
দোয়ারাবাজার সীমান্তে ভারতীয় গরু-মহিষের অবৈধ বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকা সত্ত্বেও চোরাকারবারিরা বেপরোয়া। সীমান্ত পেরিয়ে আসা পশু বাজারে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই “বৈধ রশিদ”-এর জাদুতে রূপ নেয় দেশীয় গরুতে! এ যেন বৈধতার আবরণে অবৈধতার বাণিজ্য।
এই চোরাচালানচক্র কেবল পশু পাচারেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি সংগঠিত সিন্ডিকেটে রূপ নিয়েছে - যাদের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, বাজার ইজারাদার, এমনকি কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তাদের স্বার্থের বলি হচ্ছে রাষ্ট্রের রাজস্ব, স্থানীয় খামারি এবং আইনের শাসন।
উদ্বেগজনক বিষয় হলো- চোরাচালান সহজ করতে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক এগ্রোফার্ম গড়ে তোলা হয়েছে, যেগুলোর অনেকই নিবন্ধনবিহীন। রাতে সীমান্ত পেরিয়ে আসা গরু-মহিষ এসব ফার্মে আশ্রয় নেয়, পরে বাজারে বিক্রির সময় ইজারার রশিদে ‘বৈধতা’ পায়। এই প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব, অথচ পাচারকারীদের ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে উঠছে।
বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সীমান্ত হাটের মূল লক্ষ্য ছিল বৈধ বাণিজ্যের প্রসার ও সীমান্তবাসীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন। কিন্তু সেই হাটের পথই এখন হয়ে উঠেছে অবৈধ পণ্য ও পশু চোরাচালানের রুট! এ অবস্থা চলতে থাকলে সীমান্ত নিরাপত্তা ও পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক উভয়ই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রশ্ন হলো- এই সিন্ডিকেটের ক্ষমতা এতো প্রবল কেন? উত্তর হয়তো সহজ- যেখানে অর্থ, প্রভাব আর রাজনৈতিক ছত্রছায়া জড়িয়ে থাকে, সেখানে আইনের প্রয়োগ দুর্বল হয়ে পড়ে। এখন সময় এসেছে সেই দুর্বলতা ভাঙার। বিজিবি, প্রশাসন, প্রাণিস¤পদ অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার - সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রতিটি ফার্মের নিবন্ধন যাচাই, সীমান্তে প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি, এবং হাটে পশু বিক্রির ক্ষেত্রে ডিজিটাল রশিদ প্রবর্তন এখন সময়ের দাবি।
চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে না পারলে এই দোয়ারাবাজার সীমান্ত একদিন পুরো জেলার জন্য নিরাপত্তাজনিত হুমকিতে পরিণত হবে। রাষ্ট্রের আইন, রাজস্ব এবং নৈতিকতা - সবই রক্ষা পাবে কেবল তখনই, যখন সীমান্তের এই অন্ধকার বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সত্যিকার অর্থে আলোর শিখা জ্বালানো হবে।