
মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী ::
দোয়ারাবাজার উপজেলার ঐতিহাসিক পান্ডারখাল বাঁধ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে বাঁধের দুই পাশে অবৈধভাবে ইট, বালু ও পাথরের ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। সম্প্রতি তারা বাঁধের গাছপালা কেটে নেওয়ায় একদিকে যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিলুপ্ত হচ্ছে, অন্যদিকে বাঁধটির কাঠামোগত স্থায়িত্বও মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে - এমন অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়দের কাছ থেকে।
১৯৭৪ সালে কৃষি ফসল রক্ষার উদ্দেশ্যে নির্মিত এই বাঁধের উপর দিয়েই চলে গেছে ছাতক-সুনামগঞ্জ সড়ক। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই পথে যাতায়াত করেন। অথচ বর্তমানে বাঁধের দুই পাশে গড়ে উঠেছে বালু-পাথরের ডিপো, কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ, হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ আচ্ছাদন।
স্থানীয়দের অভিযোগ- বাঁধের মাটি সরে যাচ্ছে, ফলে বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। সরকারি অর্থায়নে নির্মিত বসার ছাউনি ও বিশ্রামস্থানও এখন বিলীন। গাছের গোড়ায় বালু-পাথর ফেলার কারণে বহু গাছ ইতোমধ্যে মরে গেছে।
পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন, এভাবে চলতে থাকলে বাঁধের টেকসই কাঠামো নষ্ট হয়ে পুরো এলাকা জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে পারে।
বাজিতপুর গ্রামের বাসিন্দা কামাল উদ্দীন বলেন, আগাম বন্যা থেকে ফসল রক্ষার জন্যই তৈরি হয়েছিল এই বাঁধ। এখন স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলদারিত্বে সেটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ দরকার।
ইদনপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য জানান, প্রতিদিন অসংখ্য ট্রলি বাঁধের উপর দিয়ে চলাচল করে, ফলে মাটি সরে যাচ্ছে, গাছ মরে যাচ্ছে, পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি বাঁধ থেকে গাছ কেটে নেওয়ায় পুরো এলাকা হুমকির মুখে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দোহালিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জিয়াউল ইসলাম এই অবৈধ ব্যবসার মূল নেপথ্য কারিগর। বাঁধের উপর প্রকাশ্যে ইট-বালু-পাথর ব্যবসা চললেও প্রশাসনের তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই বলেই তাদের দাবি।
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য জিয়াউল মিয়া বলেন, প্রশাসন বালু-পাথর রাখতে নিষেধ করেছেন। পুরোনো মাল বিক্রি শেষ হলে আর রাখবো না।
দোয়ারাবাজার উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ফরেস্ট কর্মকর্তা আয়ুব খান জানান, পান্ডারখাল বাঁধ থেকে গাছ কেটে ফেলার খবর পেয়ে আমরা একটি গাছ জব্দ করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরূপ রতন সিংহ বলেন, অবৈধ ব্যবসায়ীদের বালু না রাখার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এমন কর্মকা- আর না ঘটে, সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাঁধের স্বাভাবিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে পান্ডারখাল বাঁধকে রক্ষা করা হোক, যেন এই প্রাকৃতিক লীলাভূমি আবারও ফিরে পায় তার পুরনো সৌন্দর্য।