ সম্মেলন

যাদুকাটায় ‘মব সৃষ্টি করে’ বালু লুট, বন্ধ না হলে নদী ভাঙন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে

আপলোড সময় : ১৬-১০-২০২৫ ০৭:৪০:৩৫ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১৬-১০-২০২৫ ০৭:৪০:৩৫ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :: তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীতে ‘মব সৃষ্টি করে’ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজিবি’র সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির। বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে জাকারিয়া কাদির বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যাদুকাটা নদীতে ইজারাবহির্ভূত এলাকা থেকে কিছু কুচক্রী মহল এবং অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলন করছেন। এতে ব্যাপকভাবে নদীর পাড় ভাঙনের ফলে তীরের দিকে লাউড়েরগড় এলাকায় বিজিবির বিওপিসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দারা ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা আছে। বিজিবির এই কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে যাদুকাটা নদে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে। মূল সমস্যা হচ্ছে, ইজারার সীমানা নির্ধারণের পর কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও কুচক্রী মহল দখল করা খাসজমি থেকে বালু উত্তোলনের পরিকল্পনা নেয়। পরে দেড় থেকে দুই হাজার নৌকা নিয়ে ১৫-২০ হাজার শ্রমিক একসঙ্গে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন। বিশেষ করে গভীর রাতে ইজারাবহির্ভূত এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজিবি এককভাবে প্রাণপণ চেষ্টা করছে যেন অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা যায়। বালু লুট বন্ধে পুলিশ, জেলা প্রশাসনসহ সবার যৌথ প্রচেষ্টা দরকার। তিনি বলেন, লাউড়েরগড় একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এলাকা। সেখানে ৫-৬টি চোরাচালানের রুট রয়েছে। যা আমরা নিয়মিতভাবে সুরক্ষা নিশ্চিত করে যাচ্ছি। সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র, মাদক যেন না আসে এবং সীমান্ত হত্যা যেন না হয় সেটা বিজিবি’র মূল কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে বিজিবি দিনে ও রাতে সার্বক্ষণিক ব্যস্ত থাকলে সীমান্ত অরক্ষিত হয়ে পড়বে। ফলশ্রুতিতে অস্ত্র, মাদক চোরাচালানসহ সীমান্ত হত্যা বেড়ে যেতে পারে। এই প্রেক্ষিতে বিজিবি’র পক্ষ হতে জেলা প্রশাসনকে লিখিত ও মৌখিকভবে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে এবং সেখানে কিছু প্রস্তাবনা আমরা দিয়েছি। কেননা এটা বিজিবি’র একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। প্রস্তাবনাসমূহ হচ্ছে, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে একটি স্থায়ী পোস্ট স্থাপন, নিয়মিতভাবে টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করা, মজবুত খুঁটি ও পতাকার মাধ্যমে ইজারাকৃত এলাকাটি স্পষ্ট করা এবং নৌ-পুলিশের সার্বক্ষণিক টহল তৎপরতা বজায় রাখা। এছাড়াও, অনিয়মসমূহের সাথে ইজারাদারের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে ইজারা বাতিল করার পরামর্শ দেন তিনি। উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীর দুপাড় কেটে কোটি কোটি টাকার বালু লুট করেছে একটি চক্র। এতে ভাঙন হুমকিতে পড়েছে পর্যটন স্পটসহ ২০টি গ্রাম। বিজিবি জানায়, জেলা প্রশাসনের সহায়তায় নিয়মিত টাস্কফোর্সের অভিযান চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি লাউড়েরগড় বিওপিতে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য ও নৌযান মোতায়েন করা হয়েছে। তবে সেটি অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের নৌকা ও শ্রমিকের তুলনায় অনেক কম। ব্যাপারটি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই সঠিক সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের সবচেয়ে বড় দুটি বালুমহাল তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদী অবস্থিত। মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় গত পাঁচ মাস এ দুটি মহালে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকার পর চলতি মাস থেকে আবার বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে। কিন্তু শুরুতেই নদীর সীমান্তবর্তী লাউড়েরগড় এলাকায় ইজারা সীমানার বাইরে গিয়ে একটি পক্ষ জোর করে বালু উত্তোলন করে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলনের ফলে আশপাশের গ্রামসহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। এই দুটি বালুমহাল এবার জেলা প্রশাসন থেকে প্রায় ১০৭ কোটি টাকায় ইজারা দেয়। কিন্তু মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় ইজারাদারদের মহাল বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। চলতি মাসে প্রশাসন ইজারাদারদের মহাল দুটি বুঝিয়ে দিলে সেখানে আবার বালু উত্তোলন শুরু হয়।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com